ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৯ জুন ২০১৭

ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ঈদের ছুটিতে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নানা ধরনের অপরাধ মুক্ত রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ-উন্নয়নে রীতিমতো চমক দেখিয়েছে সরকার। শুধু ঈদের ছুটিই নয়, গোটা রমজান মাসই সব ধরনের অপরাধী তৎপরতা রুখে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা। ম্যাজিক দেখানোর মতো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ-উন্নয়নের কৃতিত্ব দেখানোর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বলে বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হস্তে অপরাধ দমনের ব্যাপক তৎপরতায় ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ নানা ধরনের শতাধিক অপরাধী চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার অভিযান এতই জোরদার ছিল যে রাজধানী ঢাকাতে একটি চুরির ঘটনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বাহিনীর সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দের ভাগাভাগি করা থেকে বঞ্চিত হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। এই ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সফলতা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্র জানায়, এবারের রমজান ও ঈদের ছুটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর এখন আবার পুলিশের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া আন্দোলনের হুমকি মোকাবেলার প্রস্তুতি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পবিত্র রমজান ও ঈদের ছুটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ঘটনার রেশ না কাটতেই আবার বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গত বছর রমজান মাসে রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে বড় ধরনের জঙ্গী হামলার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী যে জঙ্গী হামলার ধারাবাহিকতা ছিল তা এবারের রমজান ও ঈদের ছুটিতে ছিল অনুপস্থিত, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ছিল এক নতুন চেহারার মাত্রা। এবারের রমজান মাস ও ঈদের ছুটিতে কোন জঙ্গী হামলা, সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক হত্যাকা- বা গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটেনি। বড় ধরনের ছিনতাই বা ডাকাতির খবর পাওয়া যায়নি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নিয়ে সহিংসতা হয়নি। মাদকদ্রব্য, বৈদেশিক মুদ্রাসহ বড় ধরনের চোরাচালান ছিল অনুপস্থিত। এমনকি বহুল সমালোচিত ক্রসফায়ারের কোন ঘটনা ঘটেনি। জাল টাকার জমজমাট ব্যবসার কোন খবর পাওয়া যায়নি। যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু থাকায় ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াতে কোন ভোগান্তি ও দুর্ভোগ ছিল না। একমাত্র হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদার খুনসহ যে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটার জন্য দায়ী খুনীসহ অপরাধীদের গ্রেফতারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ছিল নজিরবিহীন। বাহিনীর সদস্যদের ঈদের ছুটি বাতিল করে ফাঁকা রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান, টহল জোরদার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনসহ নানা ধরনের অপরাধী দমনে তাদের ভূমিকা ছিল চমৎকার। এবারের রমজান মাসের পর ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। যে কোন ধরনের আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বেশি। এ ধরনের নিরাপত্তার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সদস্যরা নাশকতার পরিকল্পনা চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয় যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণস্থান ও গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, উচ্চ আদালতসহ রাজধানীর বিপণিবিতানসহ বিভিন্নস্থানে বসানো হয় অজস্র সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি মোতায়েন রাখা হয় বিপুল পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যকে। ঈদগাহ ময়দানে আসা সর্বস্তরের মুসল্লির নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ভাসমান দোকানপাট ও হকার তুলে দেয়া হয়। যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের বম্ব ডিজপোজাল ইউনিট দফায় দফায় তল্লাশি চালায়। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডও ছিল তৎপর। রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া নির্দেশ ও নয়া কৌশল নিয়ে তদারকী করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, এবারের রমজান মাস ও ঈদের ছুটিকালীন জঙ্গী, জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধীদের কোন তৎপরতা চালাতেই দেয়া হয়নি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাত দলের তৎপরতার চেষ্টা রুখে দিয়েছে বাহিনীর সদস্যরা। এবার বাহিনীর দশ সহস্রাধিক সদস্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ইউনিফর্ম পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াত, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য, মহিলা পুলিশ দলসহ বাহিনীর দশ সহস্রাধিক সদস্যের নিরলস প্রচেষ্টা এবারের রমজান মাস ও ঈদের ছুটিতে জনমনে শান্তি ও স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে এনেছে।
×