ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কান্ডারি হিসেবে ম্যাক্রোঁ কি পারবেন?

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২ আগস্ট ২০১৭

কান্ডারি হিসেবে ম্যাক্রোঁ  কি পারবেন?

ফ্রান্সের নয়া প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁনের বিশেষত্বই হলো উচ্চাভিলাষ। এই উচ্চাভিলাষই তাকে স্বকীয়তা এনে দিয়েছে। সেই উচ্চাভিলাষ হলো ফ্রান্সের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো। ওই লক্ষ্য অর্জনে কি তিনি সকল হবেন? ম্যাক্রন নির্বাচনী প্রচারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতির প্রতি অবিচল থেকে ফ্রান্সের শ্বাসরুদ্ধকর নিয়ন্ত্রণমূলক ও কর ব্যবস্থা সংস্কারে কিছু সাহসী প্রস্তাব পেশ করেছেন তিনি। পার্লামেন্টে তার দলের বেশ ভাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তার উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে বেশ উজ্জ্বল। শেষ পর্যন্ত জনসাধারণের কাছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সে প্রশ্ন উন্মুক্ত থাকছে। কারণ অতীতে দেখা গেছে ভোটের চাইতে রাজপথের বিক্ষোভেই সংস্কারের উদ্যোগ মার খেয়েছে। তার পরেও ম্যাক্রনের উদ্যোগের ফলে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে যা ছিল তার চেয়ে ভাল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল হবে। প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের মাথাভারি শ্রম আইনের অর্থনৈতিক বোঝা লাঘব শুরু হবে। এই আইনের কারণে খরচ বাড়ে, প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায়। শ্রম আইনে বিধান আছে যে ৫০ জন কি তারও বেশি শ্রমিক আছে এমন সমস্ত কোম্পানিকে নূ্যূনতম পাঁচ সপ্তাহের সবেতন দুটি ও পর্যাপ্ত সময়ের পিতৃত্বকালীন দুটি শ্রমিকদের দিতে হবে। আইনে কর্ম সপ্তাহ ৩৫ ঘণ্টায় সীমিত করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বয়স ৬২ বছর হলেই তাদের ভাতাসহ অবসর দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এক হাজার কি তারও বেশি শ্রমিক-কর্মচারী আছে এমন কোম্পানিকে লে অফ করা শ্রমিকদের নতুন পদে নিয়োগ এবং তাদের কোম্পানির খরচে নতুন করে ট্রেনিং দেয়ার বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোন কর্মচারী বরখাস্ত হলে তাকে সেই বরখাস্ত আদেশ পাঁচ বছর পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করার অধিকার দেয়া আছে। সেই মামলায় কোম্পানির হার হলে সেটির ওপর কঠোর শান্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপের বিধান আছে। এ ধরনের নানা বিধি-বিধানের কারণে ফ্রান্সে চালু থাকা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো সে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হয় যদিও বিশ্বের অন্যত্র তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক দিক দিয়ে ভাল অবস্থায় আছে। এমনি কঠোর শ্রম আইন, উচ্চমাত্রার কর্পোরেট ট্যাক্স ও জটিল নিয়ম-কানুনের কারণে ফ্রান্সের অর্থনীতির দারুণ ক্ষতি হয়ে গেছে। গত ৭ বছরে সে দেশের জিডিপি সত্যিকার অর্থে বছরে দেড় শতাংশের চাইতে বেশি কখনই হতে পারেনি। কর্মসংস্থান বুদ্ধি থেমে গেছে। অর্ধেকেরও বেশি ফরাসী শ্রমিক আজ পূর্ণাঙ্গ সময়ের কর্মচারী হিসেবে নয় বরং সীমিত চুক্তিতে কাজ করে। ফ্রান্সের সার্বিক বেকারত্বের হার মোট শ্রমশক্তির ১০ শতাংশ আর যুবকদের বেকারত্ব প্রায় ২২ শতাংশ। এই সমস্ত সমস্যা মোকাবেলায় ম্যাক্রনের প্রয়োজন হবে নেপোলিয়নের মতো উচ্চাভিলাষ। তার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অবশ্য সেই উচ্চাভিলাষের কিছুটা প্রতিফলন রয়েছে। আপাতত তিনি সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টার শ্রম এবং ৬২ বছর বয়সে শ্রমিকদের অবসর দেয়ার ব্যবস্থা বহাল রাখছেন। তবে তিনি শ্রম আইনে যেসব পরিবর্তন আনছেন তাতে বহু কোম্পানি ওভারটাইম পারিশ্রমিক ও কাজের নিয়ম-কানুন সংক্রান্ত জাতীয় শ্রম চুক্তির বাইরে থাকতে পারবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বরখাস্ত করলে তাদের প্রদেয় ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমিয়ে দেয়া এবং মামলা করার সময়সীমা আরও সীমিত করা হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় শ্রমিকদের লে অফ করার সুযোগ দেয়া হবে। এ ছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্স হার বর্তমানের ৩৩ শতাংশ থেকে ক্রমশ ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। রিয়েল এস্টেটের ওপর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পদ কর থাকবে না। সিভিল সার্ভেন্টের সংখ্যা কমানো হবে এবং এর মাধ্যমে সরকারী ব্যয় জিডিপির ৫৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫২ শতাংশে আনা হবে। ফলে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। এই লক্ষ্যগুলো ম্যাক্রোঁ কিভাবে অর্জন করবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে তার উদ্যোগগুলো এই শতাব্দীর গোড়ার দিকে জার্মানির প্রবর্তিত সংস্কারের অনুরূপ যে সংস্কারের বদৌলতে জার্মানি অবিস্মরণীয় অর্থনৈতিক সফল পেয়েছেন। ম্যাক্রোঁ সত্যিই এ কাজে সফল হবেন কিনা সেটাই এখন দেখার ব্যাপার। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইকোনমিস্ট
×