ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সাফে স্বর্ণপদক জিততে চান জহির

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৯ জুলাই ২০১৭

সাফে স্বর্ণপদক জিততে চান জহির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আইএএএফ ওয়ার্ল্ড অনুর্ধ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের ৪০০ মিটার দৌড়ের সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিলেন বাংলাদেশের জহির রায়হান। ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ গেমসে ১০০ মিটারে আব্দুল্লাহ হেল কাফি সেমিফাইনালে ওঠার পর স্প্রিন্টে বাংলাদেশের তেমন কোন সাফল্য আসছিল না। এতদিন বাদে এসে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের কোন প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব দেখালেন সম্ভাবনাময় এই তরুণ এ্যাথলেট। কেনিয়ার নাইরোবিতে বৃহস্পতিবার সেমিতে দুই নম্বর হিটে আট প্রতিযোগীর মধ্যে পঞ্চম হন জহির। তিনি সময় নেন ৪৮.২২ সেকেন্ড। ফাইনালের টিকেট পাওয়া আট প্রতিযোগীর শেষজন তারচেয়ে ৪৬ সেকেন্ড কম সময় নিয়েছেন, অর্থাৎ তার লেগেছে ৪৭.৪৬ সেকেন্ড। এর আগে বুধবার এক নম্বর হিটে ব্যক্তিগত সেরা ৪৮.০০ সেকেন্ড সময় নেন তিনি। গত জুনে ব্যাংককে ২২তম এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪৯.১২ সেকেন্ড ছিল তার আগের সেরা। নিজের হিটে তৃতীয় হওয়া জহির সেমিফাইনালে ওঠা ২৬ প্রতিযোগীর মধ্যে চতুর্দশ হয়েছিলেন। কেনিয়ার ট্র্যাকে সাড়া জাগানো জহির মঙ্গলবার বিমানযোগে বাংলাদেশে ফেরেন। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব মন্টু। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘বাংলাদেশের এ্যাথলেটিক্সের দুঃসময়ের মাঝে জহিরের এই পারফর্মেন্স সত্যিই আশা জাগানিয়া। আমরা এরকমই এ্যাথলেট খুঁজছি। চেষ্টা করছি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের গড়ে তুলতে যেন শুধু সাফ অঞ্চলেই নয় আলো ছড়াতে পারে গোটা এশিয়া অঞ্চলেই।’ রাতে শেরপুর-জামালপুর রোডে যিনি দৌড়ে অনুশীলন করতেন, একসময় মোবাইল ফোন বিক্রি করে কেডস কিনেছিলেন, এবার যিনি কেনিয়াতে গতির ঝড় তুললেন, সেই জহির কি বলেন? ‘কোচরা আমাকে ভাল প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এর বাইরে নিজের উন্নতির জন্য বাড়তি অনুশীলনও করেছি রাতে নিজের রুমে। এই সাফল্যের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে।’ ছোটবেলায় স্কুলে সবসময় দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হতেন জহির। এছাড়া প্রত্যেকদিন বিকেল বেলা গোল্লাছুট খেলতেন। বন্ধুরা কখনও ধরতে পারতো না তাকে। ২০১৩ সালে বিকেএসপিতে যোগ দেন জহির। তারপর পরিপূর্ণ এ্যাথলেট হিসেবে বেড়ে ওঠার পর্ব। আগামী চার বছরে নিজের টার্গেটগুলোও সেট করে ফেলেছেন জহির, ‘প্রথমে অংশ নেব সাফ গেমস। এখানে আমাদের অনেকদিন পদক নেই। যদি আমার টাইমিং আরেকটু ভাল হয়, তাহলে সাফ গেমস থেকে দেশকে একটা পদক এনে দিতে চাই। এরপর এশিয়ান গেমস, ২০১৮ সালের জুনিয়র অলিম্পিক এবং ২০২০ অলিম্পিক। এগুলো নিয়েই ধাপে ধাপে এগুতে চাই।’ তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ জহিরের বাবা-মা দু’জনেই শিক্ষক। মা অবশ্য শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে এখন গৃহিণী। কেনিয়াতে গিয়ে কোন মজার অভিজ্ঞতা? ‘বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন নাÑ ওখানকার কারুর ধারণা নেই বাংলাদেশের স্প্রিন্টার আছে কি না। যখন হিটে নামি, তখনও কেউ কিছু বলেনি। হিটে যখন ভাল করলাম, তখনই তারা জানল বাংলাদেশেও স্প্রিন্টার আছে। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে বাংলাদেশ কি স্প্রিন্টারের দেশ? ওখানে কি স্প্রিন্ট হয়?’ জহির সম্পর্কে সাবেক স্প্রিন্টার মতি আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক এ্যাথলেটকে আমি দেখেছি। একমাত্র মিলজার ভাই ছাড়া জহিরের ফিজিক্স এ্যাথলেট হবার মতো। তবে জহিরের একটা মাইনাস পয়েন্ট আছে। ও অল্পতেই রেগে যায়। প্রাচীর টপকে বাইরে চলে যায়। এ জন্য ওকে অনেকবার সতর্ক করেছি। ও যদি এই মেজাজটা সামলাতে পারে তাহলে ওর আরও উন্নতি করা সম্ভব।’ প্রখ্যাত এ্যাথলেট কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘জহিরের শারীরিক গঠন, উচ্চতা ও ওজন সবই ভাল। ওর যে এনার্জি আছে সেটা কিভাবে ডিস্ট্রিবিউট করতে হবে সেটা ভালভাবে বোঝে।’
×