ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট ॥ স্বাধীন তদন্ত চান রেক্স টিলারসন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট ॥ স্বাধীন তদন্ত চান রেক্স টিলারসন

বিডিনিউজ ॥ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। এ বিষয়ে দেশটির বেসামরিক ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে বুধবার মিয়ানমার পৌঁছান টিলারসন। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের যে গুরুতর অভিযোগ সম্প্রতি ওঠেছে তার বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। ‘এ বিষয়ে সব বৈঠকে আমি মিয়ানমার সরকারের প্রতি একটি কার্যকর স্বাধীন তদন্তে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দলকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলেছি।’ মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। সেখানে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক নৃশসংশতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠছে। যদিও ওই অভিযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর মঙ্গলবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া কিংবা লুটপাটের কোন ঘটনায় ‘সেনা সদস্যরা জড়িত নয়’। আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেনাবাহিনী কীভাবে নির্বিচারে মানুষ মারছে, ধর্ষণ ও লুটপাট করছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কথায়। ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। রাখাইন সফর করে আসা বিবিসির এক প্রতিবেদক তার নিজের চোখে দেখা পরিস্থিতির সঙ্গে বর্মি সেনাদের তদন্ত প্রতিবেদন সাংঘর্ষিক বলেছেন। মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই প্রতিবেদনকে বর্ণনা করেছে ‘অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা’ হিসেবে। আউং সান সুচির সঙ্গে ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন আরও বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ দেখে যুক্তরাষ্ট্র খুবই পীড়া বোধ করছে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। সেখানে যা ঘটছে তা এক কথায় ভয়ঙ্কর। সামরিক শাসনের অবসানের পর এটাই মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সঙ্কট।’ ওয়াশিংটনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা মিয়ানমার ও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ভাবছে বলে জানায় রয়টার্স। তবে এখনই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে নন টিলারসন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করার সময় এখনও আসেনি। গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমারের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তাদের সমর্থন দেবে। আমরা মিয়ানমারের সাফল্য দেখতে চাই। নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে এ সঙ্কটের সমাধান দেখা আমার জন্য কষ্টদায়ক হবে।’ এই মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়কেই যুক্তরাষ্ট্র আরও সাহায্য পাঠাবে বলেও জানান তিনি। এদিকে এরকম মানবিক পরিস্থিতিতে কিভাবে এমন নিষ্ঠুরের মতো চুপ আছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুচি বলেন, ‘আমি চুপ করে নেই লোকজন এটা বলে কি বোঝাতে চায়, আমি যা বলেছি সেটার কি অস্তিত্ব নেই।’ মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন আউং হলাইংয়ের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন টিলারসন।
×