ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ যেন জঙ্গী মৌলবাদী কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে ॥ মোজাম্মেল

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৬ নভেম্বর ২০১৭

কেউ যেন জঙ্গী মৌলবাদী কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে  না পারে ॥ মোজাম্মেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গায় সবাইকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক প্রয়োজনে যেমন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তেমনি এ দেশের মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগে কেউ যেন জঙ্গী, মৌলবাদী কিংবা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজর দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সব চক্রান্ত নির্মূল করার আহ্বান জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ৪৬তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে রবিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার দাবি নিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে এসব কথা বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। এতে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑ বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের, চট্টগ্রামের শঙ্কর মঠ ও মিশনের সভাপতি স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বধর্মীয় বিভাগের চেয়ারম্যান ফাদার ড. তপন ডি রোজারিও ও বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি শামসুল হুদা। সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানবতা রক্ষায় আমরা রোহিঙ্গাদের এ দেশে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের বাসস্থান ও খাবার নিশ্চিত করছি। কিন্তু তাদের জায়গা দিতে গিয়ে এ দেশের মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেরই সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। সরকারবিরোধী সাম্প্রদায়িক প্রচারের জন্য জামায়াত সমর্থক তিনটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও ইসলামের নামে বহু জামায়াতী প্রতিষ্ঠান ত্রাণ দেয়ার নামে রোহিঙ্গা তরুণদের মগজে জিহাদ ও জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসের বিষ ঢোকাচ্ছে। তারা বলছে, বাংলাদেশ চাইলেই যুদ্ধ করে আরাকান দখল করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারে। জামায়াতীদের জিহাদী প্রচার বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য সমূহ হুমকির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। পাশপাশি তিনি বার্মায় গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশনের উদ্যোগে এ দেশ থেকে কিছু বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বার্মায় শান্তি সফরে যাওয়ার পের গুরুত্বারোপ করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভয়াবহ প্রতিঘাত অনুসন্ধানের জন্য আমরা ১১ অক্টোবর ‘বার্মায় গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশন’ গঠন করেছি। ইতোমধ্যেই কমিশনের চেয়ারম্যান শামসুল হুদার নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন শিবির পরিদর্শন করে প্রায় ২শ’ ভুক্তভোগীর জবানবন্দী নথিবদ্ধ করেছে। তারা প্রত্যেকেই তাদের নাগরিকত্ব চায়, তারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক খাতিরে রক্ষা দিয়েছে কিন্তু তাদের এ দেশে রেখে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ রোহিঙ্গাদের অনেকেই জঙ্গী কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ মানুষের জায়গা দিতে গিয়ে দেশের বণাঞ্চল কমতে শুরু করেছে। তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হলেও তারা অনেকেই স্থানীয় শ্রমবাজারে ঢুকে পড়ছে। এলাকার বাঙালী ও পাহাড়ী দিনমজুররা সারাদিন যে কাজ করে চার-পাঁচ শ’ টাকা পায়, রোহিঙ্গারা সে কাজ এক-দেড় শ’ টাকায় করছে। ফলে স্থানীয় কর্মহীন মানুষের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি ক্ষোভ ও বিদ্বেষ বাড়ছে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। হঠাৎ এ দেশে আরও ১০ লাখ মানুষ বেড়ে যাওয়া দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় বলে মনে করেন এ সাংবাদিক। আমাদের কমিশনের উদ্যোগে বার্মায় বৌদ্ধ ধর্মের নেতাদের পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় অবশ্যই সেখানে শান্তির বার্তা নিয়ে এ দেশের বৌদ্ধদের যাওয়া উচিত। সেমিনারে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের বলেন, এ বছরের মার্চে আমি মিয়ানমার গিয়েছিলাম। তখন আউং সান সুচির সঙ্গেও আমার সাক্ষাত হয়েছিল। আমি তখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বলেছিলাম, আপনি আরাকানে তাদের জন্য একটি অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দিন, তারা সেখানে শান্তি থাকতে পারবে। আপনাদের তো অনেক পর্বত জনবসতহীন। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি। চট্টগ্রামের শঙ্কর মঠ ও মিশনের সভাপতি স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ বলেন, ধর্মে কোন বিভেদ নেই। প্রত্যেক ধর্মই মানবতার কথা বলে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রশ্রয় দেয়া কিছু মানুষ ধর্মের লেবাস পরে জঙ্গীবাদ করে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। এটি একটি সামাজিক সঙ্কট। বার্মা অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে আশা করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বধর্মীয় বিভাগের চেয়ারম্যান ফাদার ড. তপন ডি রোজারিও বলেন, কোন ধর্মই সহিংসতা চায় না। ধর্ম চায় শান্তি। রোহিঙ্গাদের অনেকেই মনে করেন তাদের দেশত্যাগের পেছনে বার্মার বৌদ্ধরাও যুক্ত রয়েছে। তবে ঢালাওভাবে কোন ধর্মকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত, তাই বলে কি ১০ লাখ রোহিঙ্গাই অপরাধী? বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল ইসলাম বলেন, ইসলামের নামে জামায়াত বিভিন্ন ধরনের জঙ্গীবাদী কর্মকান্ডে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করতে শিবিরে শিবিরে তৎপরতা চালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা ইসলামের লেবাস পরে সহিংসতা চালােেচ্ছ, যেমন একত্তরে আলবদরের সঙ্গে মিলে তারা দেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল।
×