ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

একযোগে ৩০ চৌকিতে হামলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন

আরসার হামলা নিয়ে বিদেশী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সন্দেহ

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২১ অক্টোবর ২০১৭

আরসার হামলা নিয়ে বিদেশী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সন্দেহ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রকৃতপক্ষে হামলা চালিয়েছিল কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বেশ কয়েকটি বিদেশী মিশনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। আরসার একযোগে ৩০ চৌকিতে হামলার সামর্থ্য রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিদেশী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই প্রশ্ন উঠে এসেছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী কূটনৈতিক মিশনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্ক মিশনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা এই বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে মুখ খোলেননি। বৈঠক সূত্র জানায়, বিদেশী মিশনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সামনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পুশ ইন করে চলেছে। ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এছাড়া মিয়ানমার বাংলাদেশের আকাশসীমা বেশ কয়েকবার লঙ্ঘন করেছে বলেও তাদের জানানো হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন বিদেশী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা আরসার হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২৫ আগস্ট আরসা যে হামলা চালিয়েছে, সেটা আদৌ তাদের হামলা কিনা এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, আরসার হাতে যে ধরনের অস্ত্র দেখা গেছে, সেটা নিয়ে এই ধরনের হামলা চালানো সম্ভব কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে। সেখানের প্রায় ৩০ চৌকিতে এই হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আরসার রয়েছে কিনা এ বিষয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আরসা নিয়ে বিদেশী প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুললে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আরসার হামলার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার থেকে যেটা বলা হয়েছে, সেটা এখনও যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি। হামলার বিষয়ে মিয়ানমারের দাবি অতিরঞ্জিতও হতে পারে বলে জানানো হয়। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে। কোন ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গীগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ কখনোই প্রশ্রয় দেবে না। সূত্র জানায়, ২৫ আগস্ট সশস্ত্র হামলার পর মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ হামলার জন্য মিয়ানমারের সরকার দোষারোপ করছে আরসা নামে একটি সংগঠনকে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরেও রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়ির ওপর হামলার ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছিল এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ রকম সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা আগেও শোনা গেছে, কিন্তু এই সংগঠনটির নাম এর আগে কেউ শোনেননি। মিয়ানমারের সরকারের দিক থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা ধারাবাহিকভাবে যে বৈষম্য-অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, এর ফলে তাদের অনেকে এখন সশস্ত্র জঙ্গী মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আগে ইংরেজীতে ফেথ মুভমেন্ট নামে তাদের তৎপরতা চালাত। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ছিল ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ নামে। মিয়ানমারের সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে। মিয়ানমারের দাবি, এই গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা জিহাদীরা, যারা বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তবে সংগঠনটি কত বড়, এদের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, তার কোন পরিষ্কার ধারণা তাদের কাছেও নেই। মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ধারণা, এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছে ‘আতাউল্লাহ’ নামে একজন রোহিঙ্গা। তার জন্ম করাচীতে। তিনি বড় হয়েছেন সৌদি আরবে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অবহিত করার জন্য বেশ কয়েকবার ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিকদের নিয়ে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশী মিশনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
×