ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৭ জুন ২০১৭

কাল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির  শিরোপা লড়াই

মিথুন আশরাফ লন্ডন থেকে ॥ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পথ চলা শেষ। এবার দেশে ফেরার পালা। কিন্তু যেভাবে ফিরছে এবার বাংলাদেশ দল তাতে গৌরব আছে। আছে মর্যাদা। সেমিফাইনালের মতো বড় মঞ্চে যে খেলেছে বাংলাদেশ। মাথা উঁচু করেই এবার দেশে ফিরছেন মাশরাফিরা। আজ সকালেই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ দল যখন দেশে পা রেখেছে তখন আবার ফাইনালের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত উপমহাদেশেরই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। তারা লন্ডনের ওভালে রবিবারের শিরোপা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ওভালে শুরু হয়েছিল এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। শেষ হচ্ছে ওভালেই। কিন্তু এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দুই হাত ভরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এরআগে ক্রিকেটে যে অর্জন কখনই বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে মেলেনি, এবার মিলেছে। বাংলাদেশ শেষ চারে খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে খেলেছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কার মতো দলও সেমিফাইনালে খেলেনি। ফাইনালে উঠতে পারেনি। ভারতের কাছে হেরেছে। তাতে যোগ্য দলের কাছেই হার হয়েছে। তবে মজার বিষয় হলো, যে দুই দলকে দিয়ে শুরু হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবারের আসর, সেই দুই দল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে খেলেছে। সেমিফাইনালেই থেমে গেছে মাশরাফিবাহিনীর পথ চলাও। ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে হারিয়েছে ভারত। উপমহাদেশীয় ফাইনাল হয়ে গেল তাতে। ফাইনালের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান ক্রিকেট দল শুক্রবার ওভালে পুরোদমে অনুশীলন করেছে। নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে। অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ বলেন, ‘দুর্দান্ত একটি ফাইনাল হবে আশা করছি। তবে আমরা শিরোপা জিততে চাই।’ ভারত ক্রিকেট দল অবশ্য শুক্রবার বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে এসেছে। তাই অনুশীলন করেনি। আজ একদিন অনুশীলন করে কাল ফাইনাল খেলতে নেমে যাবে। এখানেও মজার বিষয় আছে, দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে খেলেছে, গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। দুই দল ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিপক্ষে ফাইনালেও খেলবে। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিও শিরোপার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন। বলেছেন, ‘পাকিস্তান গ্রুপপর্বে আমাদের কাছে হেরেছে। এবার নিশ্চয়ই অনেক পরিকল্পনা নিয়েই খেলবে। আমরাও নিজেদের সেরা খেলাটা খেলে যেতে চাই। ফাইনাল ম্যাচ জিততে চাই। শিরোপা জিততে চাই।’ কোহলি কিংবা সরফরাজ এখন ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে পারছেন। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তা বলতে পারেননি। সেমিফাইনালে দলের ব্যাটসম্যানরা ভাল ব্যাটিং করেননি। তামিম ও মুশফিক ছাড়া বাকিরা ব্যাটিং উইকেটেও কিছুই করতে পারেননি। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ৩০০ রান ছুড়ে দিলেও যেখানে নিরাপদ নয় সেখানে ২৬৪ রান করার পরই তো আসলে হার নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই মাশরাফি হতাশ। তবে প্রাপ্তি যা মিলেছে তাও কিন্তু কম নয়। ইতিহাসের সেরা প্রাপ্তি মিলেছে। বাংলাদেশ থেকেই এ টুর্নামেন্টের সূচনা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে। বাংলাদেশেই প্রথমবার এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন টুর্নামেন্টের নাম ছিল ‘আইসিসি নকআউট ট্রফি’। কালের বিবর্তনে টুর্নামেন্টের আকার বদল হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে নাম। এখন টুর্নামেন্টের নাম আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেই আজ বাংলাদেশ দল দেশে ফিরছে। ক্রিকেটের কুলীন দল, অভিজাত দল, ক্রিকেটের জনক খ্যাত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শেষ করেছে। গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার হয়েছে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ থেকে বৃষ্টির জন্য ১ পয়েন্ট পেয়েছে, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। অনেক বড় অর্জন মিলেছে। মর্যাদা মিলেছে। গৌরব মিলেছে। এবার বাংলাদেশ দল যে দাপটের সঙ্গেই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো অভিজাত দলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এ টুর্নামেন্টে খেলেছে। বাংলাদেশ এরআগে টুর্নামেন্টের মূলপর্বে দুইবার ও বাছাইপর্বে দুইবার খেলেছে। এরআগে সাতবারের টুর্নামেন্টে তিনবার অংশই নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০০ সালে (তখনকার-নকআউট ট্রফি) ও ২০০৯ ও ২০১৩ সালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সুবাদে ২০০২ ও ২০০৪ সালে মূল টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে ও ২০০৬ সালে বাছাইপর্ব খেলে। ২০০৬ সালের পর থেকে ২০০৯ ও ২০১৩ সালের টুর্নামেন্টে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সাল থেকেই র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলকে নিয়ে টুর্নামেন্টের খেলা চালু হয়। এরপর থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাইরে বাংলাদেশ। এবার ১০ বছর ৭ মাস পর আবার বাংলাদেশ সরাসরি টুর্নামেন্টে খেলেছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে নিজের যোগ্যতায় এ টুর্নামেন্টে খেলেছে বাংলাদেশ। খেলেই দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ এখন কতটা শক্তিশালী দল। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। যখন টুর্নামেন্ট শেষ করে তখন সেরা চারে থেকে শেষ করে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ছয়ে থেকে শেষ করে বাংলাদেশ। সবদিক দিয়েই সাফল্য মেলে। সেই সাফল্যে সবাই খুশি। আনন্দিত। গর্ববোধও আছে। তবে সেমিফাইনালের মঞ্চে যেহেতু প্রথমবার খেলেছে বাংলাদেশ, তাই ভারতের মতো দলের বিপক্ষে জিতে যাবে তা পুরোপুরি ভাবা ঠিক নয়। মাশরাফি তাই বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় খুব ভাল টুর্নামেন্ট গেছে আমাদের জন্য। কেউ ভাবতেও পারেনি যে আমরা সেমিফাইনাল খেলব। তবে সেমিফাইনালে হার অবশ্যই খুব হতাশার। আমরা আরও ভাল খেলতে চেয়েছিলাম। পথেও ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তামিম ও মুশফিক সঙ্গে সাকিব পরপর আউট হয়েছে। আর হয়ে ওঠেনি। আমাদের মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে হবে। সেমিফাইনালেও যেমন আমরা খেলাটাকে হাতে নিয়েছি, আবার ছেড়ে দিয়েছি। এই ব্যাপারগুলো ঠিক করতে হবে। টুর্নামেন্টে অবশ্যই ভাল লাগা আছে অনেক। ২০১৫ বিশ্বকাপ ও এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, দুইটি বড় টুর্নামেন্টে আমরা নকআউট খেললাম। দুটি ম্যাচেই প্রায় একই রকম খেলেছি। যার মানে আমরা মানসিকভাবে এসব ম্যাচের জন্য ততটা প্রস্তুত না। স্কিল বা শারীরিক দিক থেকে অতটা পিছিয়ে নেই। মানসিকভাবে প্রস্তুত হলে এই গ্রুপটিই যদি শিখে ২০১৯ সালে ফেরে তাহলে কাজ হবে।’ ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কি করবে তা পরের বিষয়। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অনেক বড় অর্জন নিয়েই আজ দেশে ফিরছে বাংলাদেশ। গৌরব নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ। এটাই আসল বিষয়।
×