ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৮ জুলাই ২০১৭

আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী দশ বছরের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সবাই দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণেই দেশ আজ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তবে মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সবাই যদি নিমজ্জিত না থাকত তাহলে দুর্নীতি হতো না। যাদের ক্ষমতা আছে তারাই দুর্নীতি করে। যদি এতে সবাই অংশ না নেয় তাহলে দুর্নীতি হয় কীভাবে? পরোক্ষভাবে আমরা সবাই দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দুদকের হটলাইন-১০৬ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। অফিস চলাকালীন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যে কোন ফোন থেকে বিনা খরচে দুদকের হটলাইন-১০৬ এ ফোন করে দুর্নীতির অভিযোগ দেয়া যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। দুর্নীতিতে আমরা সবাই নিমজ্জিত। পরিস্থিতি এখন এমন যে, অনেক সময় বাধ্য হয়ে দুর্নীতিতে জড়াতে হয়। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে জীবনে দুবার বখশিশ দেয়ার অভিজ্ঞতাও তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। আমি তখন অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ নাগরিক। ঠিক করলাম, বাড়িতে গ্যাস কানেকশন প্রয়োজন, আমি তিতাসকে বললাম, তোমরা একদিন এসে আমার এই কানেকশনটা দিয়ে যাও। এরপর তারা এলো, আমার বাসায় কানেকশনটা দিয়ে দিল। তখন কোম্পানির যে কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছিলেন, যাওয়ার সময় তিনি বললেন, স্যার আমাদের কিছু বখশিশ দিতে হয়। তখন আমি ভেরি সারপ্রাইজড, কোনদিন বখশিশ দিইনি। আমি উপলব্ধি করলাম যে আমি তো এখন সাধারণ নাগরিক। কিছু বখশিশ দিলাম। এর আগে ফিলিপিন্সে চাকরি করার সময় বাসা ভাড়া নিয়ে গ্যাস সংযোগের জন্যও বখশিশ দিতে হয়েছিল বলে জানান মুহিত। তারা এসে কাজ ঠিকঠাক করে দিল, তারপর যাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবে বখশিশ চাইল, আমিও তাদের কিছু দিলাম। ফিলিপিন্সে এটা খুব স্বাভাবিক কালচার, এতে আমি খুব বেশি সারপ্রাইজড হইনি। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানে হেসে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মধ্যেও হাসির রোল পড়ে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি ছিল না। এটা একটা গোপনীয়তার মধ্যে ছিল। একটু শরমের সংশ্লিষ্টতা ছিল। নাম উল্লেখ না করে দুদকের সাবেক এক চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় দুদকের এক চেয়ারম্যান দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। জিহাদের ভবিষ্যত সব সময় অন্ধকার হয়। কারণ, জিহাদ একটি অন্য জিনিস। অবশ্যই ধর্মযুদ্ধে এসব ছিল, এখন আর নেই। জিহাদের নাম নিয়ে কোন পরিবর্তন হয় না। দুদক ও তদন্তকারীদের উদ্দেশে মুহিতের পরামর্শÑতদন্ত করবেন ভাল কথা, তবে জিহাদী হবেন না। জিহাদী হলে তদন্তের কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। সরকারী চাকরিতে বেতন কম বলে দুর্নীতি বাড়ার অভিযোগ ছিল এক সময়। এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। সরকারী চাকুরেদের আগে চিন্তা করতে হতো-কীভাবে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। এখন কিন্তু বলা যেতে পারে সরকারী বেতন মানে সুন্দর জীবন যাপন। পরিস্থিতি বদলানোর আশার কথা শুনিয়ে মুহিত বলেন, আমি আশাবাদী, আমার ধারণা, আট থেকে ১০ বছর পর আজকে যে দুর্নীতি, এই অবস্থার একটি পরিবর্তন আসবে। সাধারণ মানুষেরও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দরপত্রসহ অন্যান্য কাজে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি কমেছে বলেও দাবি করেন। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। আমরা যারা রক্ষক হিসেবে আছি তারাই ভক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়ে আছি। এই প্রয়াস বন্ধ হওয়া চাই। হটলাইন উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠান থেকে অর্থমন্ত্রী দুদকের কল সেন্টারে ফোন দিয়ে কথা বলেন। অন্যদের মধ্যে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসির উদ্দিন, কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও দুদক সচিব আবু মোঃ মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×