ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার চরে ২০০ মেও সোলার পার্ক;###;স্থাপন করা হবে

চরের পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ আগস্ট ২০১৭

চরের পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার চরের পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রথমেই পদ্মার চরের অনাবাদি জমিতে ২০০ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে সোলার পার্কটি স্থাপন করবে সরকারের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ জমির সংস্থান করা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ থমকে আছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী কোম্পানিগুলোও জমির সংস্থান করতে পারছে না। সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পরেও সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের জট ছাড়াতে পারছে না। সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগে অনুষ্ঠিত একটি সভায় চরের জমিতে সৌর পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয় পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনার এমন অনেক চর রয়েছে যেখানে চাষাবাদ হয় না। এসব চরের জমিতে সরকার চাইলেই সোলার পার্ক নির্মাণ করতে পারে। এক্ষেত্রে বর্ষায়ও যেসব চরে পানি ওঠে না সেসব চরের জমিতে সোলার পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সাধারণত প্রতি মেগাওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য সাড়ে তিন একর জমির প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে ১০০ মেগাওয়াট সোলারের জন্য ৩৫০ একর জমির প্রয়োজন হয়। এই বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি পাওয়া বেশ কঠিন। পাওয়ার সেল সূত্র জানায়, আরপিসিএল এবং এপিএসসিএল রাজশাহীর পদ্মার চরে সোলার পার্কটি নির্মাণ করবে। এজন্য সম্ভাব্যতা জরিপ করা হচ্ছে। সম্ভাব্যতা জরিপ শেষেই সোলার পার্কটি স্থাপনের কাজ শুরু হবে। আরপিসিএল এবং এপিএসসিএল নিজস্ব অর্থায়নে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করবে। দেশে এখন সোলার হোম সিস্টেম এবং মিনি গ্রিড মিলিয়ে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে অন্তত ১০ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। এক্ষেত্রে এখন দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াটের হিসেবেই ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন। সরকারের পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। সেই হিসেবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের হার হওয়ার কথা দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। যদিও এখনও কোন বড় প্রকল্পের নির্মাণ কাজই শুরু করতে পরেনি কেউ। বিদ্যুত বিভাগ চাইলেও অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর অনাগ্রহে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প আগাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের জন্য অর্থ কোন বিষয় নয়। দাতাসংস্থা এবং বিদেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকও সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতায় এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। বেসরকারী খাতের ব্যর্থতার কারণে সরকারই এখন সোলার পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। চট্টগ্রামের মীরেরসরাইতে সব থেকে বড় ‘সোলার পাওয়ার হাব’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সম্প্রতি। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের পড়ে থাকা ২ হাজার একর জমিতে সোলার পার্ক স্থাপনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। এর বাইরে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে আরও দুই হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। এখানে সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আইপিপি মডেল অনুসরণ করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য সরকার জমি এবং গ্রিড লাইন করে দেবে। উদ্যোক্তা শুধুমাত্র কেন্দ্র নির্মাণ করে গ্রিডে বিদ্যুত দেবে। তবে এখনও সরকারের তরফ থেকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন সেক্ষেত্রে চরের জমিই হবে সরকারের বড় ভরসা। যেসব চর বর্ষায় প্লাবিত হয় না বা ভাঙ্গনের মুখে পড়বে না তেমন চর খুঁজে বের করতে হবে। সরকার চাইলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এমন উদ্যোগ নিতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
×