ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

অবশেষে ডুব

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

অবশেষে ডুব

লেখার শিরোনামই বলে দিচ্ছে সিনেমা ‘ডুব’ নিয়ে সবাই কতটা উত্তেজিত! গত হওয়া প্রায় দুইটা বছর বিভিন্ন সময় আমরা ডুবেছি, ‘ডুব’ সিনেমার বিভিন্ন খবরে। মিডিয়া কর্মী থেকে সব শ্রেণীর জনসাধারণ! কিভাবেই না আমরা আকর্ষিত হয়েছি এই সিনেমার খবরে। অবশ্য যথেষ্ট কারণও রয়েছে। পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং সিনেমার গল্প। এই সবগুলো বিষয়ই হচ্ছে আলাদা আলাদাভাবে চমকে যাবার মতো। কারণ একাধিক। বিশেষ করে এই সময়ে কেউ কি ভাবতে পেরেছে সর্বভারতীয় তথা আন্তর্জাাতিক মানের কোন শক্তিশালী অভিনেতাকে আমাদের গল্প ও চিত্রনাট্যে অভিনয় করাবেন! যদিও ‘ডুব’ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র। তারপরও আলোচনা যা হবার তার বেশিটাই আমাদের দেশে! প্রথমত ইরফান খান এই সিনেমার মূল চরিত্র জাভেদ হাসান। তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলে এই লেখা হবে দীর্ঘ। যা পাঠকের জন্য শুভ হবে না। তার থেকে বরং ডুবের অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা ভাল। কিন্তু তারপরও মন বলছে ইরফান খানের এক লাইনের একটা পরিচিতি না লিখলে লেখার শ্রী বৃদ্ধি ঘটবে না। তিনি ‘স্লাম ডগ মিলেনিয়র’ ‘লাইফ অব পাই’ ‘স্পাইডার ম্যান’ ‘ইনর্ফানো’ ‘জুরাসিক ওয়াল্ড’ ‘পান সিং তোমার’ ‘দ্য লাঞ্চ বক্স’ এমন আরও অনেক বিশ্বজয়ী সিনেমার দুর্দান্ত অভিনেতা। বাকিটা না হয় ‘ডুব’ সিনেমার অপেক্ষায়। প্রথম যখন শুনলাম এই ইরফান খান মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর পরিচালনায় অভিনয় করবেন। তখন, বেশ বিস্ময় জেগেছিল পরিচালক কী এমন চিত্রনাট্য লিখেছেন যে ইরফান খানের মতো অভিনেতাকে দিয়ে স্ক্রিন প্লে করাবেন। দেশের অসংখ্য মানুষ এই কৌতূহলে তখনই ডুবে গিয়েছিল! খুব একটা রাখডাক না করেই ফারুকী নিভৃতে এই সিনেমার কাজ শেষ করছিল। কাজের একেবারেই শেষের দিকে অল্প অল্প সরগরম চলছিল প্রায় সব মহলে, কেমন গল্পে নির্মিত হচ্ছে ফারুকীর ডুব সিনেমা! এর কিছু দিন পর ইরফান খান ভারতের এক প্রভাবশালী পত্রিকায় (আনন্দ বাজার ) কথা বলেন, ডুবে তাঁর করা চরিত্র নিয়ে। তারপর থেকে একটু একটু করে খবর রটতে থাকে ফারুকীর ‘ডুব’ প্রয়াত জন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনী নিয়ে নির্মিত। সত্য মিথ্যার বাচ বিচারে না গিয়ে একরকম বাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন প্রায়ত কথা-সাহিত্যিকের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তার প্রচেষ্টায় সেন্সর বোর্ডে সাময়িক আটকা পরে ‘ডুব’ সিনেমা । এ প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শাওন বলেন, এই ছবিতে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের অনেক স্পর্শকাতর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেটাই তার অপত্তির কারণ। আবারও তুমুল আলোচনা টিভি, পত্র-পত্রিকা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশেষে সব ছাপিয়ে আগামী দিন দেশব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ও আলোচিত এই সিনোমা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছবির পরিচালক, অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীরা দিন-রাত এক করে প্রচার অভিযানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের সকলের একই প্রচেষ্টা দেশ বিদেশের অসংখ্য দর্শক হলের মধ্যে এক রকম পানি ছাড়াই ডুবাবেন! হতে পারে সেটা বিষাদেরও! সম্প্রতি, সিনেমা প্রসঙ্গে ফারুকী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ছবিটা দেখে বের হওয়ার সময় চরিত্রগুলো জন্য মায়া হবে, মন উদাস হবে, বিষণœ হবে। অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে, বুকের ভেতর বয়ে চলে পাহাড় নামের নদী, আহারে জীবন আহা জীবন। অতি সম্প্রতি ছবির প্রচারণায় কলকাতা যান পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী। সেখানে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পত্রিকায় ডুব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। প্রশ্ন কর্তা তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘ডুব’ কী হুমায়ূন আহমেদের ছায়া জীবনী? পরিচালক সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, এটা তাঁর বায়োপিক না, তবে কেউ যদি সিনেমা দেখে মনে করেন গল্পের সঙ্গে তাঁর জীবনের মিল আছে তা হলে আছে। আর কেউ যদি দেখে মনে করে মিল নেই তাহলে নেই। অগণিত পাঠক তাঁর এই সাক্ষাতকার পড়েছেন কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে এক হতে পেরেছেন কিনা অনিশ্চিত। অবশ্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মিলে যাবে এমন ধাঁধা জড়িত প্রশ্নের উত্তর। তবে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এই সিনেমা। প্রশংসিত হয়েছে, পুরস্কৃত হয়েছে এবং বিশ্বসেরা পত্র-পত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও ছাপা হয়েছে। সেসব চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের বিবেচনা। সাধারণরা কীভাবে নেবেন এই সিনেমা! এমন গুরুতর প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা অতি সত্তর মিলে যাবে। ডুব প্রিমিয়ার ২৬ অক্টোবর কলকাতায়। অবশ্য কলকাতায় কেন? এমন হেতুর উত্তর পরিচালক তাঁর ফেসবুক এ্যাকাউন্টে সুন্দর করে লিখেছেন, ‘ডুব’ বা নো বেড অফ রোজ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার একটি ছবি। ছবির চারজন প্রধান অভিনয় শিল্পীর মধ্যে দুইজনই ভারতের। ছবির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার বাংলাদেশের। শূটিং হয়েছে বাংলাদেশে। মহরত বাংলাদেশে। এখন ভারতীয় প্রযোজক সংস্থা এস কে মুভিজ থেকে প্রশ্ন করেছেন প্রিমিয়ারও কি বাংলাদেশে হবে? পরিচালক এ প্রশ্নের উত্তর কোন রকম না দিয়েই সরাসরি কলকাতায় প্রিমিয়ারের আয়োজন করেছেন। রোকেয়া প্রাচী, নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং ভারতের পর্ণো মিত্র এই সিনেমার পর্দা অলঙ্করণ করেছেন। তবে, জাভেদ হাসানের চরিত্রে ইরফান কেন এমন কৌতূহলী প্রশ্নে পরিচালক বলেছেন, এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার সময় আমি অদ্ভুত অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করেছি। আমি চোখ দিয়ে সবকিছু উপলব্ধি করি। এই চরিত্রটা লেখার সময় ইরফান খানের চোখ দুটো বার বার ভেসে উঠেছে। তা হলে বোঝাই যাচ্ছে গল্পের প্রয়োজনে এই শক্তিমান অভিনেতা কতখানি প্রাসঙ্গিক। গল্পও নিশ্চই তার মতোই প্রাসঙ্গিক! আপতাত এমনটাই প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের অপেক্ষায় থাকা অগণিত দর্শকদের!
×