ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলের সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে খালেদা আজ লন্ডন যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ জুলাই ২০১৭

ছেলের সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে খালেদা আজ লন্ডন যাচ্ছেন

শরীফুল ইসলাম ॥ আজ শনিবার লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ সফরকালে ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবেন তিনি। দেড় মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান করে কোরবানির ঈদের পর দেশে ফিরেই তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কৌশল কি হবে, কারা দলীয় প্রার্থী হবে, জোটের শরিকদের কোন কোন আসন ছেড়ে দেয়া হবে, নির্বাচনী ইশতেহারে কি কি থাকবে এবং দেশী-বিদেশী কোন মহলের সহযোগিতা নেয়া হবে লন্ডনে এসব বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিস্তারিত আলোচনা হবে। আর সহায়ক সরকারের দাবি আদায় না হলে কি ধরনের আন্দোলন করা যেতে পারে সে আলোচনাও হবে। বিশেষ করে নির্বাচনকে কিভাবে সুষ্ঠু করা যায় এবং এ জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পাশাপাশি আরও কি কি করা যায় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চিকিৎসা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুদিন একান্তে সময় কাটানোর জন্য খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। তিনি লন্ডন গিয়ে চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করলেও বাস্তবে একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতিকেই এ সফরে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ জন্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দিয়ে কিছু ফাইল ওয়ার্ক করিয়েছেন তিনি। যা লন্ডন সফরকালে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া সাংগঠনিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারেক রহমানের পরামর্শ নেবেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রায় ২ বছর পর লন্ডন যাচ্ছেন তাই এ সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। তিনি সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা করবেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গেও পর্যালোচনা করবেন। লন্ডন থেকে ফিরে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবেন। আর এ রূপরেখা ঘোষণার পর আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারী দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করব। জানা যায়, মামলাজনিত কিছু সমস্যা থাকায় খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ সমস্যা মিটে যাওয়ায় আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে তিনি শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। ২০ জুলাই আদালতে হাজিরার তারিখ থাকলেও ওইদিন তার পক্ষে আইনজীবীরা যাতে মামলা মোকাবেলা করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে দলের নেতাকর্মীরাও বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া লন্ডন বিমানবন্দরেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্রবাসী দলীয় নেতাকর্মীরা স্বাগত জানাতে শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে লন্ডন সফরের আগে বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে সাংগঠনিক বিষয় এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার লন্ডন সফরকালে কোন অবস্থাতেই যেন দলে অনৈক্য বা কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সিনিয়র নেতাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বৃদ্ধি করে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের প্রস্তুতির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির নির্দেশ দেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সফরকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, নির্বাচনের ইশতেহার এবং সংসদীয় আসনভিত্তিক দলীয় ও জোটের প্রার্থী এ সফরেই চূড়ান্ত করা হবে। এখন দলের কূটনৈতিক তৎপরতা কেমন হবে তাও ঠিক করা হবে। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে দলের কোন নেতা কি দায়িত্ব পালন করবেন তাও এ সফরে ঠিক করা হবে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই লন্ডনের কিংসস্টনে ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। লন্ডনে গিয়ে সেখানেই থাকবেন খালেদা জিয়া। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি তার পা ও চোখসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসা করাবেন। এ সময় তিনি ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ ডাঃ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন। প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার ২ মেয়েও সেখানে এসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলিত হবেন। খালেদা জিয়া লন্ডন সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন আরও আগেই। এ মাসের প্রথমদিকেই তার লন্ডন সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মামলাজনিত কারণে সফরের সময় পিছিয়ে দেয়া হয় এবং শেষ সপ্তাহে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কারণ, ২০ জুলাই মামলার হাজিরা থাকায় এর আগে যেতে পারবেন না এমন আশঙ্কাও ছিল। পরে বিভিন্নভাবে দেন দরবার করে সব ঠিকঠাক করেছেন আইনজীবীদের মাধ্যমে। এখন তার অনুপস্থিতিতে আইনজীবীরাই মামলার হাজিরা দেবেন। ইতোমধ্যেই লন্ডনে খালেদা জিয়ার সকল কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি যে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন সেখানেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়া লন্ডন বিএনপি আয়োজিত দলীয় কর্মসূচীও চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য কমিটির সাবেক সভাপতি মাহিদুর রহমান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির বর্তমান সভাপতি এম এ মালেকসহ কজন নেতা বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ সমন্বয় করছেন। লন্ডন থেকে ফেরার পথে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওমরাহ করতে খালেদা জিয়া সৌদি আরবও যেতে পারেন। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নেন। এছাড়া লন্ডন বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান। এ সময় তিনি বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল ও নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের বিষয়ে তারেক রহমানের মতামত নেন। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে ওই বছর ২১ নবেম্বর দেশে ফিরে আসেন তিনি। লন্ডন থেকে ফিরেই তিনি সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন ও জাতীয় কাউন্সিলের তোরজোড় শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ১৯ মার্চ জাঁকজমকভাবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫৯২ সদস্যের নতুন ঢাউস নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। তবে এ কমিটিতে স্থায়ী কমিটির ৩টি পদসহ বেশ কটি পদ শূন্য রয়েছে। এবার লন্ডন সফরকালে এসব পদ পূরণের ব্যাপারে ছেলে তারেক রহমানের মতামত নেয়া হবে বলে জানা যায়। লন্ডন সফরের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরেশোরে শুরু করা হবে বলে ইতোমধ্যেই দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের মতামত নিয়েছেন। এছাড়া তিনি লন্ডন সফরকালে দলীয় কর্মকা- যাতে সঠিকভাবে চলে সে জন্য সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া লন্ডন সফর শেষে নির্বাচন ও দলীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন। এ কারণে, লন্ডনে গিয়ে তিনি চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে কিছুদিন সময় কাটানোর পাশাপাশি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি নির্বাচন ও সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। সহায়ক সরকারের দাবি আদায় না হলে কি ধরনের আন্দোলন হতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হবে।
×