ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মসলা চাষ ও গবেষণায় এগোচ্ছে দেশ

বগুড়ায় উদ্ভাবিত ১৩ মসলার উফশী ২৮ জাত

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১০ জুলাই ২০১৭

 বগুড়ায় উদ্ভাবিত ১৩ মসলার উফশী ২৮ জাত

সমুদ্র হক ॥ মসলা চাষ ও গবেষণায় দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। দেশের একমাত্র বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র বহুমুখী উদ্ভাবন তাক লাগিয়েছে। এখন ঘরেই আদার চাষ করা যাবে। যা প্রতি বাড়ির বছরের আদার চাহিদা মেটাবে। সাদা এলাচও দেশেই উৎপাদন সম্ভব। এ ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবন মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত করলে মসলা আমদানিতে বহু কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে না। বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড়ের অদূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় এ মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৯৬ সালে। মসলা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটাবার লক্ষ্য নিয়ে ৭০ একর প্লটের ওপর গবেষণা শুরু হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) নজরদারিতে এ গবেষণা কেন্দ্রটি পরিচালিত। এ কেন্দ্র গত ২১ বছরে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) নানা জাতের মসলা উদ্ভাবন করেছে। ইতোমধ্যে ১৩ মসলার উফশী-২৮ জাত উদ্ভাবিত এবং মাঠ পর্যায়ে অবমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সকল মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। উফশী জাতের মধ্যে আরও আছেÑ পেঁয়াজের ৫, হলুদের ৫, রসুনের দুইটি, মরিচের ৩, আদার দুইটি, মেথির ২, কালিজিরা, গোলমরিচ, ধনিয়া, বিলাতি ধনিয়া, পাতা পেঁয়াজ, আলু বোখারা ও গোল মরিচের একটি করে জাত। দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ উৎপাদিত হচ্ছে তা দিয়ে বছরের চাহিদা মিটছে না। আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের একেক এলাকার মাটি একেক ধরনের মসলা উৎপাদনের উপযোগী। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র যা উদ্ভাবন করছে তা মাঠ পর্যায়ের কৃষকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে (বিএডিসি) জানানো হয়েছে। এ কেন্দ্রে বিদেশ থেকে নমুনা (স্যাম্পল) এনেও গবেষণা করা হচ্ছে। এমন একটি মসলা সাদা এলাচ। দেশে বর্তমানে সবুজ কালো নীল সাদা বেগুনিসহ ১৩ জাতের এলাচ আমদানি হয়। এলাচ আসে ভারত চীন জাপান নেপাল ভিয়েতনাম থেকে। বেশি দাম সাদা এলাচের। সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম জানান, বিদেশ থেকে সাদা এলাচের জাত এনে দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় কিভাবে উৎপাদন করা যায় তার গবেষণা চলছে। তিনি আশাবাদী সাদা এলাচ এ দেশেই উৎপাদন সম্ভব। এ কেন্দ্রের বড় সাফল্য আদা উৎপাদনে। আদা চাষে মাটি না হলেও চলবে। বাড়ির আঙিনায়, ছাদে পলিব্যাগ বিছিয়ে তার ওপর নারিকেলের ছোবরা, ধানের গুঁড়া (তুষ) কাঠের গুঁড়া একত্রিত করে চাষের ছোট্ট প্লট বানিয়ে দিনা কয়েক রেখে দিয়ে তার মধ্যে আদা বুনতে হয়। একটি সল্যুশন প্রয়োগ করতে হয় সারের পরিবর্তে। আদা বপনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল মাস। বপনের দশ মাসের মধ্যেই আদা ফলে। দেশে আদার চাহিদা বছরে দেড় লাখ মে. টন। উৎপাদিত হয় ৬০ হাজার মে. টন। বাকিটা আমদানি। দেশের কোন এলাকায় কোন ধরনের মসলা উৎপাদন করা যায় তা নিরূপণে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র ও ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আঞ্চলিক মসলা কেন্দ্র মাগুরা কুমিল্লা ও গাজীপুরে। উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র লালমনিরহাট ফরিদপুর সিলেট ও খাগরাছড়িতে। প্রতিটি কেন্দ্রের গবেষণালব্ধ ফল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বারি) নিয়মিত জানানো হয়। দেশে মসলার চাহিদা বাড়ছে। প্রতিবছর আমদানি করতে হয় নানা ধরনের ১৪ লাখ মেট্রিক টন মসলা। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ১৭ লাখ মে. টন। উৎপাদিত হয় ৯ লাখ মে. টন। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। মসলা গবেষণা কেন্দ্র সকল মৌসুমে চাষ উপযোগী পেঁয়াজের ৫টি উফশী জাত উদ্ভাবন করেছে। বোরো ধান ওঠার পর চারা রোপণ করলে দুই মাসের মধ্যে উফশী পেঁয়াজের ফলন পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে উফশী পেঁয়াজের ফলন মেলে প্রতি হেক্টরে অন্তত ২০ মে. টন। এ পর্যন্ত বারি-১ থেকে বারি-৫ জাতের উফশী পেঁয়াজ উদ্ভাবিত হয়েছে। পেঁয়াজের পাতারও (স্থানীয় ভাষায় ফুলকি) উফশী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে হলুদের গড় ফলন হেক্টরে প্রায় আড়াই মে. টন। গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত উফশী হলুদের জাতে ফলন মেলে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ মে. টন। গত ৫ বছরে বারি-১ থেকে বারি-৫ পর্যন্ত হলুদের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। রসুনের দুইটি বিশেষ জাত বারি-৩ ও বারি-৪ উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশে রসুনের চাহিদা বছরে সাড়ে ৪ লাখ মে. টন। উৎপাদিত হয় ৩ লাখ মে. টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। ধনিয়া বিলাতি ধনিয়া মৌরি কালিজিরা গোলমরিচ মেথি আলুবোখারর উফশী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে।
×