স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার বাজারখালী গ্রামের ইদি আমিন হত্যা মামলার তদন্তে এগারো মাসেও কোন অগ্রগতি নেই। প্রথম দফায় থানা পুলিশ ৬ মাস এবং পরের দফায় ডিবি পুলিশ প্রায় ৫ মাস ধরে তদন্ত করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন হয়নি। উপরন্তু প্রথম দফায় পুলিশ মামলার একাধিক আসামিকে গ্রেফতার করেছিল। তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল শূন্য রয়ে গেছে। আর এদিকে মামলার আসামি হয়ে একটি সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা ঘটনার পর থেকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পরিবারের ৮০ বছর বয়সী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকেও পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনা এবং মামলার নেপথ্যে এলাকার আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে একটি প্রভাবশালী মহল কলকাঠি নাড়ছে। যে কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে এ যাবত কোন তথ্য প্রমাণ না পাওয়া গেলেও কেবল হয়রানি করার উদ্দেশে মামলাটি জিইয়ে রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছরের ৭ জানুয়ারি রাতের কোন এক সময়ে বাজারখালী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ইদি আমিন খুন হয় বলে বরগুনা জেলার আমতলী থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়। ওই মামলায় দৈনিক জনকণ্ঠের পটুয়াখালীর নিজস্ব সংবাদদাতা মোঃ মোখলেছুর রহমান ও দৈনিক মানবকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত চিফ রিপোর্টার মোঃ সিদ্দিকুর রহমানসহ পরিবারের ৮ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলায় সাংবাদিকদ্বয়ের বৃদ্ধ বাবা এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাইকেও আসামি করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, স্র্রেফ সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যে কারণে বৃদ্ধ এবং প্রবাসীকেও আসামি করা হয়। তড়িঘড়ি করে আসামি গ্রেফতারেও দূরভিসন্ধি কাজ করেছে। যদিও রিমান্ডে নিয়েও কথিত আসামিদের কাছ থেকে কোন তথ্য মেলেনি। মামলায় নিহতের স্ত্রীকে বাদী কিংবা সাক্ষী না করা, মামলায় আরেকটি দূরভিসন্ধির প্রমাণ। এছাড়া, পুলিশের উপস্থিতি ছাড়া নিহতের ঝুলে থাকা মরদেহ নিচে নামিয়ে আনা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বরগুনা ডিবি পুলিশ নিহতের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল তাদের প্রতি সন্দেহের তীর ছুড়েছেন। এছাড়া, অর্থ-সম্পত্তির লোভে ইদিকে তার নিজ পরিবারের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে খুন করতে পারে বলেও ধারণা করছে। এছাড়া, জেলা পুুলিশের সংশ্লিষ্টদের এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে যে, এলাকার কোন প্রভাবশালী ভাড়াটে খুনী দিয়ে ইদি আমিন হত্যাকা- ঘটিয়ে থাকতে পারে। ঘটনার রাতে ঘটনাস্থলসহ আশপাশে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে ডিবি যে কোন সময়ে এ তথ্য উদঘাটন করতে পারে, এমন ধারণাও সংশ্লিষ্টদের। এর আগে ইদি আমিনের রহস্যজনক মৃত্যুর মামলাটি দীর্ঘ ৬ মাস তদন্ত করেছেন আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)। দীর্ঘ তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সত্যতা পাননি বলে স্বীকার করেছেন ওই তদন্ত কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, থানা পুলিশ দিয়ে সাংবাদিক পরিবারকে ফাঁসাতে না পেরে জোরালো তদবির করে মামলাটির তদন্ত ডিবির কাছে ন্যস্ত করানো হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-দুটি পরিবারের মধ্যে পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে সাংবাদিক পরিবারকে হয়রানি করা। একই উদ্দেশে এর আগে ওই সাংবাদিকদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়াসহ একাধিক হয়রানিমূলক মামলাও দিয়েছিল একই দুর্বৃত্ত চক্র।