ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রীর নির্দেশের পরও কাজ হয়নি

যশোরের পাঁচ সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

যশোরের পাঁচ সড়ক বেহাল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আড়াই মাস আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলার পাঁচটি জাতীয় সড়ক চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও ওই সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি সড়ক বিভাগ। কবে নাগাদ চলাচলের উপযোগী হবে, তা বলতে পারছে না কেউ। যদিও যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, এ বছর বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে যশোরের পাঁচটি জাতীয় সড়কসহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে রাস্তাগুলি মেরামত করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। জাতীয় সড়কগুলো হলো যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা ও যশোর-নড়াইল। এছাড়া রাজারহাট, মনিরামপুর, কেশবপুর, চুকনগর, কেশবপুর-সরষকাঠি-কলারোয়া সড়ক এবং পালবাড়ি-দড়াটানা-মনিহার হয়ে মুড়লী পর্যন্ত সড়কগুলো ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস থেকে মনন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়ক ৩৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে চাঁচড়া মোড়, মুড়লী, রাজঘাট, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া ও ভাঙ্গাগেট পর্যন্ত বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যশোর-বেনাপোল সড়কের ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে পুলেরহাট থেকে নাভারণ মোড় পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটির এমন অবস্থা যে, গাড়ি চলে ঝুঁকি নিয়ে। যশোর থেকে বেনাপোল যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগলেও রাস্তা খারাপের কারণে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত। যশোর-মাগুরা সড়কের ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কদমতলী, পুলেরহাট থেকে লেবুতলা বাজার ও রজনীগন্ধা পাম্প পর্যন্ত সড়ক বেহাল এবং যশোর-নড়াইল সড়কের ২০ কিলোমিটার সড়কে মনিহার থেকে হামিদপুর অংশের পুরোটাতেই অসংখ্য বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, যশোর-খুলনা সড়কের মনিহার থেকে বকচর মুড়লী পর্যন্ত সড়কে বড় ধরনের ঢিবি তৈরি হয়েছে, যে কারণে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি। ইতিপূর্বে সংস্কারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়কটিতে কাটছে না দুর্ভোগ। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তার মাটি পরীক্ষা করেও কোন সুফল পায়নি। আবারও মাটি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে এ বিভাগ। প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে খুলনা, ঢাকা, কুষ্টিয়াসহ আঞ্চলিক রুটের বাস-ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু মনিহার-মুড়লী পর্যন্ত সড়ক চলাচলের চরম অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। কারণ রাস্তার মাঝের অংশ ফুলেফেঁপে উঁচু ঢিবিতে পরিণত হয়েছে, যাতে গাড়ির নিচের অংশ বেধে যাচ্ছে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। গত আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যশোর সার্কিট হাউসে এসে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি সময় দেন ১০ দিনের মধ্যে সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে হবে। কিন্তু যশোর সড়ক বিভাগ আড়াই মাসেও যশোরের পাঁচটি জাতীয় সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি। যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা অংশে বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে যোগাযোগ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। মহাসড়কের যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া, পুলেরহাট ও ঝিকরগাছা উপজেলার সেতুর দুই পাশে আমদানি ও রফতানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবহনের তীব্র যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে নাভারণ মোড় পর্যন্ত ওই মহাসড়কের ২৩ কিলোমিটারে ওভারলে (বিটুমিনের আস্তরণ) সংস্কারকাজ করা হয়। নিম্নমানের পাথরের কুচি ও বিটুমিনের কারণে সংস্কারের এক বছর না যেতেই মহাসড়কের ওই অংশের কয়েকটি জায়গার বিটুমিন উঠে বেহাল হয়ে যায়। যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকায় রাস্তার মাঝে অর্ধেক অংশ কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কালভার্টের দুই পাশে অন্তত আধাকিলোমিটার সড়ক ভাঙ্গাচোরা। এখান থেকে এক মিলোমিটারের মতো দূরত্বে পুলেরহাট বাজার এলাকায় সড়কের অর্ধেকটা বন্ধ করে শ্রমিকরা ইট বিছানোর কাজ করছেন। সড়কের একপাশ দিয়ে ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণে যানবহন চলাচল করছে। ওই অংশটুকু পারাপারের সময় এক প্রান্তের যানবহন আটকে অন্য প্রান্তের যানবহন পার হতে সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গা অংশের দুই পাশে তীব্র যানজট ও জনজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এখান থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটারের মধ্যে গোটা সড়কে বিটুমিনের আস্তরণ উঠে বেহাল হয়ে গেছে। ঝিকরগাছা উপজেলা সদরে কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মিত সেতুর দুই পাশের অন্তত আধাকিলোমিটারজুড়ে অত্যন্ত বেহাল অবস্থা। দুই পাশেই বিটুমিনের ওপর ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সেতুর পাটাতন ফেটে গেছে। যে কোন সময় পাটাতন ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে যানবহনের চালকরা ধীরে ধীরে সেতু পার হচ্ছেন। এতে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
×