ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি বন্ধের ঘোষণা এরশাদের

জোটে না গিয়ে একক নির্বাচনের পরামর্শ তৃণমূল নেতাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩০ জুলাই ২০১৭

জোটে না গিয়ে একক নির্বাচনের পরামর্শ তৃণমূল নেতাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত না হয়ে এরশাদকে এককভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিলেন দলটির সারাদেশের তৃণমূলের নেতারা। তারা বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই বড় কোন দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করার দিন শেষ। মানুষ এখন জাপাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীতে একক নির্বাচন করার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা। পাশাপাশি জনবিচ্ছিন্ন কোন নেতাকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন না দেয়ারও দাবি জানান জেলা-উপজেলা নেতারা। তারা এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, দলের বেশিরভাগ এমপির সঙ্গে এলাকার মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। তারা এলাকায় কোন কাজ করেন না। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের খুশি করার চেষ্টা করেন। শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত যৌথসভায় তারা এসব কথা বলেন। সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়নসহ ওয়ার্ড নেতারা যোগ দেন। যদিও তৃণমূলের নেতাদের কোন কথারই তাৎক্ষণিক জবাব দেননি এরশাদ। জেলার সাংগঠনিক অবস্থা জানতে দুটি করে জেলার নেতাদের ডেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘরোয়া পরিবেশে কথা বলারও পরামর্শ দেন মাঠপর্যায়ের নেতারা। সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশের সবকিছুতে জট লেগেছে। উন্নয়নে জট, চাকরিতে জট, রাস্তাঘাটে জট, দুর্নীতিতে জট। এ জট খুলতে হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এ জট লাগিয়েছে। জাতীয় পার্টিই পারে এ জট খুলে দেশের মানুষকে শান্তি দিতে। তাই আগামী নির্বাচনে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এরশাদ বলেন, সরকার কথায় কথায় বলে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। আমরা তো দেখি এখন মহাসড়কে শুধু পানি আর পানি। পানি দিয়ে সরকার কী উন্নয়ন করছে তা তো দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। চারদিকে দুর্নীতি আর সন্ত্রাস। ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার কিছু করছে না। চারদিকে আজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। তিনি বলেন, ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। কোথাও শান্তি নেই। চারদিকে অশান্তি। এ অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। জাতীয় পার্টিই পারবে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ বলেন, সম্মিলিত জাতীয় জোটের ব্যানারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা তিন শ’ আসনে প্রার্থী দেব। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ-বিএনপির হাত থেকে রক্ষা পেতে দেশের মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনবে। ক্ষমতায় এসে আমরা আবারও দেশের মানুষকে শান্তি ফিরিয়ে দেব। দুর্নীতি চিরতরে বন্ধ করব। লুটপাট, সন্ত্রাস বন্ধ করব। এরশাদ বলেন, আগামী তিন মাস সারাদেশে জাতীয় পার্টি ও জোটের ব্যানারে সভা-সমাবেশ হবে। শহর, বন্দর, গ্রামগঞ্জে পার্টিকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। এরপর আগামী নবেম্বর মাসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জোটের পক্ষ থেকে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন এরশাদ। সভায় বিরোধীদলীর নেতা ও জাপার সিনিয়ার কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, আগামীতে আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাই। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে গঠিত জোট আরও শক্তিশালী হবে- উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রওশন বলেন, আমাদের সঙ্গে শরিক হিসেবে যারা যুক্ত হয়েছেন সবাইকে স্বাগত জানাই। এখন কাজ একটাই, জোটকে শক্তিশালী করুন। আগামীতে আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাই। তিনি বলেন, মানুষ এখনও জাপার উন্নয়নের যুগে ফিরে যেতে চান। আমাদের ওপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত বয়ে গেছে। কিন্তু এরশাদ ও জাতীয় পার্টির স্বর্ণযুগের ইতিহাস কেউ মুছে দিতে পারেনি। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনার দেশের মানুষের কাছে যান। তাদের স্মরণ করিয়ে দিন এরশাদের আমলের উন্নয়নের কথা। আমারা যে ভাল কাজগুলো করেছিলাম তা মনে করিয়ে দিতে পারলে মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। ভোট বাড়বে। দেশে কর্মসংস্থান নেই মন্তব্য করে রওশন বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে পাঁচ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এরশাদ ছাড়া দেশে আর কেউ এ সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। তিনি বলেন, এরশাদের আমলে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। তিনি ছাড়া দেশকে নিয়ে আর কেউ ভাবেনি। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অধ্যাপক দেলওয়ার হোসেন খান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশিদ সরকার, সাহিদুর রহমান টেপা, রতœা আমিন হাওলাদার এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, একিউ তাজ রহমান, মাহজাবিন মোর্শেদ এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, মোহম্মদ নোমান মিয়া এমপি, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল আলম রুবেল, একেএম গোলাম মর্তুজা, মোস্তাকুর রহমান মোস্তফা। সভায় উপস্থিত ছিলেনÑ পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম, তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম মিলন, আমীর হোসেন ভূঁইয়া এমপি, ইকবাল হোসেন রাজু, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির, আরিফ খান, আলমগীর শিকদার লোটন, আমির হোসেন এমপি, ফখরুল আহসান শাহজাদা, সুলতান আহমেদ, সুজন দে, আব্দুর রাজ্জাকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ শেরপুর জেলা জাপার সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাপার সভাপতি জিয়াউল হক মৃধা, নাটোর জেলা জাপা সভাপতি মজিবুর রহমান সেন্টু, হবিগঞ্জ জেলা জাপা সদস্য সচিব শংকর পাল, গাজীপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, রাজবাড়ীর হাবিবুর রহমান বাচ্চু, নওগাঁর তফাজ্জল হোসেন। এছাগা টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন।
×