ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিপন্ন মানবতার বাতিঘর হাসিনা আজ ফিরছেন

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৭ অক্টোবর ২০১৭

বিপন্ন মানবতার বাতিঘর হাসিনা আজ ফিরছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুনিয়ার বিপন্ন মানবতার বাতিঘর হয়ে আজ শনিবার দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর তাকে বিপুল নাগরিক গণসংবর্ধনা জানানো হবে। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সুদীর্ঘ রাস্তার দু’ধারে লাখো মানুষের ঢল নামিয়ে করতালি, স্লোগান ও পুষ্পবৃষ্টি ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনার জন্য বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত ১২টি স্পষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্পটে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম ও সমমনা সংগঠনের নেতারা কর্মসূচীর নেতৃত্বে থাকবেন। স্থ’ানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিআইপি ফ্লাইটটি (বিজি-০০২) লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে বিদায় জানান। ফ্লাইটটি আজ শনিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এবার জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এছাড়া রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তার পদক্ষেপ জাতিসংঘে প্রশংসিত হয়েছে। এ কারণে দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানানোর অংশ হিসেবে ঢাকাকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সাজানো হয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে। জানা গেছে, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা ও বরণ করে নেবেন। আর ঢাকা মহানগর ও অন্যান্য পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেবেন। এরপর গণভবনে যাওয়ার পথে সড়কের দু’পাশে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে ও সেøাগানে তাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। গণভবনে পৌঁছার পর সেখানে সঙ্গীতশিল্পী, লেখক, আঁকিয়ে, অভিনয়শিল্পীরা প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করবেন। গণসংবর্ধনাকালে জনদুর্ভোগ যাতে না হয় সে জন্য দলীয় নেতারা বিষয়টি মনিটর করবেন। ১৪ দলের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে সংবর্ধনা। সংবর্ধনার প্রস্তুতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি থাকবে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। দলের পক্ষ থেকে আমরা ইতোমধ্যেই সকল সহযোগী সংগঠন এবং সকল নেতাকর্মীদের অনুরোধ করেছি যে, তারা যেন রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থেকেই শুভেচ্ছা জানান, কেউ যাতে রাস্তার মধ্যে না দাঁড়ান এবং এতে যানজট তৈরি না হয়। ইতোমধ্যে দলের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি। সংবর্ধনা সফল করার লক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে পৃথক পৃথক প্রস্তুতি সভা করেছে আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর থেকে হোটেল রেডিসন পর্যন্ত, হোটেল রেডিসন থেকে কাকলী পর্যন্ত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কাকলী থেকে মহাখালী-জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীর গেট থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত আওয়ামী যুবলীগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের নেতাকর্মীরা অবস্থান গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাই তিনি দুনিয়ায় বিপন্ন মানবতার বাতিঘরে পরিণত হয়েছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে সাফল্যের সঙ্গে যোগদান করেছেন। তাই তাকে গণসংবর্ধনা জানানো হবে। তাকে বরণ করার জন্য আওয়াম লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে স্ব স্ব স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য ওবায়দুল কাদের উদাত্ত আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের পথে ঢাকা ছেড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছেন। ২১ সেপ্টেম্বর তিনি সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। অবিলম্বে মিয়ানমারে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবগুলো হলো- অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা, অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এই লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা, রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের সভা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের সংস্কার বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা, জাতিসংঘ মহসচিবের আমন্ত্রণে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন রোধে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক, আইএলও ও ওইসিডি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হাই-লেভেল ফলোআপ মিটিং অব গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক এ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ শীর্ষক বৈঠক, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের সভা, ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে পরিবেশ বিষয়ে একটি গ্লোবাল প্যাক্ট গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত একটি শীর্ষ সভা, এসডিজি বিষয়ে দুইটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্ট, বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (বিসিআইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত একটি মতবিনিময় সভা, জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে গঠিত পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়া ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, নেদারল্যান্ডসের রানী, এস্তোনিয়া প্রেসিডেন্ট, কসোভোর প্রেসিডেন্ট, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক এবং আইবিএমের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের কর্মসূচী শেষে ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় যান। সেখান থেকে ওয়াশিংটন যান। ২৯ সেপ্টেম্বর তার দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর গলব্লাডারে সফলভাবে অস্ত্রোপচার হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দিন সফর শেষে ৩ অক্টোবর লন্ডন যান।
×