ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড ও স্টিকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ নভেম্বর ২০১৭

রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড ও স্টিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হলো আয়কর মেলা ২০১৭। সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত এবারের আয়কর মেলায় তিন হাজার কোটি টাকা আয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবনে আয়কর মেলা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এম এ মান্নান বলেন, ২০১০ সালে এ মেলার যাত্রা শুরু হয়। তখন ৬০ হাজার মানুষ কর সেবা নিয়েছে। আয় হয়েছিল ১১৩ কোটি টাকা। বছর বছর এ মেলার আয় বেড়েছে। গত বছর মেলা থেকে ৯ লাখ ২৮ হাজার মানুষ সেবা নিয়েছে এবং আয় হয়েছে ২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। এবার ৩ হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলে আমরা আশাবাদী। ৮ম বারের মতো আয়কর মেলা হচ্ছে। ক্রমশ করদাতাদের সেবার মান বাড়ানো হচ্ছে। এনবিআর সবসময় করদাতা সেবায় নিয়োজিত। তবে রাজস্ব আহরণে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধু এনবিআরের পক্ষে একা কাজ করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি। জনগণের দেয়া করের টাকার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। এমন এক সময় ছিল যখন আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু এখন দেশের জনগণ কর দিচ্ছে। ফলে আমরা নিজেরাই নিজেদের উন্নয়ন করছি। তিনি বলেন, জনগণ যে কর দেন, সেই টাকা যেন দেশের উন্নয়নে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে রাজস্ব কর্মকর্তাদের। সরকারী কর্মচারীদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে। এ জন্য সর্বাগ্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদিও সর্বোপরি সুবিচার হচ্ছে না বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা সর্বত্র সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। এরপর তিনি মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এফবিসিসিআই-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এনবিআর সদস্য ও মেলার সমন্বয়কারী সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য রাখেন। শেখ ফজলে ফাহিম আয়কর বিষয়ে স্কুলে পড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি বিদেশে পড়াশুনা করেছি। ক্লাস টেনে জেনেছি কীভাবে আয়কর দিতে হবে। আমার পাঠ্যবইয়ে সে বিষয় ছিল। কর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকেই কাজ শুরু করা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-লার্নিং যোগ করতে পারলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যাবে। এতে এফবিসিসিআই সব ধরনের সহযোগিতা দেবেও বলে জানান তিনি। এনবিআর সদস্য ও মেলার সমন্বয়কারী সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের এই মেলার মূল উদ্দেশ্য করদাতাদের উৎসাহী করা এবং সর্বোপরি জনসচেতনতা তৈরি করা। আমাদের বিশ^াস মানুষ পূর্বেও যে কোন সময়ের চেয়ে দিন দিন বেশি সচেতন হচ্ছে তাই মেলার প্রতি আগ্রহও বাড়ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, মেলায় সেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ভবিষতে করদাতাদের জন্য কর সেবার মান আরও বাড়বে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো কর। এ জন্য একটি করবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। নানাভাবে করদাতাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। আমরা আপনাদের সেবায় সর্বদা আছি। আপনাদের করের টাকাতেই দেশের উন্নয়ন হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এবার যে পরিবারের সবাই দীর্ঘদিন ধরে আয়কর দিচ্ছে তাদের পুরস্কার দিচ্ছি। আমরা তাদের ‘কর বাহাদুর’ উপাধি দিচ্ছি। ৮০টির বেশি পরিবারকে এই কর বাহাদুর পুরস্কার দেয়া হবে। এবার আয়কর মেলার বাড়তি আকর্ষণ থাকবে করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড ও স্টিকার প্রদান। এটি এনবিআরের নতুন উদ্ভাবন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন করদাতাদের পিন নম্বর দেওয়ার। যে ট্যাক্স পিন দিয়ে তাদের শনাক্ত করা যাবে। আমরা এ পদ্ধতি চালু করব। এ সময় সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এবার আট বিভাগীয় শহরে সাত দিন, ৫৬টি উপজেলায় চার দিন, ৩৪টি উপজেলায় দুই দিন ও ৭১টি উপজেলায় (ভ্রাম্যমাণ) এক দিন মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার মোট ১৮টি জেলা, দুটি উপজেলাসহ ২০টি স্পটে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে বৃহৎ পরিসরে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করদাতাদের সেবায় আয়কর মেলায় ৩৮টি আয়কর রিটার্ন গ্রহণ বুথ, ২২টি হেল্প ডেস্ক বুথ, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ১টি বুথ, সঞ্চয় অধিদফতরের ১টি, কাস্টমসের ১টি, মূসক বা ভ্যাটের ১টি, কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল ১টি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১টি, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ১টি, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১টি করে বুথ রয়েছে। মিডিয়া সেন্টার, মেডিক্যাল টিমের ১টি বুথ, ই-টিআইএন ৩টি বুথ, বিসিএস কর একাডেমির ১টি বুথ, আইআরডি ১টি বুথ, ট্যাকসেস আপীলাত ট্রাইব্যুনাল ১টি, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইবু্যুনাল ১টি বুথ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, এটুআই, এনআইএলজি ১টি, র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ৪টি, ই-টিআইএন ৪টি, লাইভ টেলিকাস্ট ১টি, কর শিক্ষণ ফোরাম ১টি, নামাজের স্থান, ক্যান্টিন, ফটোকপি, ট্যাক্স আইডি কার্ড ১০টি বুথ, ই-ফাইলিং ৩টি বুথ, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ৯টি বুথ, ই-পেমেন্ট ও কিউক্যাশের ১টি বুথ রয়েছে। এ ছাড়া আয়কর সংক্রান্ত সব ধরনের ফরম বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। করদাতাদের বিনা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধার জন্য রাজধানীর টিএসসি, বেইলি রোড, মিরপুর-২ ও উত্তরা থেকে ১৩টি শাটল বাস নিয়োজিত আছে।
×