ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুক বিল্ডিংয়ে আসা কোম্পানি লেনদেনের প্রথম দিনেই সার্কিট আরোপের দাবি

আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের পোয়াবারো

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১০ অক্টোবর ২০১৭

আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের পোয়াবারো

অপূর্ব কুমার ॥ বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আমরা নেটওয়ার্কের নিলামে (বিল্ডিংয়ে) যোগ্য বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৪১ টাকা হাঁকিয়েছিল। তবে একই কোম্পানির শেয়ার দর সেকেন্ডারি বাজারে এসে প্রায় ১৪০.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে সোমবারে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির শেয়ার নিলামের চেয়ে ২৫৪ শতাংশ বেশি দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। এই কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে নিলামে অংশগ্রহণকারীরা। তবে নিয়মিত বাজারে এই অতিমূল্যায়নের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারী ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ, নিলামে অংশগ্রহণকারীদের ৫০ শতাংশ প্রথম দিন থেকেই বিক্রিযোগ্য হয়ে থাকে। বেশি দর বাড়ার কারণে নিলামে পাওয়া শেয়ার উচ্চমূল্যে বাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে ধরিয়ে দেয়। ফলে নতুন করে যারা শেয়ার কেনে তারা প্রচ- বিনিয়োগ ঝুঁকিতে থাকে। এদিকে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার দর কোন কারণ ছাড়াই বাড়ছে বলে সতর্কীকরণ তথ্য প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। রবিবার ডিএসইর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির শেয়ার দর মুনাফার তুলনায় এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে উঠে গেছে। ৭ অক্টোবর তথ্যানুযায়ী, কোম্পানিটি থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে ৪৩ বছর সময় লাগবে। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে প্রথম দিন থেকেই সার্কিট আরোপের প্রয়োজন। কারণ নিলামে অংশগ্রহণকারীদের বরাদ্দ পাওয়া শেয়ারের ৫০ শতাংশের লক ইন থাকায় তারা উচ্চ দর হাঁকিয়ে শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেন। আমরা নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও সর্বশেষ এমনটি ঘটেছে। ৩৫ টাকার আইপিওতে আসা শেয়ার প্রথম দিনেই ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছিল। লক ইন না থাকায় নিলামে অংশগ্রহণকারীরা বড় ধরনের মুনাফা করে নেয় প্রথম দিনেই। এর আগে আমান ফিড, একমি ল্যাবরেটরিজের মতো কোম্পানির প্রথম দিনের দর শেয়ার পর্যন্ত টিকে থাকেনি। সবশেষে লোকসানে পড়েছে শেষ পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীই। এই কারণে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসা শেয়ার প্রথম দিন থেকেই দর ওঠা-নামার ওপর সার্কিট আরোপের দাবি বাজার সংশ্লিষ্টদের। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ৪৩ মূল্য আয় অনুপাত (পিই) অনুযায়ী আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার দর অনেক বেশি এবং ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। যে দর স্থায়ী হবে না। ফলে সবশেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীই লোকসানের কবলে পড়বে। বিএসইসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, যোগ্য বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৪১ টাকা মনে করলেও সাধারণ বিনিয়োগকারী যদি ১৪৫ টাকাকে ভাল মনে করে, তাহলে কারও কিছু করার নেই। এছাড়া তাদেরকে তো আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কিনতে কেউ বাধ্য করছে না। তাই ভবিষ্যতে খারাপ করলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাঁধেই পড়বে তার দায়ভার। শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, যোগ্য বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ ৪১ টাকা দর হাঁকানো শেয়ার ১৪৫ টাকায় লেনদেন হওয়া কোন স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। তা না হলে, যোগ্য বিনিয়োগকারীদের নিলামের তুলনায় এত বেশি দর হতে পারত না। পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ অনুযায়ী, কোম্পানির নিলামে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কোন সুযোগ নেই। নিলামে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিচার-বিশ্লেষণ করে সঠিক দর নির্ধারণ করবে এ লক্ষ্যেই এমনটি করা হয়েছে। দেখা গেছে, আমরা নেটওয়ার্কে ২৭২ জন নিলামে অংশগ্রহণকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৪ জন ১৫ টাকা দরে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কিনতে আগ্রহী। তারা ১৫ কোটি ২ লাখ শেয়ার ২২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কিনতে চায়। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ জন ৩৫ টাকা দরে ৭০ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহ দেখায়। এছাড়া নিলামে অংশগ্রহণকারীরা সর্বনিম্ন ১২ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪১ টাকা দরে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার কেনার জন্য নিলামে অংশ নেয়। অন্যদিকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বা নিয়মিত বাজারে প্রথম দিনেই ২ অক্টোবর আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারের সমন্বয় মূল্য দাঁড়ায় ১৩৮.৪ টাকায়; যা ৩ অক্টোবর ১২৯.৫ টাকায়, ৪ অক্টোবর ১৪২.৪ টাকায় ও ৫ অক্টোবর ১৪৪.৫ টাকায়। অর্থাৎ ১ম দিনে ২৫৫ শতাংশ দর বেড়েছিল। এরপরে কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় ৩ অক্টোবর ২৩২ শতাংশ, ৪ অক্টোবর ২৬৫ শতাংশ ও ৫ অক্টোবর ২৭১ শতাংশ বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায়। আমরা নেটওয়ার্কের নিলামেযোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার বরাদ্দ রাখা হয়; যা তাদেরকে কাট-অফ প্রাইস ৩৯ টাকা দরে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে তারা ৫০ শতাংশ শেয়ারে কোন লক-ইন নেই। বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশের জন্য ৩ মাস ও ২৫ শতাংশের জন্য ৬ মাস লক ইন থাকবে। এদিকে লেনদেনের প্রথম দিনেই নিলামে যদি তাদের ১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বা ৫০ শতাংশ বিক্রি করে, তাহলে ৪৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা করা সম্ভব। আর ৩ অক্টোবর বিক্রি করলে ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ৪ অক্টোবর ৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ও ৫ অক্টোবর ৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মুনাফা করা সম্ভব। এই মুনাফা অর্জনের জন্য নিলামে বিনিয়োগ করে খুব বেশিদিন ধৈর্য ধরতে হয়নি। এক্ষেত্রে বিডারদের চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিল্ডিং অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ২০ শতাংশ ও বাকি ৮০ শতাংশ ৬ আগস্ট আইপিও আবেদন শুরু হওয়ার আগে জমা দিতে হয়েছে।
×