ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিবান্ধায় বাঁধ ভেঙ্গে গেছে

তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ জুলাই ২০১৭

তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে, ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১ জুলাই ॥ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলাসহ জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানিতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করে। হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামে শনিবার সকালে দুইটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এ উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে শনিবার দুপুরে বিপদ সীমার ১০ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পাউবো সূত্র জানায়, তিস্তা পারের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভারত গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচ- গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরও কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব ক’টি গেট (৪৪টি গেট) খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার পানিতে পাটগ্রামে অবস্থিত বহুল আলোচিত আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নদীসংলগ্ন চর এলাকার ১৮ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। দক্ষিণ ধুবনী গ্রামে বাঁধের ২টি স্থান ভেঙ্গে গেছে। ফলে ওই এলাকায় বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারাজ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। উজানের ঢলে তিস্তা বিপদসীমায় স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। চলতি বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ প্রথম বিপদসীমা অতিক্রম করল। তবে উজান হতে যে ঢল আসছে তা কাঁদামাটি মেশানো ঘোলা পানি। এদিকে উজান হতে বড় ধরনের ঢল ধেয়ে আসার আশঙ্কায় তিস্তা পারের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন। এদিকে তিস্তা বন্যায় ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার, গোলমু-া, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পার্শ¦বর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলার নদীবেষ্টিত চর ও গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। ডিমলা ফরেস্টের চরের ১৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ি দোলাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন আরা জানায় তাদের গ্রামের ঘরবাড়ির উঠানে তিস্তার নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া নদীর ধারের ধানি ও সবজি আবাদের জমিগুলো তলিয়ে গেছে। পূর্ব ছাতনাই ইউপির ঝাড়সিংশ্বর এলাকার বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তাবেষ্টিত চর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে। অপরদিকে জলঢাকার ডাউয়াবাড়ি, হলদিবাড়ি, গোপালঝাড়-আলসিয়াপাড়া এলাকায় বন্যার পানির স্রোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও এখন পানি কমে আসছে। আমরা সর্তক অবস্থায় রয়েছি। পাশাপাশি তিস্তার চর ও গ্রামগুলোর খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রমতে, তিস্তা অববাহিকার উজানের ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের কারণে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। সকাল ৬টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে থাকলেও বিকেলে তা বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
×