ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন সামনে রেখে কোন গোষ্ঠীর অপতৎপরতা কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

১২ নকল ডিবি পুলিশ গ্রেফতার, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ জুলাই ২০১৭

১২ নকল ডিবি পুলিশ গ্রেফতার, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ভুয়া ডিবি পুলিশের ১২ সদস্য গ্রেফতারের ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার রাত তিনটার দিকে যাত্রাবাড়ী থেকে হুবহু ডিবি পুলিশের টিমের মতো চলাফেরাকালে তারা আসল ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টিকে আট দশটা সাধারণ ঘটনার মতো না দেখে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে দেশে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে কোন কোন গোষ্ঠী তৎপর। গোষ্ঠীগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, গুম, খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার চেষ্টা করছে। যা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এজন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। সোমবার রাত তিনটার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ নুরুন্নবীর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১২ জন গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, বারেক মিয়া, গফ্ফার আহমেদ, মনির হোসেন, রাসেল বর্ষ ওরফে বর্ষা, আল আমিন ওরফে দিপু, মোর্শেদ ওরফে মিন্টু, সবুজ হোসেন শ্যামল, ওরনি আলম ওরফে ওরনী, রিয়াজ, মেহেদি হাসান, চালক নাজমুল হাসান ওরফে এরশাদ ও আরমান হোসেন। তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ৬ রাউন্ড তাজা বুলেট ভর্তি ২টি ম্যাগজিন, পুলিশের ব্যবহৃত লাঠির মতো লাঠি, একটি নকল ওয়্যারলেস সেট, ২টি হ্যান্ডকাফ, ধারালো চাকু, স্কচটেপ, গামছা, ডিবি পুলিশের আদলে তৈরি নকল জ্যাকেট ও একটি নোহা মাইক্রোবাস। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানান, গ্রেফতারকৃতরা ২ থেকে ৩টি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজ করে। তাদের প্রধান টার্গেট ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ও জমাদানকারীরা। দলের কোন এক সদস্য ব্যাংকে অবস্থান করে। তারা টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকদের সম্পর্কে ব্যাংকের বাইরে অবস্থানকারী দলের কাছে তথ্য দেয়। ব্যাংকের বাইরে থাকা দল গ্রাহকদের অনুসরণ করে। গাড়িতে থাকা দলকে সুবিধা মতো জায়গায় থাকতে বলে। গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে রওনা হয় পর তাদের পিছু নেয় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় থাকা দলটি। সুবিধাজনক জায়গা পাওয়া মাত্রই টাকা উত্তোলনকারীকে রাস্তায় আটকায়। নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর গাড়িতেই তার মুখ গামছা বা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সঙ্গে থাকা টাকা নিয়ে যায়। এরপর সুবিধাজনক জায়গায় চোখ বেঁধে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতরা গত ৬ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ব্র্যাক ব্যাংকের ধোলাইপাড় শাখা থেকে মনির হোসেন ও মহিউদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি প্রায় ৫ লাখ টাকা তুলে। তারা রিক্সায় করে সায়েদাবাদের দিকে যাচ্ছিলেন। যাত্রাবাড়ীর ন্যাব ইনকর্পোরেশন নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গেলে তাদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তাদের চোখ বেঁধে মারধর করে উত্তোলিত এবং সঙ্গে থাকা প্রায় সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে মনির ও মহিউদ্দিনকে যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড গিরিধারা এলাকায় নামিয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বারেক মিয়ার স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার স্ত্রী শাম্মী আক্তারের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত টাকার মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর ও পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম ও মোহাম্মদ নুরুন্নবী, দক্ষিণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোখলেছুর রহমান, ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে ডিবির পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ নুরুন্নবী জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত পবিত্র রমজান মাস, ঈদ ও পূজার সময় তৎপর থাকে। ওই সময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে মানুষের কাছ থেকে নানা কৌশলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। বছরের অন্যান্য সময় এদের তৎপরতা সাধারণত চোখে পড়ে না। হঠাৎ করেই ভুয়া হুবহু ডিবি পুলিশের মতো ঘোরাফেরা করার সময় ভুয়া ডিবি পুলিশের এই দলটি গ্রেফতার হয়। ঘটনাটিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারণ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ আরও সুন্দর করার জন্য সরকারের উপর মহল থেকে বার বার নির্দেশ আসছে। সে মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন ঘটাতে আমরা তৎপর রয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় জঙ্গী ও পেশাদার অপরাধীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। এমনকি ভারত ও বাংলাদেশেও চলমান অভিযানে বহু জঙ্গী ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে। সাঁড়াশি অভিযানের মুখে ছিনতাইকারী, ডাকাত, চোর, চাঁদাবাজসহ পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা কমে গেছে। ঈদের সময়ও এদের তৎপরতা ছিল না। আচমকা ভুয়া ডিবির বারো সদস্য গ্রেফতারের ঘটনা বিশেষ কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে গভীর তদন্তের পাশাপাশি আমরা সজাগ রয়েছি। গ্রেফতারকৃতরা প্রকৃতপক্ষেই প্রতারকরা জঙ্গী নাকি কোন গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে পরিকল্পিতভাবে ভুয়া ডিবি সেজে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।
×