ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টে যাবে দক্ষিণের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতি

স্বপ্নের পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১২ জুলাই ২০১৭

স্বপ্নের পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে

শংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে ॥ দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা পাল্টে দিতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে পায়রা নদীর ওপর ‘পায়রা সেতুর’ নির্মাণ কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে মাত্র দেড় বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল জনসাধারণের চলাচলের জন্য চার লেনের এ সেতুর দ্বার খুলে দেয়া হবে। এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, সড়ক বিভাগ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। দেশী-বিদেশী অর্ধ শতাধিক প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত টিমের সুশৃঙ্খল নেতৃত্বে এরই মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় দশ ভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দর ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা এবং যাতায়াতে এ সেতু নির্মাণে বর্তমান সরকার ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ শিগগির পরিদর্শনে আসছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মন্ত্রীর পরিদর্শনের মাধ্যমে সেতুর নির্মাণ কাজ আরও গতি পাবে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর থেকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সড়ক পথে দূরত্ব ১০৪ কিলোমিটার। এক সময়ে সামান্য এ পথে ৮টি ফেরি ছিল। বরিশাল থেকে এ পথ পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটায় পৌছাতে সময় লাগত কমবেশি অন্তত ৮-১০ ঘন্টা। এতে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিশেষ করে ফেরিঘাটগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। কারণ অধিকাংশ ফেরি নদীর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে চলতো। বর্তমান সরকারের আমলে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরইমধ্যে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের সবগুলো নদীতে ফেরির পরিবর্তে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি রয়ে গিয়েছিল কেবলমাত্র লেবুখালী সেতু। এ অঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণ কাজেও শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকার প্রায় সফলতার দ্বারে পৌছেছে। এ সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে বরিশাল থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পৌছাতে পথে আর কোন ফেরি থাকছে না। পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ফেরিঘাটের পায়রা নদীর ওপর ‘পায়রা সেতু’ (লেবুখালী সেতু) নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী সফরে এসে লেবুখালীতে পায়রা নদীর দক্ষিণ পারে ফেরিঘাট এলাকায় চারলেনের এ পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই পায়রা সেতুর আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কুয়েত সরকারের আর্থিক সহায়তায় চারলেনের পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনের প্রকৌশল সংস্থা লং জিয়ান রোড এ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী লিমিটেড। সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। এক হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে ‘এক্সট্রা ডোজ কেবল স্টেট’ পদ্ধতিতে। সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পায়রা সেতু প্রকল্পের কনসালট্যান্ট আবাসিক প্রকৌশলী মনোজিত কুমার সাহা জানান, এক্সট্রা ডোজ কেবল স্টেট পদ্ধতিতে চারলেনবিশিষ্ট নান্দনিক সেতুটি দাঁড়িয়ে থাকবে ৩৫০টি পাইলের ওপর। ইতোমধ্যে সেতুর দুই প্রান্তে ৯০টি পাইল নির্মিত হয়েছে। সেতুর দুই পাশে দশমিক ৯০ মিটার করে ফুটপাতের প্রস্থ থাকবে। ৩২ টি স্প্যানের এই সেতুর পিয়ার সংখ্যা ৩১ ও এবাটমেন্ট থাকবে দুটি। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুতায়িত হবে সেতুটি। এছাড়া সেতুর উভয় দিকে সাত কিলোমিটার জুড়ে নির্মাণ করা হবে এ্যাপ্রোচ সড়ক। সরেজমিনে দেখা গেছে, চায়নার নির্মাণ শ্রমিকরা দেশীয় শ্রমিকদের কাঁেধ কাঁধ রেখে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতুর গার্ডার পাইলিংয়ের কাজ ইতোমধ্যে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চমৎকার কর্মমূখর পরিবেশে নিরাপদে সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীন-ভারতসহ বিদেশি অর্ধশতাধিক প্রকৌশলী ও কারিগর।
×