ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনডিতে এক মাস ধরে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৮ জুলাই ২০১৭

ডিএনডিতে এক মাস ধরে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ এক মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ডিএনডি’র বাঁধের কয়েক লাখ মানুষ। কিছুতেই কমছে না পানি। বৃষ্টি আসলেই বাড়ছে জলাবদ্ধতা। ডুবে গেছে নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। রান্নাঘরও পানির নিচে। দু-একদিন জলাবদ্ধতা কিছুটা কমলেও আবার বৃষ্টি হলেই বেড়ে যাচ্ছে। ডিএনডির মিজমিজি আল-আমিননগর এলাকার রাস্তাটি গত এক মাস ধরে দুই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। রাস্তায় বাথরুমের ময়লা-আবর্জনা ভাসছে। তবুও চলাচল করতে বাধ্য পানিবন্দী মানুষ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজির আল-আমিননগরের বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার এ্যাপেক্ষ করে বলেন, ঘরে ভেতরে পানি, রাস্তায় হাঁটুর উপরে পানি। এখানে বাস করাই দুষ্কর। আমরা আর কিছুই চাই না শুধু ডিএনডি’র পানি কমিয়ে দেন। শুধু আল-আমিননগরই নয়। ডিএনডি’র বাঁধের রাজাধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা বিভিন্ন এলাকায় গত এক মাস ধরে বর্ষণের পানিতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ডুবে আছে। কোন সুরাহা হচ্ছে না। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ। বৃষ্টির পানির সঙ্গে পচা ও নর্দমার ময়লা-আবর্জনা মিশে দুর্বিষহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চর্মসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এদিকে ডিএনডি’র অভ্যন্তরে জমানো পানি সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি পাম্প দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়। কিন্তু গত এক মাস ধরে ১২৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাম্প বিকল হয়ে রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পাম্পটি সচল করার উদ্যোগে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অবশ্য পাম্প হাউস কর্তৃপক্ষ বলছে, শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বিকল পাম্পটি সচল করা সম্ভব নাও হতে পারে। যদি আরও বৃষ্টি হয় তবে ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়ে যেতে পারে মনে করছেন অনেকেই। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ডিএনডি’র পানি নিষ্কাশনে দাবি জানান। এক মাস ধরে জলাবদ্ধতা রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার নিচু এলকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, মিল-কারখানা, সবজি ক্ষেত, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা হালকা ও ভারি বর্ষণের পানিতে গত মাস ধরে ডুবে আছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি কমলে জলাবদ্ধতা কমে। বৃষ্টি বাড়লে জলাবদ্ধতা বাড়ে। খবর নিয়ে জানা যায় অব্যাহত প্রবল বর্ষণে মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, আল-আমিনগর, রসুলবাগ, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, তুষার ধারা, বক্সনগর, হাজীগঞ্জ, ধনকুন্ডা, শান্তিগনর, জালকুড়ি খিলপাড়া, উত্তরপাড়া, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, হাজীনগর, মাতুইয়াল, শহীদ নগর, সবুজবাগ, ভূইঘর, দেলপাড়া, ইসদাইর, গাবতলি, লালপুর, নন্দনালপুর, ডগাইর, মাতুয়াইল, টেংরা, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কদমতলী পশ্চিমপাড়া, কলেজপাড়া, নয়াপাড়া ও ভূইঘরসহ নিচু এলাকার বিভিন্ন স্থানের বাড়িরঘর ও রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। এতে পানিবন্দী ডিএনডি’র কয়েক লাখ মানুষ। বৃষ্টির পানির সঙ্গে নর্দমার ড্রেন ও বাথরুমের ময়লা মিশে দুর্বিষহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ডিএনডিতে এখন ২০ লাখ মানুষের বসতি ১৯৬৬-৬৮ সালে রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানার ৮ হাজার ৩শ’ ৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ- ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৯ সালের ভয়াবহ বন্যায় সারা দেশ পানিতে ডুবলেও ডিএনডি থাকে বন্যা মুক্ত। ফলে এরপর থেকে ডিএনডিতে বাড়িঘর নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। কৃষি জমিতেই শুরু হয় বসতি। বর্তমানে ডিএনডিতে আনুমানিক ২০ লাখ লোক বসবাস করছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা ধারণা করছেন। তবে এর সঠিক হিসেবে কেই দিতে পারেনি। প্রতিবছর বর্ষা শুরু হলেই ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এবারও সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। ইসদাইর এলাকার জীবন মিয়া জানান, এ এলাকার কোনো কোনো বাড়ির একতলায় হাটুর উপরে পানি। ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। আবার ময়লা আবর্জনা ও ডাইংয়ের কেমিকেলের বর্জ্য বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ পানিতে টানা যারা হাটতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের চর্মরোগ, এলার্জী, ঠান্ডা-জ্বর ও ডাইরিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন। কদমতলী এলাকার গার্মেন্টস কর্মী শাহাদাত ও সালাম, জানায়, প্রতিদিন নোংরা পানি দিয়ে কাজে যেতে ও আসতে হয়। ময়লা ও দুগর্ন্ধযুক্ত পানি হওয়ায় পায়ে চুলকানিসহ নানা সমস্য দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঘরের চারদিকে পানি থাকায় রাতে সাপের ভয় রয়েছে। পানি না কমায় এসব ঘরে বাস করা যাচ্ছে না। এরা এখানকার বাসা ছেড়ে অন্যত্র বাসা দেখছেন বলেও জানায়। নিষ্কাশন খালগুলো দখল হয়ে গেছে ডিএনডি সূত্রে জানা যায়, ডিএনডি থেকে সুষ্ঠুভাবে সেচ কার্য পরিচালনা করা এবং পানি নিষ্কাশন করার জন্য ৯টি সেচ খাল, ৯টি ডিটিও খাল, ২১০টি আউট লেক খাল, ৮৫টি চকবন্দী খাল অনুসারে ১০টি নিষ্কাশন খাল রয়েছে। এ ছাড়াও এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইনটেক খাল, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেইন ক্যানেল টার্ন আউট খাল রয়েছে। এর মধ্যে চ্যানেল-১ খালের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার, চ্যানেল-২ এর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, পাগলা খাল ৩ কিলোমিটার, জালকুড়ি খাল ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার, শ্যামপুর খাল ২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার, ফতুল্লার খাল ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার ও সেকেন্ডারি চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এ সকল খালগুলোর অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। খালগুলো দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, ক্লাব ঘরসহ বিভিন্ন অফিস। নিষ্কাশন খালগুলো দখল করায় ও খালগুলো ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না বলে পাম্প হাউসের কর্মকর্তা জানান।
×