ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে প্রতারিত হেলাল এখন স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

বিদেশে প্রতারিত হেলাল এখন স্বাবলম্বী

শিক্ষিত বেকার যুবক হেলাল উজ্জামান ফকির। চাকরি খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টার পর পাড়ি জমায় বিদেশে। সেখানেও প্রতারিত হয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসেন দেশে। দেশে ফিরে হতাশা ঝেড়ে ফেলে দেশের মাটিতে সোনা ফলাবার উদ্যোগ নেন। শুরু করেন বিভিন্ন মাছ ও সবজি চাষ প্রকল্পের দিকে। রাসায়নিক সার মুক্ত সবজি ও গ্রোথ হরমোন ছাড়াই মাছ চাষ করে এখন হেলাল উজ্জামান ফকির সফলতায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। জানাগেছে,বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেলাল উজ্জামান ফকির। তিনি মজিবর রহমান ফকিরের ছেলে। হেলাল উজ্জামান তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে বারইখালী ইউনিয়নের চৌধুরী কাছারিবাড়ি এলাকায় ২০১৪ সালে ২ একর এবং ২০১৫ সালে সাড়ে ৪ একর জমি লিজ নেয়। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ও মাছ চাষের জন্য পুকুর ও সবজি চাষের জন্য জমি তৈরির কাজ শুরু করেন ‘ঝিদনি মৎস্য চাষ প্রকল্প-১ ও ২ নামে দু’টি প্রকল্প। প্রকল্প দুটির জমির দুই পুকুর পাড়ের জমিতে পেঁপে, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, বরবটি, বেগুন, শসা, খিড়াই, টমেটো, বাঙ্গি, মরিচ, ঢেঁড়স, পালং শাক, করল্লা, মালঞ্চ, লালশাক, ডাঁটা শাখ, চাষ কলমিসহ নানা প্রজাতির সবজির চাষ করে। এসব চাষে মাটির উর্বরতার জন্য জৈব সার প্রয়োগ করেন। তিনি কোন সবজিতে কীটনাশক কিংবা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। যার কারণে পাইকারি, খুচরা গ্রাহক ও গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের লোকজন তার প্রকল্পে এসে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করেন। পার্শ্ববর্তী পুকুরে চাষ করা হয়েছে দেশী শিং মাছ ২ লাখ, ১ লাখ ২০ হাজার মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ মিশ্র কার্প জাতীয় মাছ্ । সফল চাষী হেলাল উজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে এবছর ৫ মেট্রিক টন তেলাপিয়া, ২ মেট্রিক টন রুই, ৫ শ’ কেজি পাঙ্গাস মাছ ৮ লাখ টাকা ও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করা হয়েছে। এখনও ২টি প্রকল্পে বিক্রির অপেক্ষায় ১৫ মেট্রিক টন মাছ মজুদ আছে। ফাল্গুন মাসে এসব মাছ বিক্রি হবে। উপজেলা কৃষি অফিস হেলাল উজ্জামানের এই প্রকল্পে ১০ ওয়ার্ডের সোলার সিস্টেমের পোকা দমনের আলোর ফাঁদ প্রদান করেন। হেলাল উজ্জামান পোকা দমনে সেক্স ফ্রেমন ফাঁদ ব্যবহার করেন। উপজেলা কৃষি ও মৎস্য কর্মকর্তা এ প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দেন। ৪ কর্মচারী মাসিক ৫ হাজার টাকা করে বেতনে তার প্রকল্পে সার্বক্ষণিক তদারকি করেন। এ প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় ইয়ন এগ্রো গ্রুপের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মো. খায়রুল ইসলাম ও সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার নেপাল হালদার প্রতি মাসে ২বার তার প্রকল্পের মাছের ও সবজির রোগ বালাইয়ের নাসিং ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জমি চাষের জন্য তাকে বিনামূল্যে ইরি বীজও ধান প্রদান করেছে। বর্তমানে পতিত জমিতে ইরি চাষের কার্যক্রম চলছে। হেলাল উজজামান বলেন, প্রতিবছর তার এই প্রকল্প থেকে খরচ বাদে ৫-৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার আর্থিক সহায়তা পেলে তার প্রকল্পের উন্নয়ন এবং নতুন প্রকল্প করে অত্র এলাকার দেশীয় প্রজাতির মাছ, শাক সবজির চাহিদা পূরণ করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব। তার এ প্রকল্পটি বেকার যুবকদের উৎসাহী করে তুলবে বলে সফল চাষী হেলাল উজ্জামান ফকির আশা করেন। মোড়েলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা পাওয়া যায়। তারই উদাহরণ যুবক হেলাল উজ্জামান ফকির। -বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে
×