ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মেয়র প্রার্থী নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগ,প্রচারে নতুন মাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

তিন মেয়র প্রার্থী নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগ,প্রচারে নতুন মাত্রা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১৫ ডিসেম্বর ॥ আর মাত্র চারদিন পরই রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ততা বাড়ছে প্রার্থীদের। থেমে নেই কর্মী-সমর্থকরাও। এরই মধ্যে ভোটের মাঠে তিনটি বড় দলের কেন্দ্র্রীয় নেতারাও নেমে পড়েছেন। দলীয় প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। নিজ দলের প্রতীকে ভোট চাইছেন হাইপ্রোফাইল নেতারা। তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন গণসংযোগে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারে। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২১ ডিসেম্বর। প্রার্থীদের প্রচারে সময়সীমা ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় প্রচারে যেমন গতি পেয়েছে, তেমনি এর জের ধরে তারা বাকযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পরস্পরের নামে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলেছেন। প্রার্থীরা ছাড়াও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে কথা বলছেন কেন্দ্র থেকে আসা নেতারা। গণসংযোগের সময় মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অভিযোগ করেন, তার ও তার দলের প্রধান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। মোস্তফা বলেন, জাতীয় পার্টি ছাড়া আওয়ামী লীগ কোনও অবস্থাতেই ক্ষমতায় যেতে পারত না এবং আগামীতেও পারবে না। তাই আমার ও আমার দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলার আগে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে এখানে আজেবাজে কথা বলছেন। যা শোভনীয় নয়। গত পাঁচ বছর ঝন্টু রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে রংপুরের উন্নয়নের জন্য কী কী করেছেন তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি আমার এবং আমার দলের সমালোচনা করে বেড়াচ্ছেন। মোস্তফা বলেন, পরাজয় বুঝতে পেরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান তিনি সেটা চাইছেন না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রংপুরে অবস্থান করছেন। গত বুধবার থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে নামেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। শুক্রবার সকাল থেকে তারা নগরী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ আফজাল হোসাইন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ নেতারা নৌকার প্রতীকে ভোট চাইতে ছুটছেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার সঙ্গে মাঠে নেমেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম, শামসুজ্জামান, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, মোজাফফর হোসেন, শহীদুল ইসলাম মিজুসহ অন্যান্য নেতারা। শুক্রবারও তারা দিনভর প্রচারে অংশ নেন। এর আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মাঠ চষে বেড়িয়ে এখন পর্যন্ত মেয়র হিসেবে বিজয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার পক্ষে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই সভা-সমাবেশে ভোটে চেয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী পথসভায় চোখে পড়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। এখন পর্যন্ত মোস্তফার পক্ষে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সদস্য হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মুন্সি আব্দুল বারীসহ জাতীয় পার্টির, জেলা, মহানগর এবং ছাত্র সমাজ ও যুবসংহতির নেতারা। এদিকে মেয়র পদে ত্রি-মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাদের দলের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সেমিফাইনাল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। শুক্রবার নগরীর সেনপাড়ার একটি পথসভায় তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য এসিড টেস্ট। কারণ, আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বও তারাই পালন করবে। এখন পর্যন্ত এখানে সবার জন্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। ফলে সব রাজনৈতিক দলের উচিত কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সহায়তা করা।’ এ সময় রংপুরের উন্নয়ন কাজ শেষ করার জন্য সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে আবারও নির্বাচিত করার আহ্বান জানান তিনি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ঝন্টুকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না। তাদের মতে বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার লড়াই হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, ২০ দলীয় জোটের ভোট এবং অবাঙালীদের ভোট পুরোটাই পাবে ধানের শীষ। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও মরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। এই ক্ষোভটা ধানের শীষের পক্ষে যাবে। এভাবে ধানের শীষ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। নির্বাচনে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে প্রার্থীর পথসভায় চেয়ার টেবিল উল্টে দেয়ার অভিযোগ করেন। টুকু আরও বলেন, মাঠ মনিটরিং করে আমরা বুঝতে পেরেছি এই নির্বাচন ত্রি-মুখী লড়াই হবে না। লাঙ্গল ও ধানের শীষের মধ্যেই মূল লড়াইটা হবে। জামায়াতের নীরব ভোটগুলো ধানের শীষের পক্ষেই যাবে। আমরা নির্বাচনের শেষ দেখতে চাই। এ সময় তিনি জানান, আগামী ১৮ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর রংপুরে আসার কথা। সেদিন আমাদের সভা করার কথা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। এদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার রংপুর ত্যাগের দাবিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। প্রতিমন্ত্রী রংপুর ত্যাগ না করা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। অবরোধ চলাকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তারপরও স্থানীয় সরকার, পল্লী ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা গত কয়েকদিন ধরে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে আচারণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এই মন্ত্রী ২ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর ত্যাগ না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। পরে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান অবরোধকারীদের নিশ্চিত করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। এ খবর শোনার পর তারা অবরোধ তুলে নেয়। অবরোধ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বেতপট্টি দলীয় কার্যালয়ে শেষ হয়। সেখানেও এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ১১টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ৬৫ জন এবং ৩৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
×