ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অসংখ্য রোহিঙ্গা মংডু সীমান্তে এখনও অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

অসংখ্য রোহিঙ্গা মংডু সীমান্তে এখনও অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বুধবার সন্ধ্যায় নেপিডোতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক ওই সময়েও রাখাইন রাজ্যের মংডু সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বুধবার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোন খবর পাওয়া যায়নি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান কঠোর করছে। সন্ধ্যায় প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে চুক্তি সম্পাদনের কথা আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে রোহিঙ্গাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে অনেকের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হলেও অনেকে আবার নাগরিকত্বের প্রশ্নসহ দমন নিপীড়নও ভয়ভীতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোড়িত হচ্ছে। অপরদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ের খবরের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা আগেও এসেছে। কিন্তু সকলকে ফিরিয়ে নেয়া হয়নি। এবার এসেছে লাখে লাখে। চুক্তির পর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলে মিয়ানমার যেসব শর্ত আরোপ করেছে তা নিয়ে তারা যদি অটল থাকে তাহলে রোহিঙ্গাদের পুনরায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের নিয়ে কক্সবাজার অঞ্চল জর্জরিত। যেসব রোহিঙ্গার ফিরে যাওয়ার মনমানসিকতা আছে তাদের না যাওয়ার জন্য কিছু মহল মদদ দিচ্ছে। এদের মধ্যে কয়েকটি এনজিও সংস্থাও রয়েছে। অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার ॥ মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। রাখাইনে আপাতত প্রকাশ্যে কোন ধরনের সহিংসতা না থাকলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের উস্কানিতে আশ্রিত বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা তাদের স্বজনদের বাংলাদেশে চলে আসতে আগ্রহী করছে রীতিমতো। তবে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের কড়াকড়িতে নৌকার মাঝিরা রোহিঙ্গা পারাপারে বিরত থাকায় মংডু দংখালী ও কোয়াংচিবং সীমান্তে অপেক্ষমাণ অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে পারছে না। এতে ওদের স্বজন ও কথিত রোহিঙ্গা নেতারা স্পেশাল বোট ভাড়া করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ইতোপূর্বে বিজিপি ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে মিয়ানমারে। সহিংসতাও হয়েছে রাখাইনের মংডু এলাকায়। এটি তাদের দেশের সৃষ্ট ঘটনা, সেদেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সমাধান করার কথা। তারপরও মানবিক কারণে বাংলাদেশে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গারা যখন দলে দলে এদেশে প্রবেশ করছিল, তখন সকলে মানবিক দৃষ্টিতে আশ্রয় এবং তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে এখনতো মিয়ানমারে বড় ধরনের কোন সহিংসতা নেই। এখনও কেন রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ৮২ এইডস রোগী শনাক্ত ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে দিন দিন বাড়ছেই এইডস রোগীর সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই রোগের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে বলে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশ নারী। এর আগে দুই বছরের শিশুসহ ৭৮ জন এইচআইভি রোগী বলে শনাক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঠোঁটকাটা রোহিঙ্গা রোগীর চিকিৎসা ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক ঠোঁটকাটা রোগী রয়েছে। এই সংখ্যা হাজারেরও বেশি হবে। এসব ঠোঁটকাটা রোগী অপারেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশের ঠোঁটকাটা রোগী অপারেশনের বৃহৎ সংস্থা ‘স্মাইল ট্রেন’। স্মাইল ট্রেন রোহিঙ্গা ঠোঁটকাটা রোগীদের অপারেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে ৩৫ জন রোহিঙ্গাকে অপারেশন করাচ্ছে স্মাইল ট্রেন। এ উপলক্ষে দু’দিনের একটি ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার এই ক্যাম্পের উদ্বোধন করা হয়। ক্যাম্প শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার। এই অপারেশন ক্যাম্পে ৩৫ রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় আরও অন্তত ১০জন রোগীকে অপারেশন করা হয়েছে। চুক্তি হওয়ায় স্থানীয়রা খুশি ॥ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ঢাকা- নেপিডো চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার খবরে স্থানীয় অধিবাসীরা খুশি। কিন্তু এ চুক্তি কিভাবে হচ্ছে এবং তা কবে নাগাদ কার্যকর হবে এবং কার্যকর হলে আদৌ সকলকে ফিরিয়ে নেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তাদের মাঝে উৎকণ্ঠাও রয়েছে। কেননা, মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যেসব শর্ত দিয়েছে এবং সর্বশেষ চীনের পক্ষ থেকে তিনস্তরের প্রস্তাবনার কথা বলেছে তাতে রোহিঙ্গাদের মূল দাবি, অর্থাৎ নাগরিকত্বের বিষয়টি নেই। ফলে রোহিঙ্গারা চুক্তি অনুযায়ী ফিরে যেতে খুব সহজে যে রাজি হবে তা বলা মুশকিল।
×