ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

গত অর্থবছরের ১১ মাসে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৪২ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১২ জুলাই ২০১৭

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৪২ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়ছেই। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এই ঘাটতি ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ে মোট ঘাটতি হয়েছে ২১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থবছরের পুরো সময়ে এই ঘাটতি ২৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। অর্থবছরের ১১ মাসে এই বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। মূলত রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয়ের ধীরগতি ও প্রবাসী আয়ের ছন্দপতনের কারণে চলতি হিসেবের ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে রফতানি আয় বাড়লেও তা কাক্সিক্ষতমাত্রায় হচ্ছে না। কিন্তু আমদানি ব্যয় বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এতে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। আর বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ধারাবাহিক কমছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। আবার আমদানিজনিত চাপে দেশের ভেতরে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। ফলে চাহিদার তুলনায় ডলারের যোগান কমে গেছে। এ কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঘটছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ১ টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ২ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, বর্তমানে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা ৬০ পয়সায়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রেমিটেন্স। কিন্তু গত অর্থবছরজুড়েই দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ নি¤œমুখী ধারায় ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) হিসাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। যদিও ১২ মাসে এই কমার হার ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। এ সময়ে রফতানি আয়েও কাক্সিক্ষত গতি আসেনি। অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে আয় করেছে ৩ হাজার ১০৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল দুই হাজার ৯৯১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসেবে ১১ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে এ সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। সে হিসেবে ১১ মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এই হিসাবে গত অর্থবছরের ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৯১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। উল্লেখ্য, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। এদিকে, রফতানি আয়ে ধীরগতি ও প্রবাসী আয় ব্যাপকহারে কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চলতি হিসাবে ২১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার (-) ঋণাত্মক হয়েছে। অর্থবছরের ১০ মাসের হিসাবে এই ঘাটতি ছিল ১৭৬ কোটি ডলারের মতো। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১১ মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ সময়ে সেবা খাতেও ঘাটতি বেড়েছে। গত অর্থবছরের ১১ মাসে এই ঘাটতি হয়েছে ৩১০ কোটি ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। প্রতিবেদন পর্যালোচনা আরও দেখা যায়, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছর জুড়েই চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। সাধারণত চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোন ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। তবে গত অর্থবছরের ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেন সারণির আর্থিক হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থা অনুকূলে রয়েছে। এ সময়ে আর্থিক হিসাবে ৪১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারে পোর্টফলিও বিনিয়োগ বাড়ায়-ই এই অনুকূল অবস্থা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে নিট সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে ১৬২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসেবে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময়ে শেয়ারাবাজারে বিদেশী বিনিয়োগও বেড়েছে। অর্থবছরের ১১ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর ফলে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
×