ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেল

মিয়ানমারের সৈন্যরা যৌন সহিংসতা চালিয়েছে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের সৈন্যরা যৌন সহিংসতা চালিয়েছে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার দায়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেল। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা নারীর ওপর মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা ও নির্যাতন চালিয়েছে। সে কারণে সশস্ত্র বাহিনীকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। রবিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংঘাতময় এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন। এসময় তিনি বলেন, কক্সবাজারে রাখাইন থেকে আসা নারীদের প্রতি নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তিনি পেয়েছেন। প্রমীলা প্যাটেল বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী যা টামাডো নামে পরিচিত। এই বাহিনীর সদস্যরা রাখাইনে নারীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন ও সহিংসতা চালিয়েছে। এই বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী (বিজেপি), রাখাইনের উগ্রবাদী বৌদ্ধগোষ্ঠী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও জড়িত বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের ওপর যারাই নির্যাতনের পরিকল্পনা করেছেন, নিদের্শনা দিয়েছেন, যারা নির্যাতন চালিয়েছেন তাদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রমীলা প্যাটেল বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বা আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যেতে পারে। তবে জাতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন মিয়ানমারের পেছনে রয়েছে বলেও তিনি জানান। প্রমীলা প্যাটেল জানান, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের কর্মসূচী অনুযায়ী কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গা নারীদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে তিনি আসেননি। রাখাইনে নারীদের ওপর সহিংসতার ধরন বুঝতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পেশ করবেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে তিনি যেতে চেয়েছিলেন। তবে মিয়ানমার সরকার তার সেই অনুরোধ রাখেনি। সে কারণে তিনি মিয়ানমারে যেতে পারছেন না। জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেন, রাখাইনে কোন কোন রোহিঙ্গা নারী দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কোন কোন নারীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন। একজন নারীর কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, সেই নারীকে ৪৫ দিন আটকে রেখে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ করেছেন। আবার কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বলেন, রাখাইনে নারীদের ওপর পরিকল্পিত ও যৌথভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছে। গ্রাম পুড়িয়ে লুট করা হয়েছে। তাদের প্রতি নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি শিশুদের ওপরও নির্যাতন করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেন, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট বাহিনীর দ্বারা নারীর প্রতি একই ধরনের সহিংসতা ঘটেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সেখানেও তদন্ত ও অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নিতে পারে। প্রমীলা প্যাটেল বলেন, রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আসা কয়েকজন নারী তাকে জানিয়েছেন, তারা রাখাইনে ফিরে যেতে চান। তবে ফিরে যাওয়ার আগে তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে, যেন তারা মিয়ানমারের নাগরিকদের মতোই সমান সুযোগ লাভ করতে পারেন। জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, এখানে আসা নারীদের আমরা বলেছি, তারা এখানে একা নয়। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের পাশে রয়েছে। আর আমার সংস্থা জাতিসংঘও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকবে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন সম্পর্কে জানতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। কক্সবাজার সফরকালে তিনি নির্যাতিত নারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেল। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনির সঙ্গে এক বৈঠকে প্রমীলা প্যাটেল তার বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়েছিলেন।
×