ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ১৩৩৫ হাজার কোটি টাকার পুকুর ও খাল উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন

কঠোর নজরদারির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৩০ আগস্ট ২০১৭

কঠোর নজরদারির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে সরকারী পুকুর খনন ও খাল উন্নয়ন প্রকল্পে যাতে কোনপ্রকার অনিয়ম না হয় সেজন্য কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার ১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এর বাস্তবায়নে ‘নয়-ছয়ের’ শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থার পাশাপাশি এ কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা ও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়টি দেখভালের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর শঙ্কা ও নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মন্ত্রী জানান, সভায় প্রায় ১০ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট নয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সব ক’টি প্রকল্পের ব্যয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘সারা দেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫৬ জেলায় সরকারী পুকুর ও খালের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। স্থানীয় যুব সমাজকে মাছ চাষ, হাঁস পালনের মতো আয়বর্ধক কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূর করতে জেলাওয়ারী পুকুর ও খালের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় সারা দেশের মোট ১৪ হাজার ৯১০টি খাস পুকুর, ৩ হাজার ৪৯৩টি দীঘি এবং ৬ হাজার ৫৩৬টি খাস খালের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৯২১টি খাল পুনর্খনন করা হবে। এসব খালের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৩৭২ কিলোমিটার। এছাড়া ১ হাজার ৬১১টি পুকুর-দীঘি খনন করা হবে। পুকুরগুলোর আয়তন প্রায় ১ হাজার ৭০২ একর। প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করবে। বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২৩ পর্যন্ত। সভায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প-৩য় পর্যায় সংশোধিত আকারে অনুমোদন পেয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশজুড়ে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ এবং শিক্ষার হার বাড়াতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখছে। প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জুনে ৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সরকার প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটির মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে এবং উপবৃত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রমে আরও ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করেছে। এতে নতুন ১০ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধা পাবে। সভায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক বর্ডার রোড নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য বাড়ানো এবং স্থানীয় পর্যটন শিল্পের প্রসার প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য বলে জানান এমএ মান্নান। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অনুমোদিত অন্য প্রকল্প ৬৪ জেলায় সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ (১ম পর্যায়ে ২২ জেলা) শীর্ষক প্রকল্প, ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা। ৯৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকা-সিরাজগঞ্জ-সয়দাবাদ আঞ্চলিক মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ শহর অংশ পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ ২য় সংশোধিত প্রকল্প, রাজশাহী মহানগরীর রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক হতে মোহনপুর রাজশাহী নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সড়ক নির্মাণ ১ম সংশোধিত প্রকল্প এবং টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ারে ধলেশ্বরী নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা।
×