ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী হাওয়া

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১২ আগস্ট ২০১৭

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী হাওয়া

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ভোটযুদ্ধের প্রায় একবছর বাকি থাকলেও প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ পরিষদের নির্বাচনে মেয়র পদে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তা নিয়ে এখনই জোরালোভাবে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রধান দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে যে যার মতো কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ গোছাতে দলীয় নেতাকর্মী ও তৃণমূল পর্যায়ের ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় মাঠে থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উভয় দলে নতুন চমকের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে প্রার্থী যেই হোক না কেন সচেতন নগরবাসী মনে করছেন ভোটের আগে বর্তমান মেয়রের কাছে যেসব প্রত্যাশা ছিল তার শিকিভাগও তিনি পূরণ করতে পারেননি; যার প্রভাব আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পড়বে বিএনপির প্রার্থীর ওপর। ফলে এবার সব দলকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রার্থী মনোনীত করতে হবে। সূত্রে আরও জানা গেছে, সর্বশেষ নির্বাচনের তারিখ ধরা হলে আগামী বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। তফসিল ঘোষণা হতে পারে মার্চ কিংবা এপ্রিলে। সে হিসেবে নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। আর সে কারণেই আগেভাগে মাঠে নেমেছেন মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ কারণেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে কে পাচ্ছেন মেয়র পদে মনোনয়ন, তা নিয়ে ৬৫ বর্গকিলোমিটারের নগরজুড়ে চলছে নানা হিসেব-নিকাশ। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে অনেকটাই নির্ভাবনায় ছিল আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগের একটি সভায় দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাওয়ার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির জ্যেষ্ঠপুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোটভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। এরপরই মহানগরীজুড়ে পাল্টে যেতে থাকে নির্বাচনী আলোচনা। সূত্র মতে, চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ও ভাতিজা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামিম। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন শামিম। ওই সময় তিনি (শামিম) বরিশালের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৯ হাজার ৬২৪ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর জাহিদ ফারুক শামিমকে প্রয়াত হিরনের পদে (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) অধিষ্ঠিত করার গুঞ্জন উঠেছিল। পরবর্তীতে ওই পদে দায়িত্ব দেয়া হয় এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালকে। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনে জাহিদ ফারুক শামিম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সে সময় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে হিরন পরাজিত হওয়ায় মানবিক দৃষ্টিকোনে দল থেকে তাকেই (হিরন) মনোনয়ন দেয়ার পর তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। হিরনের মৃত্যুর পর বরিশাল-৫ আসনে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাহিদ ফারুক শামিম। শেষ পর্যন্ত প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের পরিবারের কথা বিবেচনা করে দলের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিরনের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজকে মনোনয়ন দেয়ার পর তিনি বিজয়ী হন। সচেতন নগরবাসী মনে করছেন, বার বার নিরাশ হওয়া জাহিদ ফারুক শামিমকে এবার আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সচেতন নগরবাসীর আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাবেক জননন্দিত মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের ঘনিষ্ঠজন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম ও মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকেই আমি বরিশালের রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকা-সহ সকল কর্মকা-ে দলের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৬৮ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তারই নির্দেশে ১৯৭০ সালে তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে পরে দেশের স্বাধীনতার জন্য সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণ করে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে আমি সরাসরি জড়িত। তাই দল চাইলে আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হব। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পীকার এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি বলেন, দলের কাছে যে কোন নেতা মনোনয়ন চাইতেই পারেন। তবে কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার জন্য সবাইকে মাঠে নেমে শতভাগ বিজয় নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। বরিশালে সর্বশেষ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। তখন এখানে ভোটার ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭। প্রায় চার বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬০৭ জনে। সর্বশেষ নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। গত চার বছরে দেশে বিএনপির নির্বাচিত মেয়র থেকে শুরু করে প্রায় সবপর্যায়ের বিপুলসংখ্যক জনপ্রতিনিধির কারাবরণ, বরখাস্ত কিংবা পদচ্যুত হলেও ব্যতিক্রম কামাল। যেকোন উপায়েই হোক না কেন বড় ধরনের কোন বিপদে না পড়ে তিনি (কামাল) দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে কামালের সমালোচনা যেমন রয়েছে তেমনি প্রশংসাও কম নয়। দলের ভেতরে কামাল বিরোধীদের মতে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তিনি টিকে আছেন। যে কারণে মাঠের আন্দোলনসহ কোন কিছুতেই তাকে দেখা যায় না। এর বিপরীতে কামাল সমর্থকদের বক্তব্য, মেয়রের পাশাপাশি মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকাবস্থায় সবক্ষেত্রেই মাঠে ছিলেন কামাল। সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দলের একজন সাধারণ সদস্য করার পর নীতিনির্ধারণ বা সিদ্ধান্ত দেয়ার প্রশ্নে তার আর কিইবা করার থাকে। এ ব্যাপারে মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, কে কি বলল তাতে কিছুই যায় আসে না। আইনকানুন মেনে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার কারণেই তাকে এখনও কেউ বিপদে ফেলতে পারেনি। বিসিসি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির ভেতরেও চলছে নানা জটিলতা। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন। বিএনপির ভোট ব্যাংকখ্যাত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। বাকি সিদ্ধান্ত দল নেবে। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। অপরদিকে নিজের মুখে কিছু না বললেও শেষ পর্যন্ত যে মনোনয়নের জন্য মাঠে নামবেন মজিবর রহমান সরোয়ার সে বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিএনপির অধিকাংশ নেতার মতে, বিগত সময়ের মতো এবারও হয়ত নির্বাচন প্রশ্নে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে অনুষ্ঠিতব্য এসব সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করবে সরকার। এরকম পরিস্থিতিতে সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মজিবর রহমান সরোয়ার সে সুযোগ ছাড়তে চাইবেন না। আর সবসময়ের মতো এবারও প্রকাশ্যে নিজ মুখে তিনি কিছুই বলবেন না। বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, মনোনয়ন প্রশ্নে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমার সিদ্ধান্ত। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, বরিশালে বিএনপির রাজনীতিতে মজিবর রহমান সরোয়ারের কোন বিকল্প নেই। এটা যেমন আমরা জানি তেমনি কেন্দ্রও জানে। মনোনয়ন যেই পাক না কেন, এখানে বিজয় ঘরে তুলতে হলে লাগবে মজিবর রহমান সরোয়ারকে। আর দল যদি তাকেই মনোনয়ন দেয় তাহলে যেকোন পরিস্থিতিতে এখানে বিএনপি বিজয়ী হবে। ভোটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিসিসির তৃতীয় পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন ৪২ হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। অপরদিকে ২০০৮ সালে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামিম ৯৯ হাজার ৬২৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি মেলেনি বিসিসির চতুর্থ পর্যায়ের নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে নানা হিসেব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন সচেতন নগরবাসী। সর্বশেষ তৃতীয় পরিষদের নির্বাচিত মেয়রের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা কতটুকু ছিল আর কতখানিইবা পূরণ হয়েছে তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নগরবাসীর দুর্ভোগের নানান চিত্র। সনাকের সভাপতি গাজী জাহিদের মতে, প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল নগরী আজ ময়লার ভাগাড়ের পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাথ দখল করে রাখায় পথচারীর চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। সংস্কারের অভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল আজ সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতার কারণে চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যা সমাধানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কোন ভূমিকা নেই। অথচ নির্বাচনের পূর্বে আজকের মেয়রের কাছে নগরবাসীর অনেক প্রত্যাশা ছিল। সে অনুযায়ী কোন প্রাপ্তি মেলেনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই নগরবাসী বেছে নেবেন। বরিশাল সরকারী বিএম কলেজের সিনিয়র অধ্যাপক ও নারী নেত্রী শাহ্ সাজেদার মতে, সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর চাহিদার বিশাল একটি স্থান। সেই স্থানের সুযোগ-সুবিধা পেতে নিয়মিত কর পরিশোধ করা সত্ত্বেও নগরবাসী তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্ছিত রয়েছেন। সড়ক ও রাস্তার লাইটিং এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। জলাবদ্ধতা ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে পুরো নগরী। বিসিসি থেকে অবাধে থ্রী-হুইলার যানবাহন নগরীতে চলাচলের সুযোগ করে দেয়ায় যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। ফুটপাথ দখলের কারণে পথচারীর চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে মেয়র কখনই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়কার সকল উন্নয়নমূলক কাজ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি (শাহ্ সাজেদা) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হিরনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসীর প্রাপ্তিরও মৃত্যু হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেয়ার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহবান করেন। খেলাঘরের জেলা সভাপতি জীবন কৃষ্ণ দে বলেন, সৎ-নিষ্ঠাবান, আদর্শবাদী, যে প্রয়াত সফল মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মতো নগরবাসীর জীবনমানের উন্নয়নসহ সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পৌঁছবেন সেই প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনে সমর্থন দেয়া হবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিসিসির দ্বিতীয় পরিষদের নির্বাচিত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের উন্নয়নমূলক কাজের পর নগরীতে চোখে পড়ার মতো আর কোন উন্নয়ন হয়নি। এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার (হিরনের) উন্নয়নমূলক কাজ আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নগরীর সুরম্য ফুটপাথ দীর্ঘদিন থেকে দখল করে রেখেছে একশ্রেণীর সুবিধাভোগী। ফলে পথচারীসহ শিশুদের এখন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নগরীর উন্নয়ন তো দূরের কথা বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে গিয়েই প্রায় আন্দোলনের সম্মুখীন হতে হয় বর্তমান মেয়রকে। জেলা মহিলা পরিষদের সাবেক সভাপতি নুরজাহান বেগম বলেন, কর্মজীবী নারীদের জন্য নারীবান্ধব প্রকল্প গ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন পূর্বে বর্তমান মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হলেও আজো তা আলোর মুখ দেখেনি। আগামী নির্বাচনে যে প্রার্থী নারীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে মূল্যায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে আসবে তাকেই নারী ভোটাররা সমর্থন দেবেন।
×