ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা

লৌহজং উপজেলার পুকুর ভরাট করছেন ভাইস চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১১ অক্টোবর ২০১৭

লৌহজং উপজেলার পুকুর ভরাট করছেন ভাইস চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ লৌহজং ভরাট করা হচ্ছে উপজেলা পরিষদ সাবেক কমপ্লেক্সের পুকুর। কিন্তু কি কারণে, কার নির্দেশে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে তা জানে না কেউ। খোদ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির বেপারির নেতৃত্বে এই পুকুর ভারাট করা হচ্ছে। এতে উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা যায়, পুকুরটিতে মোট জায়গার পরিমাণ ১ একর ৪০ শতাংশ। সরকারী হিসেবে পুকুরটির জায়গার মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর বেসরকারীভাবে এটির মূল্য অনেক বেশি। পরিত্যক্ত এই পুকুরটির দিকে স্থানীয় প্রভাবশী মহলের দৃষ্টি দীর্ঘদিনের। তারা এটিকে ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করে এখান থেকে মোটা অংকের টাকা বাণিজ্য করার পরিকল্পনা করছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু পুকুরটি উপজেলা পরিষদের নিজস্ব সম্পত্তি হওয়ায় প্রভাবশালীরা এটি দখলের পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। গত কয়েকদিন ধরে এই পুকুরটি ভরাট করতে শুরু করেছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেপারি। পুকুরটির পাশে থাকা দোকানিরা জানিয়েছেন. তাদের বলা হয়েছে পুকুরটি ভরাট করে এখানে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। তবে তারা নতুন মার্কেটে দোকান নিতে চাইলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের দোকান দেয়া হবে। কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ নাজমুল হেসেন জানান, শুনেছি পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। মোদি দোকানি রাজন দাস, সেলুন দোকানি কানন শীল, চায়ের দোকানদার মোঃ সিরাজ ঢালী একই কথা বললেন। এদিক উপজেলার একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পুকুরটি কি কারণে ভরাট করা হচ্ছে তা তারা জানেন না। নিয়ম হচ্ছে এ ধরনের কোন প্রকল্প হাতে নিতে হলে তা উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় পাস করাতে হয় কিন্তু এ পুকুরটি ভরাটের ব্যাপারে এ ধরনের কোন আলাপই করা হয়নি উপজেলা মাসিক সভায়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির বেপারি জানান, পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে না। তাছাড়া এখানে কোন মার্কেটও নির্মাণ করা হবে না। আমি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এখানে কিছু বালু রাখার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউএনও বরাবরে পুকুরটি কয়েক মাস ব্যবহারের জন্য আবেদন করেছি। কাজ শেষ হলেই পুকুরটি খালি করে দেয়া হবে। কনকসার ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, পুকুরটি কি কারণে ভরাট করা হচ্ছে তা আমি জানি না। কাউকে ব্যবহারের অনুমতি দিলে তা নিয়ে উপজেলা মাসিক সভায় আলোচনা করে সকলের মতামত নিয়ে দেয়া যেতে পারত। ইতিপূর্বে কয়েকজন পুকুরটি ব্যবহারের জন্য আলাপ করলেও তাদের ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি। এখন কার স্বার্থে এটা করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। পুকুর সংলগ্ন রয়েছে লৌহজং-টেউটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। যা সাবেক অফিসার্স ক্লাবে কার্যক্রম চলছে। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি পুকুরটি ভরে এখানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন করতে চেয়েও তা পাননি। তবে এখন কিভাবে কার জন্য এটি ভরাট করা হচ্ছে তা তিনি কিছুই জানেন না। উপজেলা ভূমি অফিসে খবর নিয়ে জানা যায়, পদ্মার ভাঙনে ঘোরদৌড় বাজার সংলগ্ন সাবেক উপজেলা কমপ্লেক্সের একাংশ নদীতে চলে যায়। ২০০৬ সালের দিকে এখান থেকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স সরিয়ে নিলে পুকুরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। বছর বছর পলি পড়ে পুকুরটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। পুকুরটি ধরন পরিবর্তন করে জমিতে রূপান্তরের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা ভূমি অফিস হতে ম্যাপ সংশোধনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন জানান, পুকুরটি ভরাটের ব্যাপারে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে একবার জানিয়েছিলেন পুকুরটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এটি নিয়ে কিছু করা যায় কিনা তা দেখা দরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদার জানান, এখানে অন্য কিছু করার পরিকল্পনা নেই। তবে ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বেপারি পুকুরটিতে বালু রাখার জন্য কয়েক মাস ব্যবহারের জন্য আবেদন করেছেন।
×