ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উর্বরাহীন হচ্ছে ফসলি জমি ॥ বাড়ছে রোগব্যাধি

রাঙ্গুনিয়ায় শতাধিক ইটভাঁটিতে দূষিত পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ৬ নভেম্বর ২০১৭

রাঙ্গুনিয়ায় শতাধিক ইটভাঁটিতে দূষিত পরিবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম, ৫ নবেম্বর ॥ রাঙ্গুনিয়ায় কৃষিজমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাঁটি। প্রশাসনের নীরবতায় এসব ইটভাঁটির পেটে গেছে হাজারের অধিক আবাদি জমি। পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মাঝখানে বয়ে চলা কর্ণফুলী তীর ঘেঁষে কোদালা ও সরফভাটা ইউনিয়নজুড়ে গড়ে উঠেছে ৯টি, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের চট্টগ্রামের শস্যভা-ারখ্যাত গুমাইবিলের জমির ওপর ১টি, হোসানাবাদ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তাপুর এলাকায় ১১টি, লালানগর ইউনিয়নের জঙ্গল নিশ্চিন্তাপুর এলাকায় ৬টি, ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাছড়িতে ৪৩টি, রাজানগর ইউনিয়নে ৩৫টি, দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নে ৩টি, পোমরা ইউনিয়নের ৩টি ও বেতাগী ইউনিয়নে ৩টিসহ ১০৩ ইটভাঁটি রয়েছে। তাছাড়া পুরনো ও নতুন মিলে চলতি বছরে চালু হচ্ছে আরও ২০-২৫টি ইটভাঁটি। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এসব ইটভাঁটিতে বেশিরভাগ ব্যবহার হয় আবাদি জমির ‘টপ সয়েল’ বা ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি। ফলে আবাদি জমির উর্বরতা শক্তি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার কৃষিজমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ। আর এ মাটি সংগ্রহ করতে প্রতিদিন প্রায় চার শতাধিক ট্রাক্টর বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় অধিকাংশ ইটভাঁটির রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা পশ্চিম নিশ্চিন্তাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদেক নগর মাদরাসা, ইসলামপুর তৈয়্যবিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা, সেগুনবাগিচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাকিমনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাণীরহাট মাদরাসা, কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে এসব মাটি গভীরভাবে খননের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রধান এ সড়কটি। ফলে যে কোন সময় ভূমিধসে বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় পার্বত্য জেলার প্রধান এ সড়কটি সৃষ্ট ভূমিধসের কবলে পড়ে সকল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগাম বার্তা বলে দিলেও পরিবেশ অধিদফতরের কোন মাথাব্যথা নেই । তবে ভাঁটির মালিকরা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট হওয়ার সুবাদে মোটা অঙ্কের উৎকোচ প্রদান করে এসব প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাটি খনন কাজ অব্যাহত রেখেছে। একাধিক ইটভাঁটির মালিক স¦ীকার করেছে বেশিরভাগই চলছে অনুমতি বা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া। কৃষিজমিসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে ওঠা এসব ইটভাঁটির কোনটির নেই লাইসেন্স। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি ‘নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩’ অনুযায়ী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বনভূমি, অভয়ারন্য, জনবসতিপূর্ণ ও আবাসিক এলাকায় ইটভাঁটি স্থাপন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এ আইনের যথাযথ কার্যকর করা হলে শতাধিক কেন একটিও ইটভাঁটি স্থাপন সম্ভব হওয়ার কথা নয়। আইনে আরও বলা হয়েছে, ইটভাঁটি স্থাপন ও ইট তৈরি করতে কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, নদীনালা, দীঘি, খালবিল এবং পতিত জমি থেকে মাঠি কাটা যাবে না। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্মিত উপজেলা ইউনিয়ন ও গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহার করে ভারি যানবাহন দিয়ে ইট বা ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ইটভাঁটি তৈরি করতে হলে জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক ইটভাঁটিতে এসব কাগজপত্রের কোনটির সন্ধান পাওয়া যাবে না।
×