ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ল্যাংড়া আমির বন্দুকযুদ্ধে নিহত

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২ আগস্ট ২০১৭

কেরানীগঞ্জের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ল্যাংড়া আমির বন্দুকযুদ্ধে নিহত

গাফফার খান চৌধুরী/সালাহউদ্দিন মিয়া ॥ প্রায় পাঁচ বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে দিন দুপুরে মা, গাড়ির চালক ও বোনকে গুলি করে মায়ের কোল থেকে ছয় বছর বয়সী স্কুলছাত্র পরাগ মন্ডল অপহরণের বহুল আলোচিত ঘটনার মূল আসামি কুখ্যাত সন্ত্রাসী ল্যাংডা আমির পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে অস্ত্রগোলাবারুদ। আমিরের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজিসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসী আমিরের গুলিতে আহত হয়ে অনেকেই প্রায় চিরতরে পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন। এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত আমিরের মৃত্যুতে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ আনন্দ মিছিল করেছে। মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। আর সেই মিছিলে এলাকার সাধারণ মানুষ বিতরণ করেছেন মণে মণে মিষ্টি। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ নবেম্বরের সকাল বেলা। একমাত্র ছেলে পরাগ মন্ডল (৬) আর তার বড় বোন স্কুল ছাত্রী পিনাকী ম-লকে (১০) নিয়ে কেরানীগঞ্জের সুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে বের হন মা লিপি ম-ল। রাস্তায় সামান্য কাদা থাকায় মা ছেলেকে কোলে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। ছেলের স্কুল ব্যাগটিও ছিল মায়ের কাঁধেই। আর মেয়ে স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে মায়ের হাত ধরে বাড়ির সামনের রাস্তার দিকে যাচ্ছিল। রাস্তা কাদা আর খারাপ থাকায় নিজস্ব প্রাইভেটকারের চালক নজরুল ইসলামকে মূল রাস্তায়ই গাড়ি রাখতে বলেন লিপি ম-ল। পরাগ ম-ল রাজধানীর সদরঘাটে অবস্থিত হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেজি ওয়ান ক্লাসের ছাত্র। তাকে পৌঁছে দেয়ার পর মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। গাড়ির চালক গাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক গাড়িতে ওঠার সময় আচমকা মোটরসাইকেলে করে সেখানে কয়েকজন সন্ত্রাসী হাজির হয়। তারা মায়ের কোলে থাকা পরাগ ম-লকে ধরে হ্যাচকা টান মেরে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পরাগ আরও বেশি শক্ত করে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। ধস্তাধস্তির পরেও মা ছেলেকে ছাড়ছিল না। এ সময় সন্ত্রাসীরা কোমর থেকে পিস্তল বের করে মা, গাড়ির চালক ও বোনকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা চিৎকার দিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা পরাগ মন্ডলকে দ্রুত অপহরণ করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। এমন ঘটনায় সারাদেশে রীতিমত তোলপাড় চলতে থাকে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে। পরাগকে উদ্ধার করতে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলতে থাকে। পরাগ মন্ডলর ব্যবসায়ী পিতার কাছে কোটি টাকার মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। শেষ পর্যন্ত অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পর কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় পরাগ মন্ডলকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় পরাগের পিতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরাগ মন্ডল অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতার হয় ল্যাংডা আমির। গ্রেফতারের পর গত বছরের ১১ আগস্ট একটি হত্যা মামলায় হাজিরার জন্য আদালতে আনা হলে ঢাকা জেলা জজ আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যায় ল্যাংড়া আমির। আমিরের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম এলাকায়। তবে ছোটবেলা থেকে সে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ ও শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছিল। এক সময় সে জমিজমার ব্যবসা ও দালালিতে যুক্ত ছিল। হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে ল্যাংড়া আমির কেরানীগঞ্জের ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পায়। তার হাতে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ২২ মার্চ চিকিৎসক দম্পতি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ আবু নোমান ও শাহানা ক্লিনিকের মালিক ডাঃ শাহানার রিক্সা থামিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল আমির। টাকা দাবি করে চলে যাওয়ার সময় চিকিৎসক দম্পতিকে বহনকারী রিক্সাচালকের পায়ে গুলি করেছিল আমির। এরপর গত ২২ মে বিকেলে কেরানীগঞ্জের জিয়ানগর এলাকায় এক কোটি টাকা চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে একই কায়দায় পায়ে গুলি করেছিল আমির। সর্বশেষ গত ৯ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় ব্যবসায়ী শাহ আলমের বুকে গুলি করেছিল সে। আমিরের মৃত্যুতে মঙ্গলবার সকালে কেরানীগঞ্জের কদমতলী, চুনকুটিয়া, চরকুতুব ও হাসনাবাদ এলাকায় মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। সেই আনন্দে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সর্বস্তরের মানুষ।
×