ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তানিয়া হক ভূইয়া

প্রিন্সেস অব ওয়েলসের শেষ কথা...

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রিন্সেস অব ওয়েলসের শেষ কথা...

প্যারিসে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া প্রিন্সেস ডায়নার গাড়িটি যখন দুমড়ে মুচড়ে যায় তখন এক অগ্নিনির্বাপক কর্মী সেখানে উপস্থিত হন। তিনি শেষ কথা শুনেছিলেন। তিনি কিভাবে প্রিন্সেস ডায়নার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন তার বর্ণনা দেন। হোভিয়ার গুরমেলন নামের ৫০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বলেন, গাড়িটি দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার পরও ডায়না বেঁচে ছিলেন। তার চোখ খোলা ছিল। তাকে মার্সিডিজটির ভেতর থেকে টেনে বের করা হয়েছিল। তিনি শুধু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে খুবই সাবধানে স্ট্রেচারে তোলা হয়। হৃদযন্ত্র সক্রিয় করতে তাকে শ্বাস নেয়ানোর চেষ্টা করা হলে তিনি শ্বাস নিতে শুরু করেন। তখন ধারণা করা হয়, তিনি হয়ত বেঁচে যাবেন। পরে আমরা হতাশ হই ৩৬ বছর বয়সী রাজকুমারীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তিনি স্থানীয় সময় ভোর চারটায় মারা যান। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। গুরমেলন বলেন, ‘প্রথমে আমি ধারণা করতে পারিনি যে যিনি দুর্ঘটনায় পড়েছেন তিনি প্রিন্সেস ডায়না। গাড়িটি দ্য পন্ট ডি লা’আলমা টানেলের ভেতরে মালার ফায়ার স্টেশনের কাছাকাছি ছিল। যার খুব কাছেই আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমরা দেখলাম একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। সেখানে পৌঁছাতে আমাদের তিন মিনিটেরও কম সময় লেগেছে। আমরা দশজন দুটো দলে ভাগ হয়ে সেখানে পৌঁছাই। প্রথমে আমরা পৌঁছাই। গাড়িটি দোমড়ানো অবস্থায় ছিল। আমরা একে অন্য সব সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া গাড়ির মতো মনে করি। আমরা সোজা সেখানে পৌঁছে কার সাহায্য দরকার তাকে খুঁজে বের করি। প্রথমে কে জীবিত আছে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। ডায়না আমাকে বলেন, মাই গড কি হয়েছে। আমরা একজন নারীকে খুঁজে পাই। পরে জানতে পারি তিনি ছিলেন ডায়না। গাড়ির পেছনে পড়েছিলেন। তিনি খুব ধীরে শ্বাস নিচ্ছেন। আমি দেখলাম তিনি বেঁচে আছেন। আমি দেখতে পেলাম তিনি ডান কাঁধে খুব অল্প আঘাত পেয়েছেন। অন্য আর উল্লেখযোগ্য কিছু দেখতে পেলাম না। তার শরীরের অন্য কোন জায়গায় রক্তক্ষরণ দেখতে পেলাম না। আমি তার হাত ধরলাম। তাকে বললাম শান্ত ও স্থির থাকতে। আমি তাকে বললাম, তাকে সাহায্য করতে এসেছি। তাকে পুনরায় নিশ্চিত করলাম। কিছু সময় পর তার শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়ে গেল। গুরমেলন ব্রিটানিতে ২২ বছর অগ্নিনির্বাপক কর্মী হিসেবে কাটান। আগে তিনি মাত্র একবারই দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িটি সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট তিনি প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রে সাক্ষাতকার দেন। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর কোন সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কোন রকম যোগাযোগ করবেন না। বর্তমানে গুরমেলন ব্রেখট বিমানবন্দরে জরুরী সেবা দেয়ার দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, আমরা সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। আমি দেখলাম তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন ও তার শ্বাস নেয়া বন্ধ হয়ে গেল। আমি তার হৃৎপি-ে ম্যাসেজ করতে থাকি। কয়েক সেকেন্ড পর তিনি আবার শ্বাস নিতে শুরু করেন। আমি তখন তার শ্বাস নেয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাই। আমি ভাবি আমি কারও জীবন বাঁচাতে পেরেছি। আমি মনে করেছিলাম তিনি হয়ত বেঁচে যাবেন। দ্রুতই আমরা তাকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেই। তিনি তখনও বেঁচে ছিলেন। আমি আশা করেছিলাম তিনি বেঁচে যাবেন। তবে পরে আমি জানতে পারি তিনি হাসপাতালে মারা গেছেন। আমি তখন খুব বিমর্ষ হয়ে পড়ি। আমি এখন জানতে পেরেছি যে, তার শরীরের অভ্যন্তরে মারাত্মক ইনজুরি হয়েছে। তবে তার পুরো ঘটনাটি আমার মনে একটি বিরাট দাগ কেটে আছে। সেই মুহূর্তের ঘটনা আমি পুরো রাতে ভুলতে পারিনি। তা এখনও আমার মনে রয়ে গেছে। আমার কোন ধারণা ছিল না যে তিনি হচ্ছেন প্রিন্সেস ডায়না। তাকে যখন এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় তখন এক প্যারামেডিক আমাকে জানান তিনি হচ্ছেন প্রিন্সেস ডায়না। আমি জানি তিনি কে তবে আমি ব্রিটিশ রাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নই। আমি এ্যাম্বুলেন্সে চলে যাই। ভেতরে তাকাই তখন আমি তাকে চিনতে পারি। দুই সন্তানের জননী ডায়না তার প্রেমিক দোদি আল ফায়েদ, গাড়ির চালক হেনরি পল ও বডিগার্ড ট্রেভর রেস-জোনস সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন। বডিগার্ড ট্রেভর শুধু বেঁচে আছেন। তার বয়স ৪৯ বছর। ‘তার ছবি এখনও আমার মনে গেঁথে আছে। এই প্রথম আমি সংবাদমাধ্যমে তার সম্পর্কে কথা বলছি,’ গুরমেলন জানান। ফরাসী সামরিক বাহিনীর অংশ হিসেবে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা গণমাধ্যমে কথা বলতে পারে না। এখন আমি সংস্থাটি ছেড়ে দিয়েছি। যখন আমি গাড়ির ভেতর ঢুকি তখন দেখতে পাই ড্রাইভার মারা গেছে তার জন্য করার আর কিছুই নেই।
×