ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নগরীর ২১ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ

রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৭ জুন ২০১৭

রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থায় নগরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের আতঙ্ক। প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসার জন্য ছুটছেন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে। তবে সরকারী হাসপাতালগুলোতে দরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭৪ রোগী চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করাতে মহাখালীর রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) তাদের রক্তের নমুনা জমা দেন। পরীক্ষা করে ২৮৫ জনের শরীরেই চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস পাওয়া যায়। এ হিসাবে ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ জ্বরাক্রান্ত রোগীই চিকুনগুনিয়ায় ভুগছেন। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। হঠাৎ জ্বর আসার সঙ্গে গিঁটে গিঁটে প্রচ- ব্যথা, মাথাব্যথা, মাংসপেশী ব্যথা, বমিবমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা দেখা যাওয়া এর লক্ষণ। মূলত এডিস মশার কামড়ে এ ভাইরাস ছড়ায়। মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানম-ি, গুলশান, বনানী ও বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে বেশি ছুটছেন। এ ছাড়া চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্তগ্রহণ এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশতও এ রোগ ছড়াতে পারে। এ জ্বর ৩ থেকে সাতদিন পর্যন্ত হতে পারে। তবে জ্বর সেরে গেলেও ব্যথা থাকে দীর্ঘ সময়। এ রোগ প্রতিরোধে কোন ভ্যাকসিন নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এ সময়ে অতিরিক্ত গরমের কারণে নারী, পুরুষ ও শিশু সবার অসুখ-বিসুখ বাড়ছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এখন গরমের মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি নেমে পানি জমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার জন্ম হচ্ছে। আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা বলেন, চিকুনগুনিয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসার বিষয়ে দেশের সব সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন ও জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের প্রতি একটি গাইড লাইন দেয়া হয়েছে। তবে কার্যক্রম ঠিকভাবে চললেও মশা নিধনের কাজ তো আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। এ দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তাই জরুরী ভিত্তিতে রাজধানীর মশা নিধন করা প্রয়োজন। ঢাকার ২১ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ: রাজধানী ঢাকার ২১টি এলাকা চিকুনগুনিয়া বিস্তারের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় এ রোগের বাহক মশার ঘনত্ব বেশি। এলাকাগুলো হচ্ছে, উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, মধ্যবাড্ডা, গুলশান-১, লালমাটিয়া, পল্লবী, মগবাজার, মালীবাগ চৌধুরী পাড়া, রামপুরা, তেজগাঁও, বনানী, নয়াটোলা, কুড়িল, পীরেরবাগ, রায়ের বাজার, শ্যামলী, উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টর, মনিপুরীপাড়া, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, মিরপুর-১ ও কড়াইল বস্তি। সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিকুনগুনিয়া রোগ বিস্তার রোধে করণীয় সংক্রান্ত এক সভায় আইইডিসিআর এর সম্প্রতি পরিচালিত গবেষণার এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে ঢাকা শহরের ২১টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মশা নিধন কার্যক্রম চালানোর জন্য নির্দেশ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাড়িঘরের মধ্য অনেক সময় অনেক দিন পানি জমে থাকে ফলে সেখানে এডিস মশার উৎপত্তি হতে পারে। তাই বাড়ির ভেতরে, বাড়ির ছাদে যেন পানি জমে না থাকে সে দিকে জনগণকে খেয়াল রাখতে হবে। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে আতঙ্ক না ছড়িয়ে গণসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বলেন, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের কোন আশঙ্কা নেই। সরকার এক্ষেত্রে বরাবরের মতই প্রস্তুুত। চিকুনগুনিয়া মরণঘাতী কোন রোগ নয়।
×