ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শতাধিক জঙ্গী আত্মগোপনে

রাজধানী ও আশপাশের অনেক জঙ্গী আস্তানা এখনও শনাক্ত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাজধানী ও আশপাশের অনেক জঙ্গী আস্তানা এখনও শনাক্ত হয়নি

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কম করে হলেও অন্তত শতাধিক জঙ্গী আত্মগোপন করে আছে, যারা নব্য জেএমবি বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপের জঙ্গী সংগঠনের সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। এসব জঙ্গী জেএমবি থেকে নব্য জেএমবি বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য বলে পরিচিত। জঙ্গীরা নিজের পরিচয় গোপন করে নানা পেশার আড়ালে জঙ্গী আস্তানায় আত্মগোপন করে সক্রিয় আছে। এসব জঙ্গীকে পর্দার অন্তরাল থেকে কে বা কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তা এখনও রহস্যের আড়ালে ঢাকা। টাঙ্গাইলে ড্রোনসহ গ্রেফতার হওয়া সহোদর জঙ্গী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তাদের নাশকতার টার্গেট ছিল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ীই মিরপুরের মাজার রোডের জঙ্গী আস্তানায় সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য শীর্ষ জঙ্গী আবদুল্লাহসহ সাতজন আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় ইঙ্গিত দিচ্ছে, জেএমবি বা নব্য জেএমবি জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীরা যে এখনও তৎপর এবং হুমকিস্বরূপ। র‌্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাব ও সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরাতন জঙ্গী সংগঠন যেটা নব্য জেএমবি নামে বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপ বলে পরিচিত জঙ্গী সংগঠনের শতাধিক জঙ্গী সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তারা হিযরতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার পর নতুন নাম সাংগঠনিক নাম নিয়ে জঙ্গী তৎপরতায় যুক্ত হয় যাতে তাদের পরিচয় গোপন থাকে। তারা সাধারণত সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। মিরপুরের মাজার রোডের আবদুল্লাহও সেই ধরনের সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য, সে প্রথমে জেএমবি ও পরে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়ে গোপনে জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত হন। র‌্যাব ও সিটিটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় অনেক জঙ্গী আস্তানা এখনও শনাক্ত হয়নি। অনুরূপভাবে ঢাকার বাইরে চট্রগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের অনেক গোপন জঙ্গী আস্তানায় আত্মগোপন করে আছে জঙ্গীরা। যেসব জঙ্গী আত্মগোপন করে আছে তাদের রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, গ্রেনেড, সুইসাইড ভেস্ট তৈরির কারিগর। এই ধরনের তথ্যের কথা জানিয়েছে কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলাকারী জঙ্গী আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি ও মুফতি আবদুল হান্নানকে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী মোস্তফা কামাল। কুমিল্লায় গ্রেফতার হওয়া অমি ও টঙ্গিতে গ্রেফতার হওয়া মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীদের সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখনও অনেক জঙ্গী আস্তানা ও জঙ্গী আছে যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, জেএমবি থেকে নব্য জেএমবিতে যোগদানকারী শীর্ষ জঙ্গী আবদুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরেই মিরপুরের মাজার রোডে অবস্থান করলেও তার সম্পর্কে এতদিন কেন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গী সংগঠনে সক্রিয় হয়ে তৎপর ছিল সে। থানা পুলিশের অনতিদূরে দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরের মাজার রোডে আইপিএস, ইউপিএস ব্যবসার আড়ালে জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু ট্ঙ্গাাইলের এলেঙ্গায় দুই সহোদর জঙ্গী ধরা পড়ার তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গী আবদুল্লার জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় র‌্যাব। জঙ্গী আবদুল্লাহর মতো এই ধরনের কত জঙ্গী রাজধানী ঢাকা ও আশপাশে লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। র‌্যাব ও সিটিটিসি সূত্র জানান, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর ২৬৮ জনের নিখোঁজ হওয়ার একটি তালিকা প্রকাশ করার পর তা সংশোধন করে শুধু ৬৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে যারা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি। কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলাকারী জঙ্গী আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমিও তার মধ্যে একজন। জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গী অমি জানিয়েছে, তারা হাতে তৈরি বোমা বা গ্রেনেডগুলো ঢাকার সায়েদাবাদের একজনের কাছে হস্তান্তর করতে যাচ্ছিল। সেখানে নব্য জেএমবির একটি আস্তানা আছে। এ ছাড়াও মিরপুরে একটি জঙ্গী আস্তানা আছে। চট্রগ্রামে গোপন জঙ্গী আস্তানা আছে এমন দুটি স্থানের কথাও বলেছে গ্রেফতার হওয়া এই জঙ্গী। উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি জঙ্গী আস্তানায় কয়েক জঙ্গী আত্মগোপন করে থাকার তথ্যও দিয়েছে জঙ্গী অমি। কিন্তু এসব জঙ্গী আস্তানা ও জঙ্গী সদস্যরা এখনও সনাক্ত হওয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অনেক তরুণ শিক্ষার্থী জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের খোঁজ চলছে। এদিকে র‌্যাব-পুলিশের তালিকা অনুযায়ী এখনো অনেক কিশোর, তরুণ পরিবার থেকে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সম্পর্কে তথ্য পেতে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে যেসব অভিভাবক সন্তানদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তথ্য দিতে কার্পণ্য করছেন। আর যারা জেএমবি থেকে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে সেই সব জঙ্গীদের সম্পর্কেও খোঁজ খবর নিয়ে জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জঙ্গী আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছে এমন খবরের ভিত্তিতে জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের এলাকার মধ্যে ময়মনসিংহ, ত্রিশাল, ভালুকা, সাভার, নারায়নগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা এলাকাকে নিরাপদ ভেবে গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছে এমন তথ্য পেয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি।
×