ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটি

বিনোদন কেন্দ্রে জনস্রোত

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৯ জুন ২০১৭

বিনোদন কেন্দ্রে জনস্রোত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার মসুদ্র সৈকত বিনোদন প্রত্যাশীদের প্রধান আকর্ষণ, এছাড়া রাজশাহীতে শিশুপার্ক ও পদ্মার তীর, বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা তীর ও বরিশাল, বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নওগাঁ, নরসিংদী এবং কলাপাড়ায় ভ্রমণপিপাসুদের উপচেপড়া ভিড়। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো। চট্টগ্রাম আষাঢ় মাসেও শুষ্ক আবহাওয়া থাকায় এবারের ঈদ আনন্দে চট্টগ্রামে কোন ধরনের ছন্দপতন ঘটেনি। পর্যটন স্পটগুলো ছিল লোকে-লোকারণ্য। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের মানুষের ঢল নামে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। বিশেষ করে ঈদের দিন বিকেল থেকে যেন যে জনস্রোত থামছেই না। ঈদের ছুটি শেষ হয়ে গেলেও মানুষ এখনও উৎসব আমেজে মেতে আছে। পুরো কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে গড়াবে আগামী সপ্তাহ। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বরাবরই বিনোদন প্রত্যাশীদের প্রধান আকর্ষণ। ঈদের নামাজের পরই পতেঙ্গা প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে রিক্সা, অটোরিক্সা, প্রাইভেট কার, বাস, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে মানুষ ছুটতে থাকে পতেঙ্গা অভিমুখে। বরাবরের মতো এবারও গভীর রাত পর্যন্ত সমুদ্রসৈকত ছিল মানুষে ঠাসা। সেখানে পণ্যের পসরাগুলোর বিক্রিও দেদার। তবে দামি পণ্যের বিকিকিনি নয়, এদিন সাধারণত বিচ মার্কেটে বেশি চালু থাকে খাবারের দোকানগুলো। ঈদের আগের দিন থেকে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় পথ ঘাটও ছিল শুকনো। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল বেশ সুন্দর, যা জনস্রোত বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেক কনকর্ড সী ওয়ার্ল্ডেও ছিল মানুষ আর মানুষ। দিনভর এমনকি রাত অবধি ছিল নানা আয়োজন। শিশু কিশোর এবং তরুণ তরুণীরা রাইডে আরোহণ করে বিনোদনে মেতে ওঠে। পাশেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। বাঘ, সিংহ এবং নানা প্রজাতির প্রাণী দেখতে সপরিবারে আসছে মানুষ। ঈদ এবং এরপর আরও দুদিন গত হয়ে গেলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখনও উপচেপড়া ভিড়। এ সপ্তাহ কেটে যাবে ঈদের আনন্দে। রাজশাহী ঈদের ছুটিতে রাজশাহী শহর ফাঁকা হলেও ভিড় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ঈদের দিনের বিকেল থেকেই জমিয়ে চলছে ঘোরাঘুরি। শহরের চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য অনুপস্থিত থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল না হতেই মিলেমিশে ঈদ আনন্দ উপভোগের জন্য সবাই একযোগে বেরিয়ে পড়েন। ঈদের পর বুধবার অফিস আদালত খুললেও সেখানে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। তবে নগরীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক আর পদ্মা নদী ঘিরে মানুষের ঢল নেমেছে। সব জায়গাতেই উপচে পড়া ভিড়। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শিশু পার্ক, আই ও টি-বাঁধ, বড়কুঠি, শিমলা পার্ক, পদ্মা গার্ডেন, ভদ্রা পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পট বিনোদন পিপাসুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দ্যরে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সবাই প্রাণভরে উপভোগ করেছেন ঈদের বাঁধভাঙা খুশি ও অনাবিল আনন্দ। মহানগরজুড়ে এখন পুরোদমে চলছে ঈদের ছুটির আমেজ। ঈদের ছুটিতে পাল্টে গেছে কোলাহল আর যানবাহনে ঠাসা নগরের চেহারা। ঈদের দিন বিকেল থেকেই অনেকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন করতেই দিন পার হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে জড়ো হয় বাড়িতে। সবার এক সঙ্গে হওয়ার আনন্দ তখন ঘোরাঘুরির চেয়েও বেশি মনে হয়। তাই বাড়ির ছোটদের নিয়ে ঈদের পরের দিনই বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বলে জানান রফিকুল। এই ক্ষেত্রে শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানাই পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে। কারণ এখানে এক সঙ্গে জীবজন্তু, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আনন্দ-বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডস রয়েছে। শহীদ জিয়া শিশু পার্কে বেড়াতে আসা মোস্তফা কামাল বলেন, তারা দু’জনই সরকারী চাকরিজীবী। বুধবার অফিস খুলছে তারা একদিন বেশি ছুটি নিয়েছেন। কংক্রিটের নগরজীবনে শিশুদের একটু বিনোদন দিতে কেন্দ্রীয় উদ্যানে আসা। তাদের তিন বছরের শিশু সাফা বেজায় খুশি। বিভিন্ন রাইডে উঠে আনন্দ উপভোগ করছে। বিকেলের পর ঢল নামছে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে। প্রায় পানিশূন্য পদ্মা নদী হলেও পদ্মার আকর্ষণ সবসময় থাকে বিনোদন পিয়াসীদের মধ্যে। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় ঘুরছে পদ্মার স্বচ্ছ পানিতে। এদিকে ঈদের ছুটি শেষে বুধবার প্রথম কর্মদিবস শুরু হলেও অফিস পাড়ায় ঈদের আমেজ কাটেনি। কর্মচাঞ্চল্য এখনও ফেরেনি। ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে লোকজন কম থাকায় বিভিন্ন দফতরের কাজ-কর্ম চলেছে ঢিলেঢালাভাবে। ছুটি শেষে যারা অফিসে গেছে তাদের সময় কেটেছে কোলাকুলি, ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় করে। বগুড়া ঈদের উচ্ছ্বাসে দল বেঁধে ছুটোছুটি। ঘর ছেড়ে বাইরে। ‘কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা... ডানা মেলে...’ বর্তমান প্রজন্ম নিজেরাই খুঁজে নিয়েছে ঈদের বিনোদনের ঠিকানা। নৌকায় চরে নদী ভ্রমণ। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি। এবারের ঈদ আনন্দে বড় আকর্ষণ। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতে প্রজন্মের ঢল নামে। নগরীর তরুণ-তরুণীরা ঈদের দিন ও পরবর্তী দিন যে যে ভাবে পেরেছে ছুটে গেছে যমুনার তীরে। যমুনার কয়েকটি তীর, রিভেটমেন্ট, হার্ড পয়েন্টে কোথাও ছিল তিল ধারণের ঠাঁই। এলাকার লোকজন তো বিস্মিত হয়েছে। তাদের ভাবনাতেও আসেনি তরুণ-তরুণীরা এভাবে ছুটে আসবে। দূরের চরগ্রাম থেকে নৌকার পর নৌকা এসেছে। বড় নৌকা ছোট নৌকা গয়না নৌকা সবই এসেছে। নৌকায় চরে নদীর মধ্যে যতদূর যাওয়া যায়। শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকার পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু স্পিড বোটও প্রজন্মের উচ্ছ্বাসকে ধরে রাখতে নৌকার মিছিলে যোগ দেয়। কে যে কেথায় কোন দিকে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই। যতদূর মন চায়। ভাড়া কোন ফ্যাক্টর নয়। যারা প্রণয়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নৌ ভ্রমণে গেছে তাদের দেখে মনে হবে উড়ন্ত বলাকা। এত ভিড়ের মধ্যে একটি বিষয় প্রশংসনীয় তা হলো: নৌকার মাঝিরা কোনভাবেই অতিরিক্ত যাত্রী তোলেনি। যমুনার মূল তীর ও হার্ড পয়েন্ট থেকে মাঝ নদী পর্যন্ত ভাড়া জন প্রতি ২০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দূর বা কোন চরে গেলে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া। নদী রিজার্ভ করলে আলাদা ভাড়া। বাসের ছাদের ওপরে বসে ভ্রমণের মতো নদীর ছইয়ের ওপরে বসে ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। ভিড় সামলাতে এই অবস্থা। কালিতলা এলাকার নৌকার মাঝি রুস্তম আলী বললেন, বছর দুয়েক হয় ঈদের দিন ও পরদিন যমুনায় নৌকা ভ্রমণ শুরু হয়। এবার সবচেয়ে বেশি ভিড়। আরেকজন মাঝি জয়নাল আবেদীন বললেন, কল্পনাতেও আসেনি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নদী দেখার এত আনন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমা জামান বলল নগরীতে প্রকৃতি দেখা যায় না। অনুভবও করা যায় না। অট্টালিকার বনে আকাশও ঢেকে যমুনার তীর ও নদী এবং নির্মল বাতাসে তারা আপ্লুত। মধ্য বয়সী মাসুদ হাসান বললেন, নগর জীবন একেবোরে হাঁফিয়ে তুলেছে। একটু শান্তির পরশ মেলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। বরিশাল ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে নগরবাসীসহ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে মুক্ত বাতাসের কীর্তনখোলা নদীর তীর। ঈদের দিন থেকে শুরু করে কীর্তনখোলার তীরে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলন মেলা। স্থানীয় সাংবাদিক তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পার্কে প্রবেশের পর নতুন বেড়িবাঁধের ওপর হাঁটতে গিয়ে যে কোন ভ্রমণপিপাসু মুগ্ধ। অনেকে নৌকা ভ্রমণও করে। তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিদিনই মুক্ত বাতাসে ঘোরাঘুরি করতে নগরবাসী এ নদীর তীরে আসেন। তেমনি গত দুইবছর ধরে ঈদের সময় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষেরা প্রাকৃতিক বিনোদনের খোঁজে কীর্তনখোলা নদীর তীরে ছুটে আসেন। ফলে ঈদের দিন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কীর্তনখোলার তীর। নদীর ধার ঘেঁষে নির্মাণাধীন শহর রক্ষা বাঁধের ওয়াকওয়ের সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে কীর্তনখোলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে। কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন জমে উঠেছে। সারাদিন মানুষের আনাগোনায় মুখরিত নদী পাড়ে হাল্কা সবধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে বসার সুরম্য স্থান। যেখানে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য গভীরভাবে অবলোকন করা যায়। নদীর পাড় ঘিরে সব বয়সী মানুষের মিলনমেলা কীর্তনখোলার তীরে চা-কফি কিংবা স্ন্যাকস সবই মেলে এখন হাতের কাছে। বাগেরহাট ঈদ-উল ফিতরের ছুটিতে বাগেরহাটে সুন্দরবন, চন্দ্রমহল, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানহাজান আলী (র) মাজারে দর্শনার্থী, পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় ছিল এবার। ঈদের দিন থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভিড়ে উৎসব মুখর ছিল এসব স্থান। ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সুন্দরবন। হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড় সামলাতে বনরক্ষীদের হিমশিম খেতে হয়। ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থী মাতিয়ে তোলেন সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্র করমজলসহ সাগর উপকূল। জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা ককেরমজল, নীলকমলসহ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের সকল পর্যটন স্পটগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। ঈদের পরের ২ দিন এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। হোটেল- মোটেলগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সুন্দরবনের বাঘ, কুমির, বানর, বিষধর সাপ, হিংস্র প্রাণীর দর্শনলাভের প্রত্যাশায় সুন্দরবনে ভ্রমণে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাকৃতিক লীলাভূমি সুন্দরবন কোলাহলমুখর হয়ে ওঠে। অপরদিকে ঐতিহাসিক তাজমহলের আদলে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামে অর্ধশত একর জায়গার ওপর নির্মিত চন্দ্রমহলেও এ সময়ে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। তত্ত্বাবধায়ক মাহাবুব চাকলাদার জানান, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় চন্দ্রমহলে দর্শনার্থী সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটে। নারায়ণগঞ্জ ঈদের আনন্দে ও হইহুল্লোড়ে যাতে নগরীর খানপুর, বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও, ফতুল্লার পঞ্চবটি, ও রূপগঞ্জের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীরা। ঈদ-উল ফিতরের ছুটিতে আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এখানকার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। বিশেষ করে মঙ্গলবার ও বুধবার দিনভর শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী দর্শনার্থী ঈদের আনন্দে মাতোয়ারায় ব্যস্ত ছিল। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল। বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সাজে। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ নগরীর খানপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র ইকোপার্ক, ফতুল্লার পঞ্চবটির এ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড পার্র্ক, সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (জাদুঘর), বাংলার তাজমহল, ঐতিহাসিক পানাম নগরী, রূপগঞ্জের জিন্দাপার্ক, রাসেল পার্ক ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের ওয়াকওয়ে (হাঁটাচলা রাস্তা)সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঈদের দিন থেকে বুধবারও দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী মেরিগোল্ড, ম্যাজিক বোট বাম্পার কার, হানি সুইং, ওয়ান্ডার হুইল, রোলার কোস্টার, ফ্রিজবি ও ফ্লাইং রকেট নানা রাইডসে চড়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে। দর্শনার্থীরা রাইডসের সামনে পরিবার নিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নগরীর ডন চেম্বার এলাকার বাসিন্দা আলী আকবর পুরো পরিবার নিয়ে ছুটে এসেছেন এ ইকোপার্কে। তিনি জানান, বাড়ির পাশেই পার্ক নির্মিত হওয়ায় বিনোদনের জন্য পরিবার নিয়ে রাজধানী ঢাকায় এবার ছুটতে হয়নি। এ পার্কে এসে আমাদের শিশুরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। তবে বিভিন্ন রাইডসের টিকিটের হার অনেক বেশি। প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে জনপ্রতি ৫০ টাকা। রাইডস টিকিটের মূল্য সর্বনি¤œ ৬০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। মিজমিজি থেকে আগত বিল্লাল হোসেন জানান, আমার ছেলেকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ইকোপার্কে এসেছি। সারা বিকেল আমার ছেলে আনন্দে কাটিয়েছে। কলাপাড়া ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। ঈদের দিন সোমবার বিকেল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে প্রকৃতিপ্রেমী নর-নারীর। হাজার হাজার মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায় সৈকতে দুই কিলোমিটার এলাকা। বর্ষার কুয়াকাটা উপভোগ করেন আগতরা। উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালিতে মেতে ওঠে তারা। উচ্ছলতায় মুখরিত থাকেন আগত পর্যটক-দর্শনার্থী। বিশেষ করে নারী ও শিশু-কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটাগামী মহাসড়কে তিন নদীতে সেতু হওয়ায় পর্যটকরা সকাল-সন্ধ্যা কুয়াকাটা উপভোগ করে রাতেই যে যার গন্তব্যে ফেরে। আবাসিক হোটেলগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল না। কিন্তু খাবার হোটেল- রেস্তরাঁয় ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। বিনোদন কেন্দ্রিক রিসোর্ট কেন্দ্রগুলোতেও ছিল পর্যটকের ভিড়। শুধু কুয়াকাটা সৈকত নয় শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতুতেও বিকেল থেকে রাত অবধি দর্শনার্থীর ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। একই দৃশ্য ছিল পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকায়। সিলেট যেখানে নদী, পাহাড়-টিলা সবুজের সমারোহ সেখানে কার না ভাল লাগে। প্রকৃতির এমন মিলনমেলায় আনন্দেও ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। তাই তো ঈদ কেটেছে মহাআনন্দে বন-বনানী, সবুজ আর পাহাড়ের পাদদেশে নদীর জলরাশিতে মিশে। এবারও বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসুর উপস্থিতেতে ভরপুর ছিল সিলেটের সৌন্দর্যম-িত স্থানগুলো। হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে জাফলং বিছনাকান্দি, লালাখাল, পান্তুমাই, লোভাছড়া, রাতারগুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আকাশছোঁয়া পাহাড়, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল ও নানান আকৃতির পাথরের অপূর্ব সমন্বয়ে জাফলংয়ের মনহরণকরা আকর্ষণ। যান্ত্রিক কোলাহল ও কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে দুদ- স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে এখানে ছুটে আসে অনেকেই। প্রকৃতির মায়াবী পরশে আনন্দে নেচে ওঠে মণ। ঈদের ছুটিতে তাই পাহাড়, পানি ও পাথরভরা এই জাফলংয়ে মিতালি গড়ে ওঠে অগনিত পর্যটকের। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। নওগাঁ বরাবরের মতো এবারের ঈদেও নওগাঁর দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। আত্রাইয়ে বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের পতিসর কাচারিবাড়ি, বান্ধাইখাড়া সেতু, ধামইরহাটের ঐতিহাসিক ও আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্র আলতাদিঘি শালবন জাতীয় উদ্যান, শীমুলতলী সেতু ও জগদ্দল বৌদ্ধবিহার, পতœীতলার দিবরদিঘি, বদলগাছীর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, মান্দার কুসুম্বা মসজিদ, নওগাঁ সদরের আব্দুর জলিল শিশুপার্কসহ অন্যান্য স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে পতিসরে টিকেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ টাকা, মাধ্যমিকের পর থেকে সকল পর্যায়ে ১৫ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০ টাকা এবং ইউরোপের নাগরিকদের জন্য এক শ’ টাকা হিসেবে টিকেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নরসিংদী সকল বয়সী দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে নরসিংদীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র ড্রিম হলিডে পার্ক । পার্কটিতে ঈদ উপলক্ষে সংযোজন করা হয়েছে নতুন নতুন রাইডস্। পার্কটি সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা । বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনার চৈতাবতে ১শ’ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ড্রিম হলিডে পার্ক। গত ৬ বছরে নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের । যে কোন বয়সী মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে এ পার্কটি। ঈদ উপলক্ষে আন্তজার্তিকমানের পার্কটিকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। সংযোজন করা হয়েছে কেবলকার, ড্রিম আইকনসহ নতুন সব রাইডস্।
×