ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িয়ে আনা বোতলে বিশুদ্ধ পানির নামে অস্বাস্থ্যকর পানি ॥ হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

ফ্রেশ মামসহ নামীদামী ব্র্যান্ডের বোতলে ওয়াসার পানি!

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ফ্রেশ মামসহ নামীদামী ব্র্যান্ডের বোতলে ওয়াসার পানি!

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ পানির অপর নাম জীবন। জীবিকা নির্বাহের জন্য এই পানি অস্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রস্তুত করে কেউবা আবার অন্যের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছেন। বিশুদ্ধ পানি মনে করে জনসাধারণ ব্র্যান্ডের পানির বোতলে পান করছেন অস্বাস্থ্যকর পানি। বুধবার সরেজমিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সিঁড়ির নিচে দেখা গেল, ব্র্যান্ডের বোতলে পূর্ণ করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পানি। পরে তা নিয়ে বিক্রির জন্য ছুটছেন হকাররা। সদরঘাট ব্রিজের নিচে দেখা গেল, একটি নৌকায় প্রকাশ্যে পুরনো বোতলজাত পানির মুখে দড়ি বাঁধতে ব্যস্ত এক শ্রমিক। এই দড়ির সাহায্যেই হকাররা পানির বোতলগুলো সহজেই হাতে বহন করতে পারেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হকার জনকণ্ঠকে জানান, প্রায় তিন বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত তিনি। তিনি বলেন, ফ্রেশ, মামসহ নামীদামী ব্র্যান্ডের পরিত্যক্ত বোতল কুড়িয়ে আনার পর তা ধুয়েমুছে চকচকে করা হয়। এরপর তাতে চোরাইপথে আসা ওয়াসার পানি ভরা হয়। পরে তা চলে আসে তার কাছে। বোতলের মুখে দড়ি বাঁধার কাজ করেন তিনি। প্রকাশ্যে এসব কাজে বাধা দেয়ার কেউ নেই বলেও জানান তিনি। মূলত লঞ্চের যাত্রীরাই এসব বোতলের ক্রেতা। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঠকিয়ে বিশুদ্ধ পানির বদলে তাদের হাতে লঞ্চে অবস্থান করা হকাররা তুলে দেন এসব অস্বাস্থ্যকর পানির বোতল। ক্রেতাদের হাতেও এসব পানির বোতল পৌঁছাচ্ছে কম মূল্যে। মাত্র ২০ টাকায় মিলছে দুই লিটারের এসব পানির বোতল। মিনারেল ওয়াটার বলে শুধু লঞ্চেই নয়, রাজধানীর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানেও এসব অস্বাস্থ্যকর পানির বোতল দেদার বিক্রি হচ্ছে। কেউবা কিনে ঠকছেন, কেউবা স্বল্পমূল্যে পাচ্ছেন বলেই কিনছেন। তিনটি ধাপে প্রস্তুত করা হয় এসব নকল পানির বোতল। প্রথমত, সদরঘাটের পানিতে ভাসা বিভিন্ন পানির বোতল সংগ্রহ করা হয়। সেই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়ানো বোতল সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে বোতলগুলো পরিষ্কার করে নতুনের মতো চকচকে বানানো হয়। সর্বশেষ ধাপে বোতলগুলোতে ওয়াসার চোরাই লাইনে আসা পানি ভরে বোতলের মুখে দড়ি বেঁধে তা বিক্রির উদ্দেশ্যে হকারদের হাতে পাঠানো হয়। জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা রুটে চলা কোন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করে না। প্রত্যেক লঞ্চে পানি সরবরাহের যে ব্যবস্থা রয়েছে, সে পানি পানের অযোগ্য। এ কারণে যাত্রীরা বোতলজাত পানির ওপর নির্ভর করেন। আর এ সুযোগটি নিয়েছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী। তারা পথশিশুদের ব্যবহার করে লঞ্চসহ পথেঘাটে পড়ে থাকা বোতল সংগ্রহ করে। পরে অপরিচ্ছন্ন বোতলে পানি ভর্তি করে। ওই পানি আবার পথশিশুদের মাধ্যমে বিক্রি করে। স্বল্প আয়ের যাত্রীরা সে পানি ক্রয় করেন। অস্বাস্থ্যকর এসব পানি পান করার ফলে পেটের পীড়া, আমাশয় ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতারিত ক্রেতারা।
×