ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত এসডিজি অর্জনে তৃণমূলের প্রস্তাব ও পরামর্শ নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

দ্রুত এসডিজি অর্জনে তৃণমূলের প্রস্তাব ও পরামর্শ নেয়া হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) অর্জনে বাংলাদেশ এই প্রথম মাঠ পর্যায়ের সকল শ্রেণীপেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করেছে। স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যা ও তা সমাধানে তৃণমূল মানুষের সুচিন্তিত পরামর্শ ও মতামত মাঠ পর্যায় থেকে ওপরের দিকে যাবে। তারপর সরকার সেগুলো বিশ্লেষণ করে যত দ্রুত এসডিজি অর্জন করা যায় সেই পদক্ষেপ নেবে। যে সকল মন্ত্রণালয় এই অর্জনের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে তারা ওপর মহলে গৃহীত হওয়া মাঠ পর্যায়ের মানুষের পরামর্শ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় গিয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে স্থানীয় সমস্যা জেনে সমাধানের প্রস্তাব গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব প্রস্তাব ও পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো দ্রুত ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সরকারের ওপর মহল ও বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হানা ইসলাম বলেন, আশা করা হয়েছে সম্প্রতি শেষ হওয়া মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলে (এমডিজি) বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগে যেভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছিল এসডিজি অর্জনেও নির্ধারিত সময়ের আগে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শতভাগ সাফল্য আসবে। সেই পরিকল্পনা নিয়েই সরকার সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার পর একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে বিশ্বের সকল দেশে এসডিজি অর্জনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। যে অভীষ্ট অর্জনে ১৫ বছর সময় বেঁধে দেয়া হয়। অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে এই অভীষ্ট অর্জন করতে হবে। এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১৭ সেগমেন্ট। প্রথমেই আছে বিশ্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকবে না (নো নো পোভার্টি, জিরো হাঙ্গার)। এর পর রয়েছে, সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ, সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, জেন্ডার সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন, সকলের জন্য সাশ্রয়ী নির্ভরযোগ্য টেকসই আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসূযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন, অভিঘাত সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনার প্রসার, নিরাপদ ও অভিঘাত সহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা, টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিতকরণ, স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদান, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, মরুকরণ মোকাবিলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ, ভূমি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, এমডিজি ছিল জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর বিষয়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এসডিজি হলো : আগের অর্জনগুলো ধরে রেখে প্রতিটি অর্জনের টেকসই মানোন্নয়ন। যা হবে বিশ্বের মানুষের সার্বজনীন কল্যাণ। এসডিজিতে এমন তিনটি সেগমেন্ট আছে বিশেষ করে জলবায়ুবিষয়ক যা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এই অর্জনে বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসলে সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে। এসডিজিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বগুড়ায় এক অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান বলেন, এসডিজি অর্জনে ইংরেজি বর্ণমালার পাঁচটি পি (ফাইভ পি) প্রাধান্য পেয়েছে। যার অর্থ হলো, পার্টনারশিপ, পিস, প্রোসপারিটি, প্লানেট, পিপল। মূলকথা হলো : উন্নয়নে বিশ্বের কোন মানুষ বাদ যাবে না। তিনি জানান, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে দ্রুত ধাবিত। ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন ও রূপকল্প ২১ বাস্তবায়নের পর ৪১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের শততম বছর উদযাপনের পর পরবর্তী শতকে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এক বঙ্গীয় ব-দ্বীপে পরিণত হবে। একটি সূত্র জানায় এসডিজি ঘোষিত হওয়ার পর কোন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হবে এ নিয়ে অনেকটা সময় কেটে গেছে। এখন হাতে আছে মাত্র ১৩ বছর। আপাতদৃষ্টিতে একে অনেক সময় মনে হতে পারে। বাস্তবে সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। এসডিজি অর্জনে যাতে কোন অবস্থাতেই দেশের কোন অঞ্চল উন্নয়নে বাদ না যায় সেই বিষয়ে লক্ষ রাখা হয়েছে। আগে কোন এলাকার উন্নয়নের বরাদ্দ ওপর থেকে নিচে আসতো। এতে স্থানীয় উন্নয়নে অনেক সময় ভাটা পড়তো। এই অবস্থার অবসানে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সেই এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান ও প্রস্তাবনা চাওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায় এ ধরনের বৈঠক করে স্থানীয় পর্যায়ে স্পেসিফিক ডেভেলপমেন্টের বিষয়গুলো স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। যে সমস্যা সমাধানে এখন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আরেকটি সূত্র জানায়, এসডিজি অর্জনে স্থানীয়ভাবে উন্নয়নে আগামী বছরের বাজেটে আলাদাভাবে বিভাগভিত্তিক বাজেট দেয়া যায় কিনা এই বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ভাবছে। উল্লেখ্য, এক বছর আগে স্থানীয়ভিত্তিক বাজেট দেয়া যায় কিনা তার একটি পাইলটিং (পরীক্ষামূলক) বাজেট হয়। এসডিজি অর্জনে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা, উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং দক্ষতা উন্নয়নেও গুরুত্ব দেয়া হবে।
×