ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চিত্রকে আবদুর রাজ্জাকের পাঁচ দশকের শিল্পসম্ভার

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ নভেম্বর ২০১৭

চিত্রকে আবদুর রাজ্জাকের পাঁচ দশকের শিল্পসম্ভার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক এক শিল্পী আবদুর রাজ্জাক। ভাস্কর্য তার শিল্প-জীবনের প্রথম ঠিকানা হলেও পেইন্টিং বা ড্রইংয়েও ছিলেন অনবদ্য। চিত্রকর, ছাপচিত্রকর ও ভাস্কর এই তিন সত্তাকেই ধারণ করেছেন আপন নৈপুণ্যে। ক্যানভাসে খুঁজে নিয়েছেন স্বদেশের রঙিন প্রকৃতিকে। জলরংয়ে যতটাই তরল এই শিল্পী ভাস্কর্যে ঠিক যেন ততটাই দৃঢ়। ছাপচিত্রে পাথর ও ধাতব পাতের আশ্রয়ে এগিয়ে যাওয়া শিল্পীর চিত্রপটও দারুণ ব্যঞ্জনাময়। তার সুনিপুণ রেখা ও গড়নে যেন প্রাণ পায় মনুষ্য অবয়ব। রঙের সঙ্গে বিন্যাসের সমন্বয়ে তার বিমূর্ত ধারার ছবিগুলো বলে যায় নতুন সমীকরণের কথা। আর প্রয়াত এই শিল্পীর শিল্পসম্ভারে সেজেছে ৬ নম্বর ধানম‍ান্ডর গ্যালারি চিত্রক। শিল্পানুরাগীদের অবলোকনের জন্য দারুণ এক সুযোগ করে দিয়েছে প্রদর্শনালয়টি। মঙ্গলবার থেকে এই গ্যালারিতে শুরু হলো দেশের প্রথম প্রজন্মের এই শিল্পীর শিল্পসম্ভারের প্রদর্শনী। বৈভবময় এ আয়োজনে ঠাঁই পেয়েছে আবদুর রাজ্জাক সৃজিত পাঁচ দশকের দুর্লভ শিল্পকর্ম। সেখানে আছে রেখাচিত্র থেকে শুরু করে জলরং, তেলরং, ছাপচিত্র কিংবা ভাস্কর্য। চারুশিল্পের সকল শাখার উপস্থাপনে সজ্জিত হয়েছে নয়নজুড়ানো এ আয়োজনটি। শিল্পীর পরিবারের সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। দেখা মিলেছে ১৯৫০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শিল্পীর অনবদ্য সব কাজ। ১৯৫১ সাল থেকে শুরু করে শিল্পীর প্রয়াণের বছর ২০০৫ সাল পর্যন্ত আঁকা চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। যেদিন শিল্পী মারা যান সেদিনও ক্যানভাসের সংস্পর্শে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। ব্রাশ ও কালিতে ভর করে এঁকেছিলেন শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নেয়া জীবনের শেষ চিত্রকর্মটি। কোদাল ও টুকরির সঙ্গে ক্যানভাসে ধরা দিয়েছে প্রতীকী কবর। গ্যালারির প্রবেশপথের ডান পাশে চোখে পড়ে ১৯৯৮ সালে তেল রঙে আঁকা ছবি। এর পর একে একে নানা রঙের, নানা বর্ণের ভুবনে ভেসে যাওয়ার পালা। যেখানে মূর্ত-বিমূর্ত ধারা চিত্রের পাশাপাশি একে একে দেখা মেলে শহর থেকে গ্রাম। নজরে আসে নারীর নিরাভরণ শরীর থেকে বুড়িগঙ্গার নৌকাবাইচ। একটি ছবিতে উঠে এসেছে ১৯৭৫ সালের রায়ের বাজারের দৃশ্যকল্প। এই ছবির মাধ্যমে বর্তমানের রায়ের বাজার যেন হয়ে ওঠে সাবেক সময়ের হালচিত্র। মুগ্ধ হতে হয় রায়ের বাজার সিরিজের ছবিগুলো দেখে। ১৯৫২ সালের চকবাজারের চিত্র রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। মিশ্র মাধ্যমে আঁকা এই চিত্রকর্মটিও বর্তমান চকবাজারের সঙ্গে মিল খায় না। চোখে পড়ে মন ভাল করে দেয়া বেশ কিছু ল্যান্ডস্কেপ। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে শিল্পীর নিজস্ব প্রতিকৃতি। আছে বিশেষ ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো নিরাভরণ নারীর অবয়ব। শতাধিক ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়েছে মাতৃভূমিকে রক্ষার মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের নানা অঞ্চলের নদ-নদী ও নৌকা। এছাড়া বিভিন্ন চিত্রপটে ধরা দিয়েছে ক্রুদ্ধ ষাঁড় কিংবা উৎসব, হাল চাষ, শীতের সকালের খেজুর গাছ, খেয়াঘাট, ইটের ভাটা, পাহাড়, সুন্দরবন, বাগান, শহুরে জীবনে পায়ে চলা পথসহ বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় বিষয়। তবে বিশেষভাবে মুগ্ধ করে তার দেখা ফুলার রোড, যমুনা নদী, বুড়িগঙ্গা, সিলেট, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ইত্যাদি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ও বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। উপস্থিত ছিলেন আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আসিফ আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক মুনিরুজ্জামান। প্রদর্শনী উপলক্ষে একটি সুদৃশ্য ক্যাটালগ প্রকাশ করেছে গ্যালারি চিত্রক। তাতে ‘রাজ্জাক স্যার’ শিরোনামে রফিকুন নবী ও ‘আবদুর রাজ্জাক : বহুমাত্রিক’ শিরোনামে দুইটি নিবন্ধ লিখেছেন মঈনুদ্দীন নবী। ১২০টি শিল্পকর্মে সাজানো এ প্রদর্শনী চলবে ১৫ নবেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ফরিদা পারভীনের এ্যালবামের প্রকাশনা ও সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে ‘লালন শাহ’র গান’ শিরোনামে প্রখ্যাত লালনসঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীনের নতুন এ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হলো মঙ্গলবার। সেই সঙ্গে শ্রোতারা শুনতে পেল শিল্পীর গাওয়া এ্যালবাম থেকে নির্বাচিত কিছু গান। এই এ্যালবামটির প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী লালন গীতি এবং বাঙালী সংস্কৃতি প্রসারে একটি অনন্য অর্জন। এ্যালবামটির সঙ্গে লালন শাহ এবং ফরিদা পারভীনের ওপর লেখা একাধারে ফরাসী এবং ইংরেজী ভাষায় মুদ্রিত একটি বুকলেট সংযোজিত আছে যার সম্পাদনা করেছেন ফরাসী সঙ্গীততাত্ত্বিক ডক্টর পিয়ের-এলেন বো। বিশ্ব সঙ্গীতে তার অসামান্য অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে রেডিও ফ্রান্স তার এই এ্যালবামটি ‘ওকোরা’ লাবেলের ব্যানারে প্রকাশ করেছে। ‘ওকোরা রেডিও ফ্রান্স’ বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং প্রসারে নিবেদিত একটি ফরাসী সংগঠন। এই এ্যালবামের গানগুলো রেকর্ডিং করা হয়েছে প্যারিস শহরের ‘থিয়েটার দো লা ভিল’ এ। ইউরোপে এই এ্যালবামটির প্রকাশনা যে সকল গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং সমাদৃত হয়েছে, তার মধ্যে আছে বহুল প্রচারিত ফরাসী সাংস্কৃতিক সাময়িকী ‘তেলেরামা’ স্প্যানিশ রেডিও ‘ম্যান্ডফোনিয়াস’, ব্রিটিশ সাময়িকী ‘সংলাইনস’ এবং ইতালিও-সুইস ‘রেডিও টিভি’ । দুই প্রজন্মের কণ্ঠে আব্বাসউদ্দিনের গান ॥ বাংলার লোকসঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদ। গত ২৭ অক্টোবর ছিল তার ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার স্মরণ করা হলো কালজয়ী এই কণ্ঠশিল্পীকে। তার গান শোনা গেল তার পরবর্তী দুই প্রজন্মের কণ্ঠে। ছেলে মোস্তফা জামান আব্বাসী ও নাতনি ড. নাশিদ কামালের কণ্ঠে শুধু তারই গান ছিল না, ছিল নজরুলের গানও। দুই প্রজন্মের গানের এ আসরের আয়োজন করে ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্ধিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি)। আয়োজনের শুরুতে দুই শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক জয়শ্রী কু-ু। অনুষ্ঠানে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। মঞ্চস্থ শ্রুতিনাটক ‘টিনের তলোয়ার’ ॥ প্রতিষ্ঠার এক বছর উদযাপন করল বাচিক শিল্পচর্চা কেন্দ্র কল্পরূপ । ‘নব প্রাণে নব উচ্ছ্বাসে আলোকে আলোকে’ স্লোগানে বর্ষপূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে মঞ্চস্থ হলো শ্রুতিনাটক ‘টিনের তলোয়ার’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে নাটকটির মঞ্চায়ন হয়। উৎপল দত্তের রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাজুমল আহসান তরুণ। নাটক মঞ্চায়নের পূর্বে ছিল আলোচনা পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘টিনের তলোয়ার’ উৎপল দত্তের অন্যতম একটি প্রতীকধর্মী রাজনৈতিক নাটক। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে একটি নাটকের দল কিভাবে ভূমিকা রেখেছিল সে চিত্রই ফুটে উঠেছে এখানে। নাটকে গ্রেট বেঙ্গল অপেরার অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রতিদিনের জীবন কাহিনীই প্রধান আলোচ্য বিষয়। এই সব শিল্পীদের পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, ত্যাগ, সামাজিক অখ্যাতি, থিয়েটারের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, অভিনয়ে মাধ্যমে জ্বলন্ত স্বদেশ প্রেমের আদর্শ প্রচার নাটকে দেখানো হয়েছে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজমুল আহসান তরুণ, শাওন হাসনাত, উম্মে হানী শৈলী, নিলুফার ইয়াসমীন হ্যাপী, কাজী অয়ন, কাজী কোয়েল প্রমুখ।
×