ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

শীতলক্ষ্যা পারাপারে ভোগান্তি

রূপগঞ্জে লক্কড়-ঝক্কড় ফেরি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৭ জুলাই ২০১৭

রূপগঞ্জে লক্কড়-ঝক্কড় ফেরি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১৬ জুলাই ॥ রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদে চলাচলরত দুটি ফেরি যানবাহনচালক ও যাত্রীদের কাছে ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। ফেরি দুটির মধ্যে একটি বছরজুড়েই থাকে বিকল। অন্যটি চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অদক্ষ চালকের কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ফেরি দুটি দিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে ফেরি কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা সমস্যা আর সঙ্কটের কারণেই তাদের এ দুরবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। জানা গেছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার (’৯৭ সাল) রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদের দু’পাড়ের সঙ্গে সহজে সেতুবন্ধের জন্য ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে। ওই সময় প্রাথমিক অবস্থায় একটি ফেরি দেয়া হলেও পরে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ’৯৯ সালের শেষের দিকে আরও একটি ফেরি বাড়ানো হয়। কিন্তু দু’যুগের বেশি সময়েও ফেরি দুটির লোক দেখানো মেরামত ছাড়া আর কোন বড় ধরনের পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ফেরিতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সরেজমিন দেখা গেছে , প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে ফেরি দিয়ে পার হচ্ছে ছোট-বড় সব যানবাহন। অদক্ষ চালক দিয়ে ফেরি চালানোর কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের। দুটি ফেরির মধ্যে একটি বছরজুড়েই থাকে বিকল। অন্যটিও চলে লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থায়। এটির ইঞ্জিনও প্রায়ই বিকল হয়ে যায়। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে থাকতে হয় যাত্রীসাধারণের। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৭টি জেলার যানবাহন ও যাত্রীরা এ ফেরি দিয়ে চলাচল করেন। জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কযোগে আসা প্রায় ১৭টি জেলার যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে ফেরিযোগে পারা হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করছেন। সিলেট, কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগাম, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ ১৭ জেলার যাত্রীরা এ রুট ব্যবহার করে থাকেন। ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলার কারণে অনেক যানবাহন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে এ ফেরি ব্যবহার করছে। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশের পথ হিসেবে যাত্রীসাধারণ শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে ফেরিযোগে চলাচল করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারণেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ফেরিগুলো প্রতি বছর ইজারা দেয়া হয় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। চলতি বছর ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ টাকায় ইজারা পায় সুমন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফেরির এ নাজুক অবস্থার কারণে ফেরির দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিন দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদের দুই পারের রাস্তার প্রস্থ কম থাকার কারণে রাস্তাটি দিয়ে বড় যানবাহনের চলাচল করতে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফেরি দিয়ে এসব যানবাহন সময়মতো পারা হতে না পারায় বেশিরভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর দুই পারের ফেরি লাগানো গ্যাংওয়ে ও পন্টুনের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। স্টিলের সিটগুলো খসে পড়ছে। পন্টুনের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচেও পানি কমাতে পারছে না। এছাড়া বর্ষার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার সঙ্গে লাগানো গ্যাংওয়ের বেশিরভাগ অংশ ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া অংশ ও ভাঙ্গা স্থান দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। ফেরির উপরের পিচ উঠে স্টিলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহনগুলো সিøপ করে। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। ইঞ্জিন ও বডি মেরামত করে এখন পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি। ওই ফেরিতে ইঞ্জিন পাল্টানো হলেও কোন কাজে আসছে না। যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময়মতো তীরে না পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল স্রোতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পরে অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে টেনে আনতে হয়। অন্য যে ফেরিটি রয়েছে, সেটির তলার অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বেশ কয়েক স্থান দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে। অতিরিক্ত পানি ঢুকে ফেরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। যাত্রীরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এসব বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ যানবাহন চালকদের। অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মজিদ, নুর হোসেন ও আব্দুল আলীম ফেরি দুটির ইঞ্চিন ধোয়ামোছার দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ তাদেরই ফেরির চালক হিসেবে ব্যবহার করছে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তির শিকার বেশ কয়েক যানবাহনচালক বলেন, সরকারী নিয়মানুযায়ী ফেরির ভাড়া দিচ্ছি, আমরা ভোগান্তির শিকার হব কেন? তারাব পৌর মেয়র হাসিনা গাজী বলেন, ফেরির পরিস্থিতি খুব খারাপ। লক্কড়-ঝক্কড় ফেরি বন্ধ করে দ্রুত নতুন ফেরি দেয়ার দাবি জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ফেরি সমস্যার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের মেকানিক্যাল বিভাগের (ফেরি) নির্বাহী প্রকৌশলী সুভাষ বাবু বলেন, শীঘ্রই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।
×