ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সেমিনারে জয়

পদ্মা সেতুতে না আসতে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেছিলেন ইউনূস

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

পদ্মা সেতুতে না আসতে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেছিলেন ইউনূস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেছিলেন। পদ্মা সেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতা হয় এখন সেই ফাঁদেই তাদের পা আটকে গেছে। তখন বিশ্বব্যাংক যাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিল এখন তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্র যতই করেন না কেন কোন কিছুতেই পদ্মা সেতু আটকে থাকেনি। নিজেদের টাকায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সোমবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘সুচিন্তা ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘রাজনীতিতে সত্য-মিথ্যা: পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ কথা বলেন। বিএনপির নাম উল্লেখ না করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, মানুষের ভালবাসা ছাড়া কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। তাই শত শত মিলিয়ন ডলার কামিয়ে তারা (বিএনপি) ক্ষমতা কিনতে পারেনি। তারা বরাবর ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। এখনও তারা সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বারবার অপপ্রচার চালিয়ে সরকারকে জনগণের কাছে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন করেছে। দেশ ও দেশের জনগণকে ভালবাসে। তাই কোন ষড়যন্ত্রই কাজে লাগছে না। আমরা দেশকে অনেক এগিয়ে নিতে পেরেছি। এখন আর আমাদের বিদেশীদের ওপর ভরসা করতে হবে না। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এ আরাফাত। সেমিনারে জয় বলেন, নিজের দেশকে যারা ছোট করে দেখে তারা কখনও দেশের ভাল চায় না। আমাদের দেশে সুশীল সমাজ রয়েছে, তাদের মুখে কোনদিন শুনেছেন বাংলাদেশের প্রশংসা। শোনেননি। কারণ তারা নিজের দেশকে নিচে নামাতে পারলেই যেন বড় হয়ে যান। সব সময় তাদের মুখে সমালোচনা শুনবেন। নিজের দেশের প্রতি ভালবাসা না থাকলে দেশের মানুষের প্রতিও ভালবাসা থাকে না। আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছে যে, আমরা এখন কারও চেয়ে কম নয়। আমরা এখন আত্মনির্ভরশীল জাতি। বিদেশীদের প্রভু মানার দিন শেষ হয়ে গেছে। সরকার দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন কর্মকা- ও জীবন মানের উন্নয়ন করেছে তা আমাদের বারবার বলতে হবে। তারা অপপ্রচার করে সরকারের সব অর্জন ম্লান করার যে চেষ্টা করছে তাতে আমাদের উন্নয়নের কথা বারবার বলতে হবে। এতে তাদের মিথ্যা অপপ্রচার ঢাকা পড়ে যাবে। মিথ্যার মোকাবেলা করতে হলে উন্নয়ন কর্মকা- জোরগলায় তুলে ধরতে হবে। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কে ভাল আর কে খারাপ। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচার শুরু হলে তাদের মিথ্যা কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। পদ্মা সেতু নিয়ে ইউনূসকে দিয়ে যে ষড়যন্ত্র করানো হয় তা এখন মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমাকেও জড়ানো হয়েছিল। আমেরিকার এ্যাম্বাসি আমাকে দুই বার হুমকি দিয়েছে, তোমার বিরুদ্ধে আমরা অডিট করব। আমি তখন জোর গলায় বলেছি, করো। তবে কিছু পাবে না। সৎ থাকলে জোর গলায় বলা যায় আর অসৎ হলে মাথা নিচু করে থাকতে হয়। পার্থক্যটা এখানেই। এখন সেই আমেরিকা প্রমাণ পেয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক যাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল সেই কর্মকর্তাই এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। তিনি দুদকের চেয়ারম্যানকে হুকুম দিয়েছিলেন, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করার। দুদুকের চেয়ারম্যান যেন তার গোলাম। সেই সময় দুদকের চেয়ারম্যান তাকে বলে দিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। অতএব তাদের গ্রেফতার করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জয় বলেন, আমরা বিদেশীদের ওপর কখন থেকে নির্ভরশীল হলাম। যখন ’৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তখন থেকে আমরা বিদেশীদের গোলাম হয়ে যাই। তারা যা বলে তাই করি। কিন্তু এখন দিন বদল হয়েছে, এখন কিছু বলার আগে ৭ বার চিন্তা করতে হয়। আমরা অঙ্ক করে দেখিয়ে দিয়েছি নিজেদের টাকায় কী করে পদ্মা সেতু করতে হয়। তারা নিজেরাই এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভালবাসতে জানে। ভালবাসা দিয়ে আমরা মানুষের মন জয় করতে পেরেছি। কোন ষড়যন্ত্র করে নয়। তারা (বিএনপি) যখনই কোন অস্বাভাবিক সরকার আসত তাদের সঙ্গেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এখনও দেশে-বিদেশে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। কিন্তু কোন লাভ হবে না। ১/১১ সময়ও তারা ষড়যন্ত্র করেছিল। সেই ষড়যন্ত্রে তারা কিছু করতে পারেনি। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে। দেশের প্রতি ভালবাসা আছে। তথাকথিত সুশীল সমাজের মতো ভালবাসা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার চলে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে-ভবিষ্যতে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। আজ যারা উন্নত দেশ একদিন বিশ্ববাসী আমাদেরও সেই সব দেশের সঙ্গে নাম বলবে। দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি বছরের বাজেট দেখলেই বোঝা যায়। প্রতি বছর বাজেটের আকার বেড়েই যাচ্ছে। এই বাজেট জনগণের কল্যাণে দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। সেমিনারে অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পে বড় বাধা থাকে ভূমি অধিগ্রহণ। সেটা সৈয়দ আবুল হোসেনই অনেকটা এগিয়ে রেখেছিলেন। পদ্মা সেতুর অভিজ্ঞতায় ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক নিম্নমানের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা ফিরিয়ে দেয়। সেখান থেকেই ষড়যন্ত্রের শুরু। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ঘটনাগুলো থেকেই আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক এ আরাফাত বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে মানুষের যে অভিজ্ঞতা তা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র, ষড়যন্ত্র, সুশাসন, দুর্নীতির মতো বিষয়গুলোকে বিচার করতে হবে।
×