ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাতারের সরকারী ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া

হ্যাকিংয়ের নেপথ্যে আমিরাত!

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৮ জুলাই ২০১৭

হ্যাকিংয়ের নেপথ্যে আমিরাত!

কাতারের সরকারী ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক করার পেছনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাত ছিল, মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন। ওই হ্যাকের ঘটনা ঘটে মে মাসের শেষের দিকে । ওই ঘটনায় কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কে অবনতি ঘটে এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি আরব দেশ এক জোট হয়ে কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওয়াশিংটন পোস্ট। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা ২৩ মে হ্যাক করার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে আমিরাত সরকারের ওই সিনিয়র কর্মকর্তা পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেছেন। তবে সেই হ্যাকের সঙ্গে আমিরাত সরকার আসলেই জড়িত কি-না সে বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। হ্যাকের ঘটনাটি ঘটে ২৪ মে। কাতারের সরকারী সাইট হ্যাক করে তাতে দেশটির আমির তামিম বিন হামাদ আল সানি’র নাম দিয়ে ইরানকে একটি ‘ইসলামী শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে ফিলিস্তিনী ইসলামপন্থী গ্রুপ হামাসের প্রশংসা করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের একদিন পর কাতারের সরকারী ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক হয়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের প্রথম পর্যায়ে সৌদি আরবে গিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমিরের ওই বক্তব্য উদ্ধৃত করে সৌদি আরব, বাহরাইন, আমিরাত ও মিসর তাৎক্ষণিকভাবে কাতারের মিডিয়া নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়। এরপর ওই চার দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর ফলে পুরো অঞ্চল জুড়ে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটে যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন যে, এর ফলে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই ব্যাহত হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল উতাইবা বলেছেন, হ্যাকিংয়ের সঙ্গে তার দেশের জড়িত থাকার অভিযোগ ‘ভুয়া’ বলে প্রত্যাখান করেছেন। তিনি বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের ওয়েবসাইট হ্যাক করার সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নয়।’ তিনি অভিযোগ করেন তালেবান থেকে হামাসের মতো চরমপন্থী গ্রুপ এবং গাদ্দাফির মতো লোকদের কাতার আর্থিক ও বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে সহায়তা করেছে। এর ফলে উগ্রপন্থার বিকাশ ঘটেছে। কাতার প্রতিবেশী দেশগুলোর স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করেনি। রাষ্ট্রদূত উতাবাইর ব্যক্তিগত মেইল এ্যাকাউন্টও হ্যাক হয়েছে। কাতার সরকারের সমর্থক গ্লোবাললিকস নামে একটি গ্রুপ সেগুলো হ্যাক করে দুয়েক মাস ধরে সেগুলো সাংবাদিকদের কাছে বিতরণ করেছে। ওই মেইলগুলোতে দেখা গেছে কাতারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আমিরাত যুক্তরাষ্ট্র ঘেঁষা নীতি অবলম্বন করেছে। কাতারের উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে এখন ১০ হাজারের বেশি মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। পারস্য উপসাগরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদর দফতর এটি। কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যে গত সপ্তাহে টিলারসন দেশটি সফর করেন। কিন্তু তার এই কূটনৈতিক মিশন সফল হয়নি। এই সঙ্কট নিয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে পররাষ্ট্র দফতরের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প চাচ্ছেন কাতারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু টিলারন সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ওপরই জোর দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এই সঙ্কটের কোন দ্রুত সমাধান আমরা আশা করছি না। সৌদি জোট যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে আশা করা যায় সবগুলো দেশ একমত হবে। যেসব ইস্যুতে সবার মতৈক্য আছে এরকম একটি অবস্থান থেকেই আমরা কাজ শুরু করতে চাই।
×