ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকা ও লাঙ্গল সমর্থকদেরন মধ্যে হাতাহাতি, ঝন্টুর জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

নৌকা ও লাঙ্গল সমর্থকদেরন মধ্যে হাতাহাতি, ঝন্টুর জরিমানা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১০ ডিসেম্বর ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনার এক পর্যায়ে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর রবিবার সকালে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে এক উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনা চলার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর সমর্থক ফেরদৌস আলম আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরেন। পাশাপাশি জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ রংপুরের জন্য কিছু করেনি এমন বক্তব্য দেয়া শুরু করলে সেখানে উপস্থিত জাতীয় পার্টির সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। প্রতিবাদ করার পরও একইভাবে বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলে জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থকরা তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় সেখানে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এরপর তারা সেখান থেকে সরে গেলেও উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোক্তারুল আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে পুলিশ পরিদর্শক মোক্তারুল আলম জানান, এখানে যে অনুষ্ঠানটি হবে তা পুলিশ প্রসাশনকে আগে জানানো হয়নি। বর্তমানে সেখানে পুলিশের টহলরত টিম আছে। উন্মুক্ত আলোচনায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, বাসদ, এনপিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীসহ ৬ মেয়র প্রার্থী অংশ নেন। তবে, জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়নি। এদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর পায়রাচত্বর ও মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় এই জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোঃ আরিফ জানান, নগরীর পায়রাচত্বরে মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু তার বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকা- প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করছিলেন। এতে ওই এলাকায় বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দেয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করে রাস্তা বন্ধ করে প্রচার চালানোর অভিযোগে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোঃ আরিফ বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী যে দলের প্রার্থী হোক না কেন তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রসঙ্গত, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনের প্রচারণা জমে উঠেছে। স্টেজ বানিয়ে বড় জনসভা করার সুযোগ না থাকায় মেয়র প্রার্থীরা সিটি কর্পোরেশনের আনাচে-কানাচে পাড়ায়-মহল্লায়, বাজার এলাকা, ছোট-বড় রাস্তার ধারে ছোট ছোট পথসভা করছেন। এই পথসভাগুলোতে তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করছেন। প্রত্যেক মেয়র প্রার্থী দৈনিক ১০/১৫টি পথসভা করছেন। রবিবার বিকেলে রংপুরের ধাপ লালকুঠি এলাকায় গণসংযোগ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। সেখানে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি রংপুরের ছেলে। রংপুরবাসীর উন্নয়নের জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। আজীবন আমি রংপুরের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চাই। বিগত পাঁচ বছরে রংপুরের উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। ফলে নগরপিতা বেছে নিতে তারা এবার ভুল করবে না।’ তিনি রংপুরকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন রংপুর হলো লাঙলের ঘাঁটি। কিন্তু সেই ঘাঁটি এখন নৌকার দখলে। ফলে, সবাই লাঙ্গল ফেলে দিয়ে উন্নয়নের প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করবে। তিনি বলেন, প্রচারণার ক্ষেত্রে আমি কোন নোংরামিতে যেতে চাই না। প্রতিপক্ষের কারও বিরুদ্ধে কোন অসদাচরণও করব না। তিনি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙাকে ইঙ্গিত করে বলেন, যারা মঞ্চ তৈরি করে ভোট প্রার্থনা করছেন, মন্ত্রীর গাড়িতে ঘুরছেন, তারা নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘন করছেন কিনা নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত।’ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এবার এখানে নৌকার যে জোয়ার দেখছি, তাতে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।’ গণমানুষের রায়ের প্রতিশ্রদ্ধা রাখার জন্য রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে বলেন, সাবেক মেয়র ঝন্টুু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। তাই তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারচুপির আশ্রয় নিতে পারেন। এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোট নিয়ে কোন প্রকার কারচুপি করার চেষ্টা করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে এই রংপুর থেকে বর্তমান সরকার পতনের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শনিবার সন্ধ্যায় শালবন মিস্ত্রিপাড়ায় এক নির্বাচনী বিশাল পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যে কয়েকজন প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন, তাদের প্রত্যেককে কষ্টিপাথর দিয়ে যাচাই করে নিন। আমি যদি খাঁটি হয়ে থাকি তবে আমার প্রতীক লাঙল মার্কায় আপনাদের মূল্যবান ভোটটি দিয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে আমাকে অধিষ্ঠিত করবেন। এর পূর্বে নগরীর কেরানীপাড়া চৌরাস্তার মোড়, গোলাগঞ্জের হাটে পৃথক পৃথক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও আজিজনগর কলোনি, সালেক পাম্প, সোনালী ব্যাংক, ধর্মসভা ও জাহাজ কোম্পানি এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।
×