ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপায় ১৭ মাস ধরে ঝুলছে স্কুল ভবনের কাজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

গলাচিপায় ১৭ মাস ধরে ঝুলছে স্কুল ভবনের কাজ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গলাচিপার চর আগস্তি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার কক্ষের দোতলা একাডেমিক ভবনটি ৯ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৭ মাসেও ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। শুধুমাত্র নিচের বেজ ঢালাই দেয়া হয়েছে। তাও মাসের পর মাস ডুবে আছে পানির নিচে। একইভাবে পানিতে ডুবে আছে গ্রেডবিমের রড। এতে একদিকে যেমন নির্মাণ সামগ্রীর টেম্পার কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে একাডেমিক ভবনের অভাবে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সূত্র জানায়, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চর আগস্তি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার কক্ষের দোতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) গলাচিপা উপজেলা কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালের ৫ জুন পটুয়াখালীর ঠিকাদার আখতারুজ্জামান খানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ‘তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর’ আওতায় ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও ২০ ভাগ কম দরে ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকায় প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ঠিকাদার এ কাজ নেন। কার্যাদেশের ৯ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। স্থানীয় এমপি আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন গত বছরের ৫ আগস্ট ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সূত্র আরও জানায়, ঠিকাদার নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য প্রথম দফায় এ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এ সময়ের মধ্যে ১০ ভাগ কাজও হয়নি। অথচ এরই মধ্যে ঠিকাদারকে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেনু আখতার নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেন। নির্মাণ কাজের শুরুতে স্কুল মাঠের মাটি খুঁড়ে কেবলমাত্র নিচের বেজ ঢালাই দেয়া হয়েছে এবং গ্রেডবিমের রড বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। মাসের পর মাস বেজ ও গ্রেডবিমের রড পানির নিচে ডুবে আছে। দীর্ঘ সময়েও কাজের আর কোন অগ্রগতি নেই। এছাড়া, গ্রেডবিম ও বেজে ৬০ গ্রেডের রড ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি। নি¤œমানের রড ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে, স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, একাডেমিক ভবনের অভাবে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা খায়রুন্নেছা সাথী জানান, স্কুলটিতে বর্তমানে ২২৫ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। অথচ শ্রেণীকক্ষ রয়েছে মাত্র তিনটি। ফলে কক্ষের অভাবে পাঠদান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক একেএম কবীরউদ্দিন জানান, ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের খোলামাঠে খেলাধুলার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলের সামনে বেজ ঢালাইয়ের নামে পুকুর কাটা হয়েছে এবং মাঠের অপর খালি অংশে মাটির স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের কোথাও একটু দাঁড়ানোর সুযোগও নেই। ১৭ মাস ধরে ভবন নির্মাণ কাজ ঝুলে থাকার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আতিকুর রহমান তালুকদার জানান, ঠিকাদার দ্বিতীয় দফায় আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। আশা করা যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। যে পরিমান কাজ হয়েছে, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তারচেয়ে বেশি বিল দেয়া হয়েছে জানিয়ে মূল ঠিকাদার আখতারুজ্জামান খান জানান, তার লাইসেন্স ব্যবহার করে রেনু আখতার স্কুল নির্মাণের ঠিকাদারি নিয়েছেন। তিনিও কাজটি শেষ করার জন্য রেনু আক্তারকে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় ঠিকাদার রেনু আক্তার জানান, শীঘ্র্র ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
×