ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

হাওয়া ভবনের আশ্বাস পেয়েই পিন্টুর বাসায় বসে ছক কষে জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

হাওয়া ভবনের আশ্বাস পেয়েই পিন্টুর বাসায় বসে ছক কষে জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার নবম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বুধবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, হাওয়া ভবন থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গীরা। তারেক ও বাবরের নির্দেশে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করার জন্য এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য প্রশাসনিক, আর্থিক জনবল ও বিস্ফোরক সহায়তা করা হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী সমর্থন করে ১২ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। তারা জবানবন্দীতে বলেন, জঙ্গী তৎপরতা চালাতে আওয়ামী লীগকে তারা বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা আব্দুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবন ও হাওয়া ভবনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিক্উিটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। যুক্তি উপস্থাপন করে চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী সমর্থন করে ১২ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। তারা জবানবন্দীতে বলেন, জঙ্গী তৎপরতা চালাতে আওয়ামী লীগকে তারা তাদের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা আব্দুস সালামের সরকারী বাসভবন ও হাওয়া ভবনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। যে ১২ সাক্ষী মুফতি হান্নানের জবানবন্দী সমর্থন করে জবানবন্দী দিয়েছেন তারা হলেন আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ (রমনা বটমূলের তদন্তকারী কর্মকর্তা), মেজর জেনারেল (অব) সাদিক হাসান রুমি, লে. কমান্ডার মিজানুর রহমান, মেজর (অব) আতিকুর রহমান, মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লা, নাহিদ লায়লা কাকন, র‌্যাবের সাবেক ডিজি আব্দুল আজিজ সরকার, সৈয়দ মনিরুল ইসলাম, কর্নেল (অব) গোলাম রাব্বানী, মকবুল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কে বলা হয়, তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টু জঙ্গী নেতাদের প্রশাসনিক ও অর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং হামলার বিস্ফোরক সরবরাহের আশ্বাস দেন। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আর ২০ জনের সাফাই সাক্ষী নেয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলা তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। অন্য মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার পর এ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পালাতক রয়েছেন। এ ছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।
×