ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ু দূষণে প্রতিবছর ১ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

বায়ু দূষণে প্রতিবছর ১ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রমবর্ধমান ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঢাকাসহ অন্যান্য শহর গুরুতর বায়ু ও পানি দূষণের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতিবছর দেশ এক শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে কেবল বায়ু দূষণের কারণে। সরকারী হিসেবে দেশের জিডিপির আকার বর্তমানে প্রায় ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ হিসাবে বায়ু দূষণের কারণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ গড়ে আড়াই বিলয়ন বা ২৫০ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে পানি, বাতাসসহ সব ধরনের পরিবেশগত অবনতি রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ‘কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট এসেসম্যান্ট ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এ তথ্য ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্বব্যাংক এ কর্মশালার আয়োজন করে। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ইশতিয়াক আহমেদ, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রইসুল ইসলাম ম-ল ও বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম লিডার সঞ্জয় শ্রীবাস্তব, বিশ্বব্যাংকের প্র্যাকটিস ম্যানেজার ফর এনভায়রনমেন্ট কেসনিয়া লিভস্কি প্রমুখ। কর্মশালায় বিশ্বব্যাংক পরিচালিত ‘বাংলাদেশ ঃ আনলকিং অপরচুনিটিস ফর ক্লিন এ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট গ্রোথ (সিইএ)’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়েছে, কেবল বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর দেশ এক শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প এবং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শহরগুলোর বাতাসের পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ এবং ভূগর্ভস্থ পানিও দূষিত করছে। রাজধানীর দরিদ্র এলাকাগুলোতে থাকা ডায়িং এবং ফিনিশিং ফ্যাক্টরিগুলোর বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এসব ফ্যাক্টরি পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত প্রতি এক টন ফ্যাব্রিকের জন্য ২০০ মেট্রিক টন বিষাক্ত পানীয় বর্জ্য উৎপন্ন করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে পরিবেশ দুষণও বাড়ছে। পরিবেশ বিষয়ে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে। শিক্ষার হার আরও বাড়লে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় মাথাপিছু আয় বাড়লে মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় পরিবেশ কমিটি আছে। আমার মন্ত্রণালয় এটি কো-অর্ডিনেট করে। সেখানে সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়, সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মিটিং থেকে বের হওয়ার পর অন্যদের কাছে পরিবেশ গুরুত্ব হারায়। তিনি বলেন, দেশজুড়ে ৫০ শতাংশ পুকুর এবং ৭০ শতাংশ খাল বর্তমানে হারিয়ে গেছে কিংবা সংস্কারহীন অবস্থায় আছে। অথচ এসব পুকুর ও খাল সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের খালগুলো দূষিত হয়ে পড়ছে। উপজেলা পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য গঠিত কমিটি স্থানীয় এমপিদের কথার বাইরে যেতে পারেন না। তিনি বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও পুকুর খনন, খাল খনন কর্মসূচী নেন। অন্যদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় তারাও খাল খনন করেন। কিন্তু বাস্তবে খাল বা পুকুরে এর কোন প্রতিফলন নেই। মন্ত্রীর মতে, মূলত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দুর্নীতির জন্যই এসব কাজ হয় না। তিনি আরও বলেন, উপজেলা ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরের ওপর চাপ কমবে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আকার ছোট হওয়া উচিত। সর্বত্র সরকারের উপস্থিতি কাজে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করে। বিশেষ অতিথি বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, পরিবেশের বিনিময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে তা টেকসই হয় না। তবে ভাল খবর হলো গবেষণার ফলাফল বলছে, দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পরিবেশ দূষণ কাম্য হতে পারে না। পরিবেশসম্মত উপায়েও দ্রুত প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব। কেবল শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার অজুহাতে বাংলাদেশ পরিবেশ ইস্যু উপেক্ষা করতে পারে না। পরিবেশগত অবনতি রোধ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
×