ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে চালের রফতানি মূল্য বাড়ায় দেশের বাজার নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ জুলাই ২০১৭

ভারতে চালের রফতানি মূল্য বাড়ায় দেশের বাজার নিয়ে সংশয়

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে ও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ ভাগ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগ নির্ধারণ করে সরকার। তবে বাংলাদেশে চালের শুল্কহার কমানোর খবরে ভারতীয় রফতানিকারকরা এরইমধ্যে চালের দাম টনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ ডলার করে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে চালের আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেয়ায়, দেশের বাজারে চালের দাম আশানুরূপ কমছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুল্কহার কমানোর ফলে কেজিতে চালের শুল্ক ৬ থেকে ৭ টাকা করে কমেছে। এর বিপরীতে দেশের বাজারে আমদানিকৃত চালের দাম কমেছে ৪ থেকে ৫টাকা করে। তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, শুল্কহার কমিয়ে দেশের বাজারে চালের দাম কমানোর বিষয়ে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ফলপ্রসূ হচ্ছে না। বোরো মৌসুমে দেশের হাওড় অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়ায় ও ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দেশে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে করে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ কমায় বাজারে চালের দাম উর্ধমুখী হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দাম সাধারণের হাতের নাগালে রাখতে ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ ভাগ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগ নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুল্কহার কমানোর পর হিলি বন্দর দিয়ে চালের আমদানি বেড়ে গেছে। বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাল আমদানিতে শুল্কহার কমার পরে ২০ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ৯ কার্যদিবসে ২৪৮টি ট্রাকে ৮ হাজার ৮ টন চাল আমদানি হয়েছে। হিলি স্থলবন্দরে চাল কিনতে আসা লুৎফর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর পর আমরা জানলাম যে, চালের দাম কেজি প্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা করে কমবে। কিন্তু বাস্তবে চাল কিনতে এসে আমরা দাম কম পাচ্ছি ৪ থেকে ৫ টাকা। এ নিয়ে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে চাল বিক্রি করতে দাম নিয়ে প্রায় ঝামেলাই পড়তে হচ্ছে। মূলত ভারতের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই আমাদের দেশের বাজারে চালের দাম আশানুরূপভাবে কমছে না। হিলি বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা অনুপ বসাক জানান, চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বেশি হচ্ছে। এর ফলে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা করে কমেছে। তবে বাজারে আমদানিকৃত চালের দাম কমলেও দেশি জাতের চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মামুনুর রশিদ, রাজিব দত্ত ও আব্দুল মান্নান জানান, চালের জন্য সারাদেশে হিলি স্থলবন্দর সুপরিচিত। ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাল আমদানি হতো এই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কহার আরোপ করা হয়। পরে গত অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বাজেটে তা আরও ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর মিলে এ শুল্কহার দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে। দেশের কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। ফলে গত বছর ভারত থেকে চাল আমদানিতে পড়তা না থাকায়, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি একেবারে কমে গিয়েছিল। মাঝে মধ্যে দু’এক গাড়ি চাল আমদানি হতো। গত ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে চাল ভারত থেকে দেশে আমদানি হতে শুরু করে। তারা জানান, বাংলাদেশে চালের ওপর থেকে শুল্কহার কমানোর সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে ভারতীয় রফতানিকারকরা। বর্তমানে প্রতিটন চালের দাম প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ ডলার করে বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। চাল আমদানিতে শুল্কহার কমার আগে যে চাল ভারত থেকে ৩৯০ থেকে ৪শ’ ডলারে আমদানি করা হতো, এখন সেই চাল তারা ৪৪০ থেকে ৪৫০ ডলার দাম নিচ্ছেন। এর ফলে দেশের বাজারে চালের দামের ওপর যেমন প্রভাব পড়বে, তেমনি সরকার যে আশায় চালের আমদানি শুল্ক কমালো, তার বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
×