ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারের দর কমার কারণ জানতে চান বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৩০ জুলাই ২০১৭

শেয়ারের দর কমার কারণ জানতে চান বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়লে এর কারণ জানতে চেয়ে নোটিস জারি হলেও টানা দরপতনের কারণ জানতে চায় না বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অথবা স্টক এক্সচেঞ্জ। ফলে শেয়ারের দর বাড়ার কারণ জানতে পারলেও দর কমার কারণ কখনও জানতে পারেন না বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে দরপতনে নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না তাদের সামনে। এ পরিস্থিতির অবসান চান বিনিয়োগকারীরা। দর বাড়ার পাশাপাশি কমার কারণ জানতে চান তারা। ডিএসইর তথ্যানুসারে, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সায়হাম কটন, রহিমা ফুড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, সিমটেক্স, ইমাম বাটন, দুলামিয়া কটনসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর কয়েক কার্যদিবস ধরে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা যায়। ফলে কারণ জানতে চেয়ে নোটিস দিয়েছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। উত্তরে দর বাড়ার পেছনে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বছরের পর বছর ধরে কমলেও ডিএসইর পক্ষ থেকে দর কমার কারণ অনুসন্ধান করে না। কিংবা পতন রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় না। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা জানান দর বাড়ার পাশাপাশি দর কেন কমছে তা জানার অধিকার তাদের রয়েছে। তাই এ বিষয়ে নিয়ম হওয়া জরুরী বলে মনে করেন তারা। সম্প্রতি ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, বিডি ফাইন্যান্স, এবি ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এইচ আর টেক্সটাইল, নূরানী ডাইং, অলটেক্সসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর পতন অব্যাহত রয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এসব শেয়ারের দর কমেছে ৬ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু দর কেন কমছে না জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারী। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ডিএসইর পক্ষ থেকে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে, এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ ছিল। বলা হয়েছিল এসব শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত হয়ে গেছে। সে সময়ও ডিএসইর কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাবে কর্তৃপক্ষ একই জবাব দিয়েছিল দরবৃদ্ধির পেছনে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। কোম্পানির পক্ষ থেকে এ ধরনের জবাব বরাবরই দেয়া হয়। আর স্টক এক্সচেঞ্জ দর বৃদ্ধির নোটিস দিয়ে এবং তা প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করে থাকে। কিন্তু দরবৃদ্ধির পেছনে দায়ীদের খুঁজে বের করা হয় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও এসব বিষয়ে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে আব্দুর রহিম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, সংশ্লিষ্টদের উচিত এ বিষয়টিতে নজর দেয়া। দর বাড়লে প্রতিষ্ঠান কারণ দর্শাতে বাধ্য থাকবে কিন্তু দর কমলে কোন ভূমিকা থাকবে না এমনটি হতে পারেন না। এটা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারের দর যখন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে তখন প্রতিষ্ঠানের কাছে কোন সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। এটা অবশ্যই ভাল দিক। কারণ এতে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হওয়ার সুযোগ পান। অন্যদিকে কোন শেয়ারের দর যদি অস্বাভাবিকভাবে কমলেও এর কারণ জানতে চাওয়া হয় না। এটা ঠিক নয়। আমি মনে করি এ বিষয়ে নিয়ম থাকা উচিত। শেয়ারের দর কমে যাওয়ার পেছনে কোন নেগেটিভ খবর রয়েছে কিনা তা জানার অধিকার বিনিয়োগকারীদের রয়েছে। তিনি বলেন ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন নিয়ম রয়েছে। আমাদের দেশেও এটা থাকা দরকার। একই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারের দর বাড়লে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিও বাড়ে। এজন্য প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়। আর দর কমে গেলে ঝুঁকিও কমে যায় সেজন্য হয়ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাবেন না। তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দর বাড়ার পাশাপাশি কমার কারণ জানতে পারলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। এ ব্যাপারে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় কোম্পানিগুলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে ফায়দা হাসিল করে থাকে। কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্যক্তি পুঁজিবাজার কারসাজি চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে শেয়ার দর নিয়ন্ত্রণের জন্য এ তথ্য ব্যবহার করে। তথ্য প্রকাশের আগেই তারা বিভিন্নভাবে তা বাজারে ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। তবে আমরা আমাদের দায়িত্ব অনুযায়ী অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কোন কারণ আছে কিনা, তা জানতে চাই। মূলত বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার লক্ষ্যে এটি করা হয়ে থাকে। তবে বাজারে কোন ধরনের ম্যানিপুলেশন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বিএসইসি কর্তৃপক্ষ।
×