ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুনেও বৃষ্টিপাতের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৪ জুন ২০১৭

জুনেও বৃষ্টিপাতের রেকর্ড

শাহীন রহমান ॥ এপ্রিলের পর এবার জুনেও বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সারাদেশের ৪২ কেন্দ্রে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২ হাজার ৩৫২ মিলিমিটার। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী এদিন সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাঙ্গামাটিতে ৩৪৩ মিলিমিটার। এছাড়া জুনে একদিনের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড অনুযায়ী গত সোমবারের বৃষ্টিপাত ছিল ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২০০৮ সালের পর জুন মাসে একদিনে এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি। আবহাওয়া অফিসের হিসাবে সোমবার সারাদেশে একদিনে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫৬ মিলিমিটার। সাগরের নিম্নচাপের কারণে গত রবিবার বিকেল থেকে শুরু হয় রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাত। রবিবার রাত থেকে তা মুষলধারে ঝরতে থাকে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৮ সালের জুন মাসেও প্রচুর বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর পরের বছরগুলোতে জুন মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কখনও বেশি আবার কখনও অনেক কম রেকর্ড করা হয়েছে। ২০০৮ সালের পর জুনে একদিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় গত সোমবার। পাশাপাশি গত সোমবার ঢাকায়ও রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানীতেও চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে সোমবার। অথচ আগের বছরের জুনে রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। তাদের হিসাবমতে, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৩০ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে চট্টগ্রামে ১৯০ মিলিমিটার। রবিবার রাত থেকেই অবিরাম বৃষ্টির কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। ঢাকায় আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ শাহিনূর ইসলাম জানান, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার পর ছয় ঘণ্টায় (রাত ১২টা পর্যন্ত) আরও ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জুন মাসের এই দিনে এত বেশি বৃষ্টির রেকর্ড নেই। আবহাওয়া অফিসের হিসাবমতে, গত বছরের জুন মাসে বৃষ্টির দেখা ছিল না বললেই চলে। রাজধানীতে জুনের প্রথমে বৃষ্টিপাত দেখা দিলেও সারা জুন ধরে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের কম। গত বছরের জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯ শতাংশ কম। ঢাকায়ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। আর সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯ শতাংশ কম বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। অথচ এ বছর আষাঢ় না আসতেই জুনে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবারও রাজধানী ঢাকায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয় ১৩৯ মিলিমিটার। ময়মনসিংহে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১২৫ মিলিমিটার, নেত্রকোনায় ১৪২ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে রেকর্ড হয়েছে ২২২ মিলিমিটার, সীতাকু-ে ১১৮ মিলিমিটার, রাঙ্গামাটিতে ৩৪৩ মিলিমিটার, কুতুবদিয়ায় ১৩৪ মিলিমিটার, সিলেটে ৮৫ মিলিমিটার, শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৯০ মিলিমিটার। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায়ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এ দিনে। এদিকে, অবিরাম বর্ষণের কারণে পার্বত্য এলাকার পাহাড় ধসে প্রায় ৬০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গিয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এবার বছরের শুরুতেই বৃষ্টিপাতে আধিক্য রয়েছে। গত মার্চ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এবারের মার্চ মাসে প্রয়োজনের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া গত এপ্রিলের বৃষ্টিপাতও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এবারের এপ্রিলে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় তা ১৯৮১ সালের পর ছিল সর্বোচ্চ। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, ১৯৮১ সালে এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬৮ পার্সেন্ট বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছিল। ’৮১ সালের পর গত ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৯ পার্সেন্ট বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, ’৮১ সালের পর এপ্রিল মাসে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত আর রেকর্ড করা হয়নি। তারা জানান, এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৩০.২ মিলিমিটার। অথচ স্বাভাবিকের চেয়ে এবারের বৃষ্টির পরিমাণ বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোরা। মোরার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ৮ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাব কাটতে না কাটতে আবারও সমুদ্রে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত রবিবার থেকে অঝোরধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। তা শেষ হয় সোমবার মধ্য রাতে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও এদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত সোমবারের বৃষ্টিপাত প্রত্যাশিত হলেও মানুষের প্রত্যাশা ছাপিয়ে তা দুর্ভোগে রূপ নেয়। সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির আগে সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় তাপপ্রবাহ। ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাপপ্রবাহের কারণে কয়েকদিন ধরে প্রচ- গরমে হাঁপিয়ে ওঠে দেশবাসী। প্রকৃতির এ দাবদাহের কারণে রোজাদাররাও পড়ে কষ্টের মধ্যে। এ কারণেই বৃষ্টি ছিল সবার কাছে প্রত্যাশিত। তবে সোমবারের অবিরাম বর্ষণ রূপ নেয় অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আঘাত হানার পরপরই দেশের মধ্যে প্রবেশ করে মৌসুমি বায়ু। বর্তমানে সারাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ু মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে জুনে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে সিলেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ রূপে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের এবং ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
×