ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডবের নতুন কৌশল জামায়াত-শিবিরের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

জ্বালাও পোড়াও তাণ্ডবের নতুন কৌশল জামায়াত-শিবিরের

শংকর কুমার দে ॥ ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ধর্ম অবমাননার অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষজন ক্ষেপিয়ে তুলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মারধর ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার কৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী সারাদেশে জঙ্গী তৎপরতায় ব্যর্থ হয়ে এখন আবার ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ধর্ম অবমাননার কৌশল নিয়েছে। গত ৫ বছরে যশোরের অভয়নগর, পাবনার সাঁথিয়া, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগর ও সর্বশেষ রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রাম-এই পাঁচটি স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফেসবুকের যে আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রামে তা-ব চালানো হয়েছে, সেই আইডি উদ্ধার ও তার ব্যবহারকারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দিয়ে তা বার বার শেয়ার করে ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে ক্ষেপিয়ে তুলে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, মারধর করার ঘটনা সুপরিকল্পিত। প্রতিটি ঘটনায় যারা নেপথ্যে থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর পর গ্রেফতার হয়েছে তাদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবির ও উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। জামায়াত-শিবির ও উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপ্রপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষজন না বুঝেই এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে, যা ওই গোষ্ঠীর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অশুভ ফল। এর ফলে প্রত্যেকটি ঘটনাতেই দেখা গেছে, যেই হিন্দু ব্যক্তির নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খোলা হয়েছে সেই ব্যক্তিটি অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত, এমনকি তারা ফেসবুক চালাতেও পারেন না। অথচ ওই সব ব্যক্তিই গ্রেফতার হচ্ছেন, রিমান্ডে যাচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন। প্রতিবারই ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে এই ধরনের অপপ্রচার চালানোর ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধকল্পে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকের যে আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রামে সহিংস সন্ত্রাসের তা-ব চালানো হয়েছে, সেই আইডি উদ্ধার ও তার ব্যবহারকারীর ক্লু খুঁজে পাওয়া গেছে। হামলাকারীদের স্টিল ছবি থেকে শুরু করে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। কারা, কিভাবে হামলা করেছে এবং কারা ইন্ধন দিয়েছে, সবার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। যে ফেসবুক আইডি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত সেটি আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। গত শুক্রবার রংপুরের পাগলাপীর এলাকার ঘটনা, গত বছরের অক্টোবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগরের ঘটনা আর এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা, এর আগে পাবনার সাঁথিয়া ও যশোরের অভয়নগরের ঘটনা একই রকমের, একই দৃশ্য, একই প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। সুতরাং, একই গোষ্ঠী এই ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে তদন্তে স্পষ্ট হচ্ছে। আর সব স্থানেই এই প্রতিক্রিয়া তৈরি করার পেছনে কলকাঠি নাড়ার মানুষগুলো ছিল একই গোষ্ঠীর। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পাঁচটি ঘটনাতেই প্রমাণ হয়েছে, যাদের নামে ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পোড়ানো হয়েছে, প্রার্থনার স্থান পোড়ানো হয়েছে, সম্পদ লুট হয়েছে তারা কেউ স্ট্যাটাস দেয়নি। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্যাগ করা হয়েছে, কারও ভুয়া এ্যাকাউন্ট বানিয়ে পোস্ট দেয়া হয়েছে বা অন্যের পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে। তারপরও মানুষ সতর্ক না হওয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার কাজটি কৌশলে করা হচ্ছে, যা পূর্বপরিকল্পিত। একজনের এ্যাকাউন্ট থেকে অন্যজনেও এই ধরনের কাজ করতে পারে। এর পেছনে রয়েছে সংঘবদ্ধ জামায়াত-শিবির ও উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর চক্র। পাঁচটি ঘটনাতেই সংঘবদ্ধভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে জামায়াত-শিবির নামের বিষবাষ্প চক্রের বিরুদ্ধে। আর সব ক্ষেত্রেই তারা ব্যবহার করেছে ফেসবুক। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত- শিবিরের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার দ্বন্দ্বকেও হিন্দুদের বাড়িঘর পোড়ানোতে ব্যবহার করানো হয়েছে বিভ্রান্তির জাল তৈরি করে কৌশলে। জামায়াত-শিবির জানে কিভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ধর্ম নিয়ে খেলা যায়, গোলযোগ পাকানো যায় আর হত্যা-লুণ্ঠন করা যায়। এসব ঘটনা ১৯৭১ সালের আগে থেকে পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনালগ্নে কাজে লাগানো হয়। তখন থেকেই তাদের উত্তরসূরিরা করে এসে হাত পাকিয়ে এখন স্বাধীন বাংলাদেশেও বার বার করে যাচ্ছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানান, ফেসবুকে জামায়াত-শিবির যে অপপ্রচার মিশন নিয়েছে তা ব্যক্তিকে নয়, সমাজকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে দিচ্ছে। আগামীতেও যে জ্বালাবে না তার কোন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এক সময় বাঁশের কেল্লা তৈরি করে তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে ফেসবুক পাতা খুলে অপপ্রচার করেছিল এখন বাঁশের কেল্লার প্রতিটি এ্যাডমিনই এক একটা ‘ডটকম’ খুলে প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত। কারা এসব ডটকমের মালিক তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। একের পর এক খবরের আদলে ভুয়া খবর আপ করে সেটাকে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, বুস্ট করছে এই চক্র। এই চক্র এই কায়দায় জঙ্গী সদস্য সংগ্রহ, জঙ্গী তৎপরতার জাল বিস্তার, জঙ্গী হামলা ইত্যাদি করেছে। এখন আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করার জন্য এই চক্রটি কাজে লাগাচ্ছে সেই একই প্রযুক্তি।
×